বাজেট নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫
জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটকে জনকল্যাণহীন, ঋণনির্ভর, অদূরদর্শী, ধনিক ও লুটেরা শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা ও জাতীয় ঋণের বোঝা বৃদ্ধির বাজেট বলে অ্যাখায়িত করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এসব মন্তব্য করেন দলগুলো। এর আগে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
১২ দলীয় জোট : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে জনকল্যাণহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। নেতারা বলেন, জনরায়হীন একটি অবৈধ সরকারের বাজেট কখনোই জনগণের কল্যাণে আসতে পারে না। রাজস্ব আহরণের ঘাটতির ফলে সরকারকে অতিমাত্রায় বিদেশী ও আভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণের ওপর সুদ পরিশোধ করতে হবে যা প্রস্তাবিত বাজেটের রাজস্ব আয়ের এক-তৃতীয়াংশ। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৬০ হাজার ছুই ছুই করছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল ঘাটতি পূরণের কেন দিকনির্দেশনা নেই।
নেতারা আরো বলেন, ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক এত বড় বাজেট আগেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি এবারো সম্ভব হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কার ও দুর্নীতি, হরিলুটের অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পের ব্যয় কমানোর কোনো উদ্যোগ এ সরকার গ্রহণ করেনি। একটি অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচার ও জনরায়হীন সরকারের থেকে আমরা কখনোই জনবান্ধব ও কল্যাণকর বাজেট প্রত্যাশা করতে পারি না এবং এই বাজেটকে আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।
খেলাফত মজলিস : প্রস্তাবিত বাজেটকে ঋণনির্ভর ও অবাস্তব, গণবিরোধী বাজেট হিসেবে অভিহিত করে খেলাফত মজলিস। দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ঋণনির্ভর এ বিশাল ঘাটতি বাজেটে সাধারণ জনগণের কোনো ফায়দা হবে না। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিবে। এতে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যা বাজেট ব্যয়ের ২২ শতাংশ। বাজেট ব্যয়ের বৃহত্তম খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ। পরিচালন ব্যয় ও সুদ পরিশোধের মতো অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বাজেটের অধিকাংশ অর্থ। আর প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবসম্মত নয়। এ কথায় প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় ঋণের বোঝা বৃদ্ধির বাজেট।
ন্যাপ : প্রস্তাবিত বাজেট ধনিক ও লুটেরা শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও দারিদ্র্য, বৈষম্য, লুটপাটের দলিল ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বার্থ নাই।
তারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়নের দাবি জানানো হলেও সরকার সে বিষয়ে একেবারেই গুরুত্ব প্রদান করে নাই। এ ছাড়াও সর্বজনীন রেশনিং পদ্ধতি, বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্য যাতে না বৃদ্ধি পায় সেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয় নাই। বাজেটে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা স্বস্তিকর করার লক্ষ্য নাই। বরং পদে পদে ভ্যাট ও করের জাল বিছিয়ে বাজেটে জনগণের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে সাধারণ জনগণের দুর্দশা ও দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি : এনডিপি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেট জনদুর্ভোগ আরো প্রকট করবে ও দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করবে। এ বাজেটে গণমানুষের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি অবহেলিত। তারপরও বাজেট বাস্তবায়নে সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বরাদ্দকৃত অর্থ হরিলুট, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা