রেমালের ক্ষতি পোষাতে সব সহযোগিতা দেবো : প্রধানমন্ত্রী
- কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
- ৩১ মে ২০২৪, ০০:০৫
ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে যাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, তারা যাতে আবার নির্মাণ করতে পারেন, মেরামত করতে পারেন আমি সে ব্যবস্থা করে দেবো। নতুন উদ্যমে কৃষক যাতে কৃষি কাজ শুরু করতে পারে সে জন্য আমি আপনাদের বীজ, সার দেবো। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ মেরামত করে দেবো। ইতোমধ্যেই আমরা নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছি, বর্ষার আগে কাজ সম্পন্ন করব ইনশাআল্লাহ। আপনারা আমার উপর ভরসা রাখুন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরশহরের সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ মাঠে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুর্যোগে যারা সহযোগিতা করেছেন, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আধা সামরিক, সামরিক কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে ধন্যবাদ দেই। আমরা চাই এই অঞ্চলের মানুষ যেন দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায়। এই অঞ্চল সবসময় দুর্যোগপ্রবণ, তাই আমি আজ আপনাদের পাশে হাজির হয়েছি। আমি আসার সময় ভালোভাবে দেখেছি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। উপকূলীয় এলাকায় আপনাদের দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দিয়েছি এবং আরো করে দেবো।
টানা চারবারের সরকারপ্রধান বলেন, আজকে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়। দেশের উন্নতির বিষয়ে আজকে বলার কিছু নেই; আপনারা নিজেরাই জানেন। আমরা রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ করে দিয়ে আপনাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা- সব করে দিয়েছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নির্মল নন্দীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চল সবসময় অবহেলিত ছিল। আমি আপনাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, শের-ই-বাংলা নেভাল বেইজ করে দিয়েছি। নিত্যপণ্য মানুষ যাতে সহজে কিনতে পারে সে জন্য আমি ফ্যামিলি কার্ড করে দিয়েছি। দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি, শাম্মি আখতার এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) হাফিজ মল্লিক এমপি, কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আবদুল মান্নান, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রমুখ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী সদর আসনের এমপি এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে হেলিকপ্টারে খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন। জনসভাস্থলে পৌঁছে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার মানুষের মধ্যে তিনি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। জনসভা শেষে তিনি শেখ কামাল সেতু পরিদর্শন করে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কনফারেন্স রুমে বরিশাল বিভাগীয় উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। বেলা ৩টায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
আইএমও মহাসচিবের সাক্ষাৎ : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) মাধ্যমে ছোট দ্বীপ ও আফ্রিকান স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে সামুদ্রিক খাতে বৃত্তি চালু করতে চায়। গতকাল সকালে গণভবনে আইএমওর মহাসচিব আর্সেনিও অ্যান্তোনিও ডমিনগুয়েজ তার সাথে সৌজন্য করতে এলে তিনি বলেন, আমরা আইএমওর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামে ১০টি ক্যাডেট প্রশিক্ষণ বৃত্তি চালু করতে চাই।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম বলেন, আইএমও মহাসচিব প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন। বৃত্তিপ্রাপ্তদের বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আইএমও মহাসচিব নারী মেরিনার বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রথম নারী মেরিনারদের নিয়োগ দিয়েছে এবং তাদেরকে নাবিক হতে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি এক মাসের মধ্যে ছিনতাইকৃত বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ক্রুদের মুক্ত করতে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য আইএমওর প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা সামুদ্রিক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইএমওকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের পাশের দেশগুলো একসাথে সমুদ্র পথের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।
জিএসপি প্লাস অব্যাহত রাখতে ফিনল্যান্ডের সহায়তা কামনা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর সমৃদ্ধির দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে মসৃণ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছ থেকে আরো কয়েক বছর জিএসপি প্লাস সুবিধা অব্যাহত রাখতে ফিনল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছেন। বাংলাদেশে ফিনল্যান্ডের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত কিম্মো লাহদেবির্তা গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে গণভবনে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে উঠেছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় গণহত্যা এবং কোভিড-১৯ মহামারী কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহায়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) খাত বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বৈদ্যুতিক গ্রিড ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগে তার দেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা