১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভারতে বুথফেরত সমীক্ষায় এনডিএ জোট এগিয়ে

বিক্ষিপ্ত সহিংসতার মধ্যে লোকসভার নির্বাচন শেষ
-

গতকাল শনিবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সপ্তম ও শেষ দফা ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বরাবরের মতো দেশটির সংবাদমাধ্যমে বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। যদিও এসব জরিপের ফলাফল অনেক সময় উল্টো হতে দেখা যায়। এর আগে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫৩ আসনে জয় পেয়েছিল এনডিএ জোট।
সন্ধ্যার দিকে দেশটির অন্তত চারটি গণমাধ্যমের বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন নরেন্দ্র মোদি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি প্রথম বুথফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবারের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির চারটি সংবাদমাধ্যম ও সংস্থার বুথফেরত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট ৫৪৩ আসনের লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে পারে। যেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২টি আসন প্রয়োজন।
ইন্ডিয়া নিউজ ও ডি-ডায়নামিকসের বুথফেরত জরিপ বলছে, লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ৩৭১ ও ইন্ডিয়া জোট ১২৫ আসনে জয় পেতে পারে। এ ছাড়া কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ১২৫ আসনে জয়ী হতে পারে। দেশটির অপর সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক ভারত ও ম্যাট্রিজের বুথফেরত জরিপের ফলাফলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫৩ থেকে ৩৬৮ আসনে জয় পেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির বিরোধী দলগুলোর জোট ইন্ডিয়া ১১৮ থেকে ১৩৩ আসনে জয়ী হতে পারে। অন্যান্য দল ৪৩ থেকে ৪৮ আসনে জয় পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক টিভি ও পিএমএআরকিউয়ের বুথফেরত জরিপ বলছে, এনডিএ জোট ৩৫৯ আসনে এবং ইন্ডিয়া জোট ১৫৪ আসনে জয় পেতে পারে। অন্যান্য দলের দখলে যেতে পারে ৩০ আসন। জান কি বাতের বুথফেরত জরিপের ফলে এনডিএ জোট ৩৬২ থেকে ৩৯২ আসন এবং ইন্ডিয়া জোট ১৪১ থেকে ১৬১ আসনে জয় পেতে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এই চার সংবাদমাধ্যমের বুথফেরত জরিপের ফল গড় হিসাব করে এনডিটিভি বলেছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৬৫ আসন, ইন্ডিয়া জোট ১৪২ আসন এবং অন্যরা ৩৬ আসনে জয়ী হতে পারে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে বুথফেরত জরিপের ফলাফলের রেকর্ড খুব বেশি ইতিবাচক নয়। কারণ প্রায়ই দেশটিতে বুথফেরত জরিপের নির্বাচনী ফলাফল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এই দেশে নির্বাচনের ফল সম্পর্কে আগাম ধারণা করা বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ।
গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সাত ধাপের নির্বাচনে প্রায় এক শ’ কোট মানুষ ভোট দেয়ার যোগ্য ছিলেন। গ্রীষ্মের রেকর্ড তীব্র তাপদাহের মধ্যে ভারতের এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন আগামী ৪ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গণনা করবে এবং একই দিনে ফলাফল ঘোষণার কথা রয়েছে। ৭৩ বছর বয়সী মোদির সম্ভাব্য বিজয় তাকে জওয়াহের লাল নেহরুর পর দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতার মসনদে বসাবে।
পশ্চিমবঙ্গেও এগিয়ে যাবে বিজেপি! : বুথফেরত জরিপ বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস পিছিয়ে পড়ছে। বড় সাফল্য ধরা দিচ্ছে বিজেপিকে। ফলে লোকসভা নির্বাচনে তারাই হয়ে উঠতে পারে পশ্চিমবঙ্গে এককভাবে সবচেয়ে বড় দল। চারটি এক্সিটপোলকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি। এতে বলা হয়, ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল সর্বোচ্চ ২টি। ওই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছিল ২২ আসনে। জান কি বাথ পোলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে যে বিজেপি এবার ২১ থেকে ২৬ আসনে বিজয়ী হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস জিততে পারে ১৬ থেকে ১৮ আসনে। ইন্ডিয়া নিউজ-ডি-ডাইনামিক্সের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বিজেপি জিতবে ২১ আসনে। তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে ১৯ আসনে। অন্য দিকে রিপাবলিক ভারত-ম্যাট্রিজ বিজেপিকে দিয়েছে ২১ থেকে ২৫ আসন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসকে তারা দিয়েছে ১৬ থেকে ২০ আসন। আর বাংলার বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছে, বিজেপি এবার জিতবে ২২ আসনে। তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে ১৮ আসনে।
ইন্ডিয়া জোট ২৯৫ আসনে জিতবে : কংগ্রেস
এদিকে লোকসভা নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ২৯৫টির বেশি আসনে জিতবে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। শনিবার শেষ ধাপের ভোট গ্রহণ শেষে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন কংগ্রেস সভাপতি। দিল্লিতে খাড়গের বাসভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোট অন্তত ২৯৫ আসন পাবে। এর বেশিও হতে পারে; কিন্তু কম হবে না। আমরা সব নেতার সাথে আলোচনা ও ভোট বিশ্লেষণ করে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। ইন্ডিয়া জোট এবার যে এত আসন পাচ্ছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি জনগণের জরিপ। মানুষ যেসব তথ্য দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়েছে।’ কংগ্রেস সভাপতি অভিযোগ করেন, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিজেপি নিজেদের মতো একটি গল্প তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভোটগণনা নিয়ে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবিতে আজ রোববার ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের দফতরে যাবেন বলেও জানান তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো নির্বাচন
এনডিটিভি জানায়, ভারতে লোকসভা নির্বাচনে সাত দফা ভোটগ্রহণের শেষ দফার শেষ দিন ছিল গতকাল শনিবার। ভোটগ্রহণের পর আগামী ৪ জুন ফলাফল ঘোষণা করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, হিমাচলসহ সাত রজ্যের ৫৭টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এসব রাজ্যের মোট ভোটার ১০ কোটিরও বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্র বলে পরিচিত ভারতে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল গত ১৯ এপ্রিল। প্রায় দেড় মাস ধরে চলল বিশাল এই কর্মকাণ্ড।
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার ভোটগ্রহণে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ দফায় রাজ্যের ৯ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। কলকাতার কাছে যাদবপুর নির্বাচনী এলাকার ভাঙার সাটুলিয়াতে ভারতীয় সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) এবং সিপিআই (মার্ক্সিস্ট) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের সময় দেশীয় বোমার বিস্ফোরণে আইএসএফ সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছু আহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার সকাল ৭টায় পশ্চিমবঙ্গে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। এ দফায় রাজ্যের ৯ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সেগুলো হলোÑ দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতার উত্তর কেন্দ্র।
কিন্তু ভোট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে সহিংসতার খবর আসতে থাকে। বেলা যত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে অশান্তিও বাড়ে। পোলিং এজেন্টকে বুথে প্রবেশে বাধা ও ভোট দিতে না পারায় ২৪ পরগনা জেলার কুলতলিতে ইভিএম পানিতে ফেলে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। ভাঙরে গুলি ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। বোমার আঘাতে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটেছে। ভাঙরের হাতিশালায় দফায় দফায় সহিংসতা হয়েছে। আইএসএফ বুথ এজেন্টকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জয়নগরের কুলতলীতে আজ সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে স্থানীয় জনতা বেণীমাধবপুর এফপি স্কুলের কাছে সেক্টর অফিসারের রিজার্ভ ইভিএম এবং কাগজপত্র লুট করেছে। তারা ভোটিং মেশিন পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এ ঘটনায় সেক্টর অফিসার এফআইআর দায়ের করেছেন এবং সেক্টরের অধীনে ছয়টি বুথে ভোট প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে এবং সেক্টর অফিসারকে কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাতে বসিরহাট লোকসভার অধীনে সন্দেশখালিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভোটগ্রহণের প্রথম এক ঘণ্টা এই উত্তেজনা বিরাজ করে।
টিএমসির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির শক্ত ঘাঁটি ডায়মন্ড হারবার। সেখানেও টিএমসি এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস টিএমসির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন, যা টিএমসি অস্বীকার করেছে।
যাদবপুরের গাঙ্গুলীবাগানে সিপিআই (এম) কর্মীরা টিএমসি কর্মীদের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেখানে বামদের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে সিপিআইএমের ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ টিএমসি অস্বীকার করেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিংয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের আশপাশে টিএমসি এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় পাথর ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। যাতে একজন মিডিয়া কর্মী আহত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালভিয়া বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করেছেন। তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখাতে দলীয় গুন্ডাবাহিনী এবং রাজ্য পুলিশকে ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement