ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- বাসস
- ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুস সালাম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকারসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সামনে যেহেতু বর্ষার মৌসুম, তাই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করতে হবে।’ তিনি জানান, পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়াতে না পারে, সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজে রাতভর ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।’ তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী একনেক সভায় জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনহ সরকারের সব সংস্থা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট সতর্ক থাকায় ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি কম হয়েছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার জানান, একনেক সভায় মোট ১১ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ৫৪১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৭ হাজার ৮৭৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং একই সাথে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের দুর্যোগকালে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ল্যান্ডফোন চালু রাখার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্টেকহোল্ডারদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে, পোর্টফোলিও নির্বিশেষে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে প্রাণহানি ও সম্পদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাঁর হিসাব করতে বলেছেন এবং আগামী রোববারের মধ্যে সেটা সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
একনেক সভায় রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে ৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নে ৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ হোস্ট অ্যান্ড ফোরসিবিলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনালস’(এফডিএমএন)/ ‘ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন ইনহ্যান্সমেন্ট অব লিভস থ্রো এ মাল্টি-সেক্টোরাল এপ্রোচ প্রজেক্ট ইনফ্রাস্টকচার রিলেটেড’ প্রকল্প এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চার হাজার ৪০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর হোস্ট কমুনিটিজ অ্যান্ড এফডিএমএন পপুলেশন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য নেয়া প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এক বছরের জন্য অনুদান দেবে। এছাড়া কিছু ঋণও দেয়া হবে। শুরুতে বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীরা শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য দিতে চেয়েছিল, পরে আলাপ করে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও চাওয়া হলে তা দিতে রাজি হয়েছে। এসব টাকায় যোগাযোগ তথা রাস্তা, রেলপথ নির্মাণ করা হবে। যে বন ও পাহাড় নষ্ট হয়েছে তার উন্নয়ন করা হবে। এসব বাস্তবায়ন করতে ৩ থেকে ৪ বছর সময় লাগবে। রোহিঙ্গারা আসায় যে বনাঞ্চল নষ্ট হয়েছে তা উন্নয়নে কাজ করা হবে।’ সত্যজিত বলেন, এই দুই প্রকল্প প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী প্রজেক্ট প্লানিং সিস্টেম (পিপিএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনুমোদন করেছেন, যা পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করবে। প্রধানমন্ত্রী এই দুই প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্ভাবন মানসিকতা প্রদর্শন এবং আন্তরিকভাবে কাজ করতে বলেছেন।
একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজ প্রকল্প। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। নওগাঁ জেলার মহদেবপুর উপজেলায় ৪৮০০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চালের আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ প্রকল্প। রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প- ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স ফর রিপারপাসিং অব এগ্রিকালচারাল পাবলিক সাপোর্ট টুওয়ার্ডস এ সাসটেইনেবল ফুড সিস্টেম ট্রান্সফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প।
বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং দুটি স্লিপওয়ে নির্মাণ প্রকল্প। কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এ পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা