গাজায় আরো ৭ মাস যুদ্ধ চালাতে চায় ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩১ মে ২০২৪, ০০:০৫
- পুরো স্থল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ দাবি ইসরাইলের
- পরিকল্পনা ছাড়া জিততে পারবে না ইসরাইল : ব্লিনকেন
- ইসরাইল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার ব্রাজিলের
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ আরো ৭ মাস চলতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। রাফা অভিযানে ইসরাইলি ট্যাংক নগরীর প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়ার পর ইসরাইলের এক কর্মকর্তা এমন কথা জানালেন। ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি বুধবার বেতারে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ২০২৪ সালকে যুদ্ধের বছর হিসেবে নিরূপণ করেছে।’ রয়টার্স, সিএনএন, আল-জাজিরা।
মন্ত্রিসভায় যুদ্ধ পরিকল্পনা পেশের প্রথম দিনগুলোতে অকপটেই বলে দেয়া হয়েছে যে, যুদ্ধ দীর্ঘ হবে। জাচি হানেগবি বলেন, “আমরা এখন ২০২৪ সালের পঞ্চম মাসে আছি। এর মানে- আমরা আশা করছি যে, আরো সাত মাসের লড়াইয়ে আমরা হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের সামরিক ও শাসনক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।”
গাজায় প্রায় আট মাস ধরে চলা আগ্রাসনের পর ইসরাইল বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পাওয়ার এই সময়ে ইসরাইলি কর্মকর্তার এমন বক্তব্য এলো। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইল এমন ইঙ্গিতই দিল যে, হামাসের দাবি মেনে তারা যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলের অন্য ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোও সম্প্রতি গাজায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। তার মধ্যেই গাজায় চলমান যুদ্ধ চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার কথা জানালেন ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
মিসর সীমান্তবর্তী রাফা নগরীতে চলমান অভিযানের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে সীমান্তসংলগ্ন এলাকা ‘চোরাচালানের রাজ্য’ হয়ে উঠেছে। সীমান্ত লঙ্ঘন করে ইসরাইলে রকেট, বিস্ফোরক ডিভাইস, গুলি ছোড়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ করতেই মিসর সীমান্তে বাফার জোনের এক-তৃতীয়াংশ ইসরাইলি সেনাবাহিনী দখল করেছে এবং এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করা তাদের লক্ষ্য বলে দাবি করেছে ইসরাইল । ১৯৭৯ সালে মিসর ও ইসরাইলের মধ্যকার শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, গাজা ও মিসরের মধ্যে বাফার জোন গড়ে তোলা হয়েছিল। বুধবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র এই বাফার জোন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কথা জানান।
পুরো স্থল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ দাবি ইসরাইলের : বিবিসি জানায়, ফিলাডেলফি করিডোর নামে পরিচিত গাজা-মিসর সীমান্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাফার জোন (নিরপেক্ষ জোনাল এলাকা, যা দুই বা ততোধিক ভূমির মধ্যে অবস্থিত) নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরাইল । এর অর্থ গাজার পুরো স্থলসীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে এবং তাদের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, সেখানে ২০টি সুড়ঙ্গ পাওয়া গেছে, যে পথ দিয়ে অস্ত্র পাচার করে আসছিল হামাস।
তবে মিসরীয় টিভি দেশটির কর্মকর্তার বরাতে বলেছে, ওই সুড়ঙ্গের কথা বলে ইসরাইল গাজার দক্ষিণের শহর রাফায় তাদের অভিযানকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছে। ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে মিসরীয় বাহিনীর এক গার্ড নিহত হওয়ার পর দেশটির সাথে ইসরাইলের উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে, এর মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটল। বুধবার আইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আইডিএফ সেনারা মিসর ও রাফাহ সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।’ তিনি করিডোরটিকে হামাসের জন্য একটি ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘করিডোরটি দিয়ে হামাস নিয়মিতভাবে গাজা উপত্যকায় অস্ত্র পাচার করে।’ তিনি বলেন, সেনারা ওই এলাকায় পাওয়া সুড়ঙ্গগুলো পরীক্ষা করে দেখছে। হাগারি পরে সাংবাদিকদের সাথে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না যে সব টানেল মিসরে প্রবেশ করেছে। ফিলাডেলফি করিডোর একটি বাফার জোন। এলাকাটি প্রায় ১০০ মিটার (৩৩০ ফুট) প্রশস্ত এবং যা মিসরের সাথে ১৩ কিলোমিটার (৮ মাইল) সীমান্তের গাজা পাশ দিয়ে চলে গেছে।
গাজার একমাত্র স্থলসীমান্ত ইসরাইলের সাথে। মিসর এর আগে বলেছিল, তারা আন্তঃসীমান্ত টানেল ধ্বংস করেছে। ফলে কোনো অস্ত্র চোরাচালান আর সম্ভব নয় সেখানে। তবে একটি উচ্চ পর্যায়ের মিসরীয় সূত্র আল-কাহেরা নিউজের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে বলেছে, ‘ফিলিস্তিনি শহর রাফায় অভিযান চালিয়ে যাওয়া এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টার জন্য এই অভিযোগগুলো করছে ইসরাইল।’
হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরাইলি বাহিনী তিন সপ্তাহ আগে গাজার পাশে রাফাহ ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এরপর থেকে মিসর ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাফাহ সীমান্তবর্তী এলাকায় মিসরীয় ও ইসরাইলি সেনাদের সাথে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় এক মিসরীয় সেনা নিহত হয়েছিল। মিসর ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একটি শক্তিশালী সমর্থক দেশ এবং গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান ও যুদ্ধে ইসরাইল কর্তৃক হাজার হাজার বেসামরিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজাজুড়ে কমপক্ষে ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে।
পরিকল্পনা ছাড়া জিততে পারবে না ইসরাইল : ব্লিনকেন
টানা প্রায় আট মাস ধরে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে নিহত হয়েছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সঙ্কট। তবে এরপরও হামাসকে নির্মূল বা পরাজিত কোনোটিই করতে পারেনি ইসরাইল। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইসরাইলের প্রস্তুতি না থাকা নিয়ে আবারো সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলে পরের দিন কী হবে সেই পরিকল্পনা ছাড়া গাজা যুদ্ধে জিততে পারবে না ইসরাইল। বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
বুধবার মলদোভানের রাজধানী চিসিনাউতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করতে এবং গাজায় নিরাপত্তা ও শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করার জন্য ইসরাইলের একটি পরিকল্পনা তৈরি করা ‘অবশ্যক’।
ব্লিনকেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘(যুদ্ধ শেষের) পরের দিনের জন্য পরিকল্পনা না থাকলে, সেই পরের দিন কখনোই আসবে না।’ তিনি আরো বলেন, হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় ‘প্রকৃত সাফল্য’ অর্জন করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, গাজার ভবিষ্যতের বিষয়ে ইসরাইলের সরাসরি ভূমিকা থাকা উচিত নয়। ব্লিনকেন বলেন, ‘যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে সেখানে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহ দেখতে পাব।’
ব্লিনকেন আরো বলেন, ‘যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা না থাকলে হামাসের হাতেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হবে, যা অগ্রহণযোগ্য। অথবা যদি সেটি নাও হয়, তাহলে আমরা সেখানে বিশৃঙ্খলা, অনাচার দেখতে পাব এবং সেখানে একটি ক্ষমতা-শূন্যতা সৃষ্টি হবে যা শেষ পর্যন্ত হামাস গোষ্ঠীর মাধ্যমেই আবার পূর্ণ হবে বা হয়তো এমন কিছু- যদি কল্পনাও করা হয় - যা আরো খারাপ।’
ইসরাইল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার ব্রাজিলের : আলজাজিরা জানায়, ইসরাইলে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলা ঘিরে কয়েক মাস ধরেই দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। এরই মধ্যে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ঘোষণা দিল ব্রাজিল। বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসরাইল থেকে রাষ্ট্রদূত ফ্রেডেরিকো মেয়ারকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ব্রাজিল সরকার। তাকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বদলি করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা