১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে জাতিসঙ্ঘের সমর্থন চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

-

- যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরাইলের অবস্থান অস্পষ্ট : কাতার
- যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈঠক আরব নেতাদের
- গাজায় আরো ৪ বন্দী নিহতের দাবি ইসরাইলের

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাব করা গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খসড়ায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে ওই পরিকল্পনা মেনে নেয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসঙ্ঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে সোমবার একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রস্তাবটি পাস হতে কমপক্ষে ৯টি ভোটের প্রয়োজন হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন বা রাশিয়ার ভেটো থাকা যাবে না। খবর : রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসির।
জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, অসংখ্য নেতা ও সরকার, যাদের মধ্যে ওই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) রাষ্ট্রগুলোও রয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে। এএফপি জানায়, খসড়া প্রস্তাবের একটি অনুলিপিতে গত ৩১ মে ঘোষণা করা নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে হামাসকে এটি পুরোপুরি মেনে নেয়ার ও দেরি না করে কোনো শর্ত ছাড়াই তা কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার বাইডেন প্রশাসন নতুন ওই যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ পরিকল্পনার রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। তিন স্তরের এ পরিকল্পনায় গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিসমাপ্তি, সেখানে পুরোদমে ত্রাণ সরবরাহ শুরু, হামাসের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তি, এ উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার ও হামাসমুক্ত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ইসরাইল এ পরিকল্পনা ‘মেনে নিয়েছে’। যদিও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় ‘নিজেদের লক্ষ্য (হামাসকে নির্মূল) অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত’ যুদ্ধ চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবের ওপর নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির কোনো সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি।

ইসরাইলের অবস্থান অস্পষ্ট : গাজা যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী কাতার গতকাল মঙ্গলবার বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দী মুক্তি চুক্তির বিষয়ে তারা ইসরাইলের ‘স্পষ্ট অবস্থানের’ জন্য অপেক্ষা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, ‘আমরা এখনো ইসরাইলি সরকারের কাছ থেকে বাইডেনের দেয়া নীতিগুলোর প্রতি খুব স্পষ্ট অবস্থান দেখতে পাইনি।’ পাশাপাশি উভয় পক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো ‘নির্দিষ্ট সমর্থন’ ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আনসারি একটি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা ইসরাইলি মন্ত্রীদের কাছ থেকে আসা পরস্পরবিরোধী বিবৃতি পড়েছি এবং দেখেছি, যা বর্তমান প্রস্তাবে ইসরাইলে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের বিষয়ে খুব বেশি আস্থা দেয় না।’ এ ছাড়া ফিলিস্তিনি আন্দোলন হামাস এখনো দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানায়নি বলেও এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষের এমন কোনো বিবৃতি দেখিনি যা আমাদের অনেক আস্থা দেয়। প্রক্রিয়াটি অগ্রসর হচ্ছে এবং প্রস্তাবের ওপর উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করছি।’
আনসারি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে গতি আছে, যুক্তরাষ্ট্র চালিত...তবে আমাদের খুব সতর্ক হওয়া দরকার। আমরা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রভাব খাটাচ্ছি...উভয় পক্ষই পরিস্থিতির চরম গুরুত্ব ও একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে তা নিশ্চিত করতে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈঠক আরব নেতাদের : গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকরে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার হামাস-ইসরাইল সঙ্ঘাত নিরসনে মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর, কাতার, আরব আমিরাত এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে জোরালো বৈঠক করেছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে তারা মার্কিন প্রশাসনকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেয়া তিন স্তরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দ্রুত কার্যকরে পদক্ষেপ নেয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলি বন্দী এবং ইসরাইলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সোমবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলাপ করেন। ওই বৈঠকে তিনি গাজায় সঙ্ঘাতের একটি স্থায়ী সমাধানের ওপর জোর দেন। এ সময় জর্ডান, আরব আমিরাত এবং মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাকে সমর্থন করেছেন।

বৈঠকে মন্ত্রীরা বলেন, ইসরাইলি বাহিনীকে অবশ্যই গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশে যে অবরোধ রয়েছে তা তুলে নিতে হবে। এ ছাড়া গাজায় গত আট মাসে যে-সব ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদেরকে নির্বিঘেœ তাদের নিজ আবাসস্থলে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে বলেও জোর দিয়েছেন মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি বাহিনীকে সরিয়ে নিতে হবে এবং উপত্যকাটি পুনর্গঠনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে দুই-রাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা পালনে মার্কিন প্রশাসনকে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আরব দেশগুলোর নেতারা।
আরো ৪ বন্দী নিহত : ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের হাতে বন্দী থাকা আরো চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী- আইডিএফ। বিবিসি জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের সময় ওই চারজন এক সঙ্গে নিহত হন এবং বর্তমানে তাদের লাশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের জিম্মায় আছে। হামলায় নিহত চারজন হলেন- ব্রিটিশ-ইসরাইলি নাদাভ পোপেলওয়েল (৫১), চাইম পেরি (৭৯), ইয়োরাম মেতজার (৮০) এবং আমিরাম কুপার (৮৫)।
আইডিএফ মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংগ্রহ করা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই চারজনের মৃত্যুর বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। ‘আমরা ধারণা করছি, হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় খান ইউনিস এলাকায় তাদের চারজন নিহত হয়েছেন। ‘হামাস গত মাসে দাবি করেছিল, তাদের হাতে বন্দী নাদাভ পোপেলওয়েল গত এপ্রিলে গাজায় ইসরাইলি হামলার মধ্যে নিহত হয়েছেন।
দেইর এল-বালাহে নিহত ৮ : এ দিকে, দেইর এল-বালাহ শহরের উত্তরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ওই বিমান হামলায় একটি শিশুসহ আটজন নিহত হয়েছে। আলজাজিরার তারেক আবু আজউম বলেছেন, কয়েক ডজন আহতদের ওই এলাকার আল-আকসা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান তিনি। তিনি বলেন ‘দেইর এল-বালাহ শহরের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলা চালানো হয়েছিল।
গাজায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে : গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৫৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ জন নিহত ও ১৮২ জন আহত হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আহত হয়েছেন অন্তত ৮২ হাজার ৯৫৯ জন।

 


আরো সংবাদ



premium cement