শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় জ্যান্ত পুড়ে ৪০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
- ফিলিস্তিনিদের জেগে উঠার আহ্বান হামাসের
- ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞের
গাজার রাফাহ শহরে তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া মানুষের ওপর ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৪০ জন জ্যান্ত পুড়ে মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন আরো অনেকে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে, হামাসের দুই নেতাকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
আলজাজিরা জানিয়েছে, হামলার পর তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। এতে অনেকে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া তাল-আস-সুলতান এলাকাতেও হামলা হয়েছে। সবমিলিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ইসরাইলি বাহিনী জাবালিয়া, নুসেইরাত এবং গাজা সিটিসহ অন্যান্য এলাকায় উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব হামলায় কমপক্ষে ১৬০ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, তারা ‘নির্ভুল অস্ত্র’ ব্যবহারকারী হামাস যোদ্ধাদের টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। আগুন লাগার সময় বেসামরিক লোকজন আহত হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে ইসরাইল। তবে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করেনি তারা। এ দিকে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম ওয়াফা জানায়, রোববার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে ইসরাইলি বাহিনীর অন্তত আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ওই তাঁবুর আশ্রয়শিবিরে আঘাত হানে। এতে ৪০ জনের মতো প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। ফিলিস্তিনি ফায়ার সার্ভিস ৪৫ মিনিটের চেষ্টায় ওই আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
রাফাহ শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ব্রিক্স ক্যাম্প খ্যাত ওই অঞ্চলে হাজার হাজার তাঁবু রয়েছে। এসব তাঁবুতে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকাটিতে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার গুদাম রয়েছে। আগের দিন ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবে অন্তত আটটি রকেট হামলা চালিয়েছে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস। তারই প্রতিশোধ নিতে রাতেই সেখানেই হামলা চালালো ইসরাইল।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, রাফায় হামাসের দুই ঊর্ধ্বতন নেতার অবস্থান লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। তেলআবিবে হামলায় দায়ী হামাসের চিফ অব স্টাফ ইয়াসিন রাবিয়া ও আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খালেদ নাজার রাফাহ হামলায় নিহত হয়েছেন। আইডিএফ এক বিবৃতি বলেছে, ইসরাইল অবগত হয়েছে যে ওই হামলায় রাফাহ শহরে বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আশ্রয় শিবিরে আগুন ও নিহতের অভিযোগ ‘যাচাই’ করছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
ফিলিস্তিনিদের জেগে উঠার আহ্বান : গাজায় ইসরাইলের সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের জেগে উঠার ডাক দিয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরাইলি দখলদার বাহিনী রাফাহ শহরের একটি পরিকল্পিত নিরাপদ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাঁবুতে বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০ জনকে হত্যার পরই এমন আহ্বান জানাল সংগঠনটি। হামাস বলেছে, ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ইসরাইলি বাহিনীর ‘গণহত্যার’ বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনটি রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, রোববার সন্ধ্যায় উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে অপরাধী দখলদার সেনাবাহিনী যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পশ্চিমতীর, জেরুসালেম, অধিকৃত অঞ্চল এবং বিদেশে অবস্থানরত আমাদের জনগণকে জেগে উঠার এবং চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানাই।
গাজায় সহিংসতা আর সমর্থনযোগ্য নয় : ইতালি
গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আর সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুইডো ক্রসেটো। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ক্রসেটো বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণ একটি ক্রমবর্ধমান কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানের নিরীহ পুরুষ, নারী ও শিশুদের অধিকারের কথা বিবেচনাই করা হচ্ছে না। অথচ তাদের সাথে নেই হামাসের কোনো সম্পর্ক। সেজন্য ইসরাইলের নির্বিচারে হামলা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। এ সময় তিনি হতাশার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন। ক্রসেটো বলেন, ইতালি গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের ইসরাইলের প্রতি নীতিগতভাবে সংহতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় হামাস ও ফিলিস্তিনি জনগণের মাঝে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। তাই ফিলিস্তিনিদের প্রতি নির্বিচারে হামলা মেনে নেয়া যায় না। শনিবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি রোমে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোস্তফার সাথে দেখা করেন। যুদ্ধবিরতির প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং হামাসকে ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান : গাজায় আগ্রাসন ইস্যুতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিন বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ। ফিলিস্তিনে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ রাফার তাঁবু ক্যাম্পে ইসরাইলের হামলাকে ‘আরো ভয়াবহ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্সের এক পোস্টে আলবানিজ বলেন, এই নিষ্ঠুরতা আন্তর্জাতিক আইন ও ব্যবস্থার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, গাজায় গণহত্যা বহিরাগত চাপ ছাড়া সহজে শেষ হবে না। ইসরাইলকে অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা, ন্যায়বিচার, চুক্তি স্থগিত, বাণিজ্য, অংশীদারিত্ব এবং বিনিয়োগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণের মুখোমুখি হতে হবে।
আইসিসিতে সাংবাদিক সংগঠনের অভিযোগ : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। আইসিসিতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হত্যা ও আহত করার দায়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে সংগঠনটি। গতকাল সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। আরএসএফ জানিয়েছে, তারা গত বছরের ডিসেম্বর ১৫ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত করার জন্য আইসিসির কৌঁসুলিকে আহ্বান জানিয়েছে। অভিযোগে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আটজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের মৃত্যু ও একজন সাংবাদিক আহত হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এসব সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে সাংবাদিক মুস্তাফা থুরায়া এবং হামজা আল-দাহদুহ, যারা ৭ জানুয়ারি তাদের গাড়িতে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া অক্টোবর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ১০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক হত্যার তদন্তের জন্য আইসিসির প্রসিকিউটরকে আহ্বান জানিয়েছে আরএসএফ। সংগঠনটি জানিয়েছে যে তাদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে যে ‘কিছু সাংবাদিককে স্বেচ্ছায় হত্যা করা হয়েছে এবং বাকিরা বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইডিএফের (ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) নির্বিচার হামলার ভুক্তভোগী।
আরএসএফের অ্যাডভোকেসি ও অ্যাসিস্ট্যান্স পরিচালক অ্যান্টন বার্নার্ড বলেন, গাজার সাংবাদিকদের সাথে সংহতি জানিয়ে, সাংবাদিকদের হত্যার জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করতে সংগঠনটি কাজ চালিয়ে যাবে। নিউ ইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি জানিয়েছে, গাজার যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ১০৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এত কম সময়ে এত জন সাংবাদিক নিহতের ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা