১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মির্জা ফখরুলের প্রশ্ন

ইনস্টিটিউশন হিসেবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সম্মান কোথায়

জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


ইনস্টিটিউশন হিসেবে আজ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর ইজ্জত-সম্মান কোথায়, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বেনজীরের কর্মকাণ্ডকে বলা হচ্ছে নজিরবিহীন দুর্নীতি। একই সাথে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকেও স্যাংশন দিয়েছে। আরেকজন তথাকথিত এমপি, তাকে কলকাতা নিয়ে টুকরা টুকরা করা হয়েছে। এখন সেনাবাহিনীর অবস্থা কি? একটা ইনস্টিটিউশন হিসেবে তার সম্মান-ইজ্জত কোথায় থাকে যখন তার সাবেক প্রধানকে স্যাংশন দেয়। সেই পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা কোথায় থাকে যার সাবেক প্রধান ও র‌্যাবের সাবেক ডিজিকে পালিয়ে যেতে হয় দেশ থেকে। আজকে সরকার দেশটাকে এভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার গত ১৫ বছরে দানবের মতো বাংলাদেশের শুধু রাজনীতিকে ধ্বংস করেনি, অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে ফেলেছে। তার প্রমাণ জিনিসপত্রের দাম, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম, সবজির দাম, চালের দাম সব অবিশ্বাস্য। খাওয়া-দাওয়া করা যায় না, বাচ্চাদের ডিম দেয়া যায় না, দুধ দেয়া যায় না।

বাংলাদেশে পণ্যসামগ্রীর দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি-সিপিডির এমন গবেষণার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সীমায় বলা হয়েছে যে, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে জিনিসপত্রের দাম বহুগুণে বেড়েছে। তারা গরুর গোস্ত কেনেন না, ইলিশ মাছের তো প্রশ্নই উঠে না। এমনকি ভালো সবজিও কেউ কেনেন না কারণ দাম বেশি। আর এখন সয়াবিন তেল, পামওয়েল ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম থেকেও বেশি। এ রকম একটা কঠিন সময় তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যারা গত ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে, পুলিশ, বিজিবি, প্রশাসনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।
মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা সবাইকে বলেন, চুপ করে থাকবেন না, বের হন, কথা বলেন। সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা শুধু বিএনপির দায়িত্ব না। মানুষকে তার আত্মরক্ষার্থে কথা বলতে হবে। আমাদের মহিলাদের বের করে আনতে হবে, মানুষকে বের করতে হবে, মানুষ যখন বেরিয়ে আসবে তখনই বিপ্লব হবে। আমরা শুধু আমাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না।

তিনি বলেন, আমাদের এখন সময় এসেছে নিজেদের সংগঠিত করার। আমরা চেষ্টা করছি, নির্যাতিত হচ্ছি, জেল খাটছি, আমাদের মা-বোনেরা বার বার জেলে যাচ্ছে কিন্তু আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারিনি। এই চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য আমাদের সংগঠনকে আরো দৃঢ় করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো ভুল-ত্রুটি যেগুলো আছে সেগুলো দূর করে ফেলেন। সবাই মিলে একসাথে একজোটে নামতে হবে। তিনি বলেন, আজকের সমস্যা শুধু বিএনপির সমস্যা না। এটা বাংলাদেশের সমস্যা, জাতির সমস্যা। এই জাতি ভবিষ্যতে টিকবে কি টিকবে না, ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে কি পাবে না, স্বাধীনভাবে চলতে পারবে কি পারবে না তার পুরোটা নির্ভর করছে এই সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করতে পারবেন, কি পারবেন না। নির্বাচন করতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার, সেজন্যই আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। এই সরকার তার অধীনে তিনটা নির্বাচন পার করেছে। এই তিনটা নির্বাচনই প্রহসন হয়েছে। গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, এভাবে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তাতে কোনো দলই তো নির্বাচনে আসে না। ৬৩টা রাজনৈতিক দল নির্বাচন যায়নি। তাহলে নির্বাচন হচ্ছে কোথায়? সে কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে। সরকারি দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট দিলে তারা ১০টা আসনও পাবে না। আমি বার বার বলি, তাদের বলছি, সাহস থাকে আসেন না আপনি নির্বাচন করেন যেখানে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে। তখন কার কত জনপ্রিয়তা বুঝা যাবে।
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক শাহিদা রফিক, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, পেয়ারা মোস্তফা, এলিজা জামান, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবা ইউসুফ, দক্ষিণের রুমা আখতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement