১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সরকার গঠনে তৎপর এনডিএ ও ইন্ডিয়া জোট

-


ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩ আসনের সম্পূর্ণ ফল প্রকাশ হওয়ার পর কে সরকার গড়বে, আর কে সরকার ভাঙবে তা নিয়ে দেশটিতে চলছে মেরুকরণের খেলা। যদিও সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পার করেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। তবে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটও খুব একটা পিছিয়ে নেই। এমন অবস্থায় দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে গতকাল দুই জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। আনন্দবাজার ও এনডিটিভি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। অন্য দিকে ২৩৪ আসন নিয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটও খুব একটা পিছিয়ে নেই। তারা যদি চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমারকে জোটে টানতে পারে, তবে তারাও সরকার গঠন করতে পারে অন্যান্য দলের সমর্থন নিয়ে। এই পরিস্থিতিতেই গোটা ভারতের নজর দু’টি বৈঠকের দিকে।

নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সাক্ষাৎ করে এই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। শরিক দলগুলো বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সাথে থেকে সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় বুধবার পদত্যাগ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এনডিটিভি বলেছে, দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে পুরো মন্ত্রিসভাসহ নিজের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন তিনি। তবে নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত সরকার পরিচালনা কাজ চালিয়ে যেতে নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
সংবাদমাধ্যম বলছে, বুধবার বিকেল ৪টায় বৈঠকে বসে এনডিএ জোট। বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বলছে, ইতোমধ্যেই স্পিকার পদের দাবি জানিয়েছে জোটসঙ্গী টিডিপি এবং জেডিইউ। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দিকেও চোখ রয়েছে শরিকদের। ভারতে সরকার গড়তে হলে মোদিকে জোটের মাধ্যমেই এগোতে হবে। আর জোটের রাজনীতি কেমন হবে, তা স্পষ্ট হওয়ার কথা এনডিএ বৈঠকেই।

যদিও এনডিএ বৈঠকে নীতিশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডু মোদির হাতে লেটার অব সাপোর্ট তুলে দিতে চলেছেন বলে আভাস পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া চন্দ্রবাবু এবং নীতিশ কুমারকে বিজেপি ঠিক কতটা সন্তুষ্ট করতে পারছে, তার ওপরেই পরবর্তী কৌশল ঠিক করবে বিরোধী শিবির।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইতোমধ্যেই নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে কংগ্রেস। দলটি সরকার গঠনে পদক্ষেপ নেবে নাকি বিরোধী আসনে বসবে, তা ঠিক হবে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন থাকা সত্ত্বেও শরিক-সহযোগীদের গুরুত্ব দিয়েই পথ চলতে চাইছে কংগ্রেস।

এনডিএ জোটের মতো ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে দিল্লিতে। তবে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন না বলে জানানো হয়েছিল। তার জায়গায় দলের প্রতিনিধি হিসেবে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্ডিয়া জোটে অত্যন্ত সক্রিয় দেশটির প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা শরদ পাওয়ার গত মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পরই তিনি মল্লিকার্জুন খাড়গে, অখিলেশ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরি, স্ট্যালিনসহ একাধিক নেতার সাথে ফোনে কথা বলেছেন। যদিও দিল্লি ও পঞ্জাবে ভরাডুবির পর কংগ্রেসের সাথে ইন্ডিয়া জোটে আম আদমি পার্টি (এএপি) থাকবে কি না, সেদিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।

ভোটে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোটের চেয়ে পিছিয়ে থাকা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) জোটও সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। জোটের অন্যতম সিনিয়র নেতা এবং মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে এই তথ্য জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে এনডিএ জোটের শরিককে চন্দ্রবাবু নাইডুকে দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে কয়েক মাস আগে যে হয়রানি করা হয়েছিল, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উদ্ভব ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি আশা করছেন নাইডু এনডিএ জোট ছেড়ে ইন্ডিয়া জোটে আসবেন।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে উদ্ভব বলেন, যেদিন থেকে আমাদের ইন্ডিয়া জোট গঠিত হলো, সেদিনই আমরা জোট শরিকরা এ ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম যে আমরা সবাই দেশ থেকে স্বৈরতন্ত্র দূর করতে চাই এবং দেশের সংবিধান রক্ষা করতে চাই। বিজেপির দ্বারা যেসব রাজনৈতিক দল হয়রানির শিকার হয়েছেন, তারা সবাই আমাদের সাথে রয়েছেন। চন্দ্রবাবু নাইডুও বিজেপি সরকারের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।
মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে একসময় তার দল শিব সেনাকে সাথে নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটেই ছিলেন। মহারাষ্ট্রে ভারতের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট লোকসভার আসন রয়েছে ৪৮টি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ৪৮টি আসনের ৪১টিতেই জিতেছিল বিজেপি-শিবসেনা জোট। তবে দুই দলের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর। ওই নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী কে হবে- এই নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব এবং এই দ্বন্দ্বের জেরে দুই ভাগ হয়ে যায় শিব সেনা। উদ্ভব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন দলটির নাম এখন শিব সেনা (ইউবিটি)। অন্য অংশটির নেতৃত্বে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে।

শিব সেনা (ইউবিটি) ইন্ডিয়া জোটে থাকলেও শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিব সেনা এখনো বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটেই রয়েছে। তবে মহারাষ্ট্রের বৃহত্তম এই দলটির বিভক্তি বেশ প্রভাব পড়েছে এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেখানে মহারাষ্ট্রে ৪১টি আসন পেয়েছিল এনডিএ জোট, এবার সেখানে পেয়েছে মাত্র ১৭টি। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মহারাষ্ট্রের মতো শক্ত ঘাঁটিতে বিজেপির এই ফলাফল পুরোপুরি অনাকাক্সিক্ষত এবং হতাশাজনক। কারণ এবারের নির্বাচনে রাজ্যের ৪৫টি আসনে জয়ের আশা করেছিল দলটি।
বাকি আসনগুলোতে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটভুক্ত দলগুলো। কংগ্রেস পেয়েছে ১৩টি আসন। উদ্ভব ঠাকরের দল ইউবিটি পেয়েছে ৬টি আসন। উদ্ভব ঠাকরের ছেলে এবং শিব সেনা ইউবিটির নেতা আদিত্য ঠাকরে বলেন, ভারতে যেসব রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের ফলাফল সবচেয়ে ভালো, মহারাষ্ট্র সেসবের মধ্যে অন্যতম। এই নির্বাচনে আমরা দেখিয়েছি যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক কোনো শক্তির স্থান ভারতবর্ষে নেই।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement