মালয়েশিয়া যাওয়া অনিশ্চিত ৩০ হাজার শ্রমিকের
- মনির হোসেন
- ৩১ মে ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ৩১ মে ২০২৪, ১৫:৪৯
- আজ মধ্যরাতের পর ১৪ সোর্সকান্ট্রির কর্মীরা ঢুকতে পারবেন না
- রিক্রুটিং অফিসগুলোর সামনে রাত কাটছে কর্মীদের
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আজ শুক্রবার মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশসহ ১৪ সোর্সকান্ট্রিভুক্ত দেশের শ্রমিকরা কর্মসংস্থানের জন্য মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন। এরপর আর কোনো ফ্লাইটের কর্মীদের মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবেন না।
এ দিকে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশকে যে পরিমাণ চাহিদাপত্র দিয়েছিল সেই হিসাব অনুযায়ী এখনো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার শ্রমিকের সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও তারা মালয়েশিয়ার ফ্লাইটে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে অভিবাসন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা মনে করছেন আজ মধ্যরাতের পর কমপক্ষে ৩০ হাজার কর্মীর বিদেশযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকার, রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ নানাভাবে অপেক্ষমাণ শ্রমিকদের সময় বাড়িয়ে দেশটিতে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানানোর পরও মালয়েশিয়া সরকার সেই সুযোগ দিতে নারাজ। তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার ৩১ মে এর পর থেকে আর কোনো বিদেশী শ্রমিকদের মালয়েশিয়া প্রবেশ বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে সেটি থেকে তারা সরবে না এবং সময়ও বাড়াবে না। এমন ঘোষণা শোনার পর থেকেই অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা শ্রমিক ও স্বজনদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অনেকে আবার দেন দরবার করে লাখ টাকারও বেশি দামে টিকিট ক্রয় করার পরও ৩১ মে রাত ১২টার মধ্য মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর শিডিউল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল জহিরুল ইসলাম নামে একজন আইটি ইঞ্জিনিয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার দুই ভাগিনাকে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য ইনসাইড গ্লোবাল ওভারসিস লিমিটেডের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করি। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের চাহিদা মোতাবেক সমস্ত টাকা পরিশোধ করি। এক পর্যায়ে দেন দরবার করার পরও বিদেশ যাওয়ার সমস্ত পেপার রেডি হয়। কিন্তু বাদসাধে বিমানের টিকিট নিয়ে। চাহিদার ৫ গুণ বেশি দামে টিকিট কিনে তাদের পাঠানোর ইচ্ছা পোষণ করলেও বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত কোনো এয়ারলাইন্সেরই টিকিট ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এ ব্যাপারে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কেউ টিকিট ম্যানেজ করার মতো সংবাদ তাকে দিতে পারছেন না।
শুধু জহিরুল ইসলাম নন, তার মতো হাজার হাজার মানুষ ঢাকার বিভিন্ন ট্র্যাভেলস এজেন্সিতে ধরনা দিয়েও কাক্সিক্ষত টিকিট জোগাড় করতে পারছেন না। অনেকের টেনশনে সকাল থেকে রাত কাটছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দরজার সামনে। এরমধ্যে অনেকে গ্রাম থেকে এসে ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে আবার কেউ হোটেলের বাইরে লাগেজসহ অবস্থান করছেন।
গত বুধবার রাতে একজন জনশক্তি ব্যবসায়ীর সাথে মালয়েশিয়া সরকার সময় বাড়াচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লেস চান্স’। এর আগে নয়া পল্টনের রাস্তার দুইপাশে বিভিন্ন ভবনের নিচে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের লাগেজ নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কারো ফ্লাইট রাতে ছিল। আবার কারো ফ্লাইটের শিডিউল ৩১ মে এর মধ্যে করার চেষ্টা চলছিল বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানো হয়। এসব শুনে তাদের অনেকেই অজানা শঙ্কার মধ্য পড়েন। সবমিলিয়ে অপেক্ষমাণ কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছিল।
ঢাকার প্রতিষ্ঠিত জনশক্তি ব্যবসায়ী ও বায়রার সিনিয়র নেতা কাজী মফিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা তো মালয়েশিয়াগামী প্রতিটি শ্রমিকদের সময়মতো পাঠাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু বিমানের টিকিট সময়মতো না পাওয়ার কারণে তাদের যাত্রা বিঘিœত হচ্ছে। এর মধ্যে টিকিট কেটে রাখার পরও টিকিট অন্যত্র বিক্রি করে দেয়ার কারণে অনেক শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। তবে মালয়েশিয়া সরকার যদি আমাদেরকে আর কয়টা দিন সময় বাড়িয়ে দিতো তাহলে আমাদের শ্রমিকদের যেমন সমস্যা হতো না তেমনি আমরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতাম না।
গতকাল বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর উদ্ধৃতি দিয়ে একাধিক ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকা থেকে সরাসরি মালয়েশিয়ার বিমান টিকিট কাটতে না পেরে অনেকেই বিকল্পপথের টিকিট কেটে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুয়ালালামপুরের দুটি বিমানবন্দর টার্মিনালে প্রায় ২০ হাজারের মতো বাংলাদেশী কর্মী পৌঁছে ফ্লোরে অবস্থান করছেন। শেষ মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এতে নিয়োগকর্তা ও কর্মীদের দুর্ভোগ বাড়ছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী আসা প্রসঙ্গে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ শাখার সভাপতি আলহাজ মকবুল হোসেন মুকুল গত বুধবার সকালে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এই মুহূর্তে খুব বিপদের মধ্য আছি। হাতে আর মাত্র দুই দিন সময় আছে। অনেক ঝামেলার মধ্য আছি।
মালয়েশিয়া থেকে অপর একজন ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের অনেক শ্রমিক এখনো মালয়েশিয়ায় আসতে পারছে না। কারণ বিমানের টিকিটের দাম এক লাখ ১০ হাজার টাকা হয়ে গেছে। আপনারা তো এসব টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লিখবেন না। তাদের কারা সহযোগিতা করছে সেসব তুলে ধরবেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই সময়ে সরকারের উচিত শ্রমিকগুলো বিশেষ ফ্লাইটে মালয়েশিয়ায় পাঠানো। এখন অনেক লোক মালয়েশিয়ায় আসতে পারবে না। তাদের সাথে এখন আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর প্রতিনিয়ত দরবার সালিস করতে হবে। এসব ঝামেলা আর ভালো লাগে না। আমরা আর একজন শ্রমিক পাঠিয়ে কত টাকাই লাভ করব?
গতকাল মালয়েশিয়ার স্ট্রেইট টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১ জুন থেকে বর্তমান কোটার অধীনে নতুন কোনো শ্রমিক নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন নাসুশন ইসমাইল। অপর দিকে কোটা পদ্ধতিতে সংস্কার সাধনের পর এবং ৩০ জুন শ্রমিকদের আসার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করা হবে বলে জানিয়েছেন মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া সরকার গত মার্চে এক ঘোষণায় বিদেশী শ্রমিকদের ৩১ মে এর পর আর প্রবেশ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিষয়টি মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্য ‘গুজব’ বলে প্রচার করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের (মালয়েশিয়া) ডেডলাইন এখন চূড়ান্ত পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
এ দিকে গতকাল রাত ৮টায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) ছাদেক আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। যার কারণে গতকাল পর্যন্ত কতজন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন সেই তথ্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা