৪ জুলাই পর্যন্ত জামিন পেলেন ড. ইউনূস
‘নিজের মতো করে কাজকর্ম করতে পারছি না’- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ মে ২০২৪, ০১:০৩
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিনের মেয়াদ আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন আদালত। একই সাথে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিলের শুনানির দিন আগামী ৪ জুলাই নির্ধারণ করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শুনানি শেষে বেলা সোয়া ১১টার দিকে আদালত থেকে বের হয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ড. ইউনূস। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা কোর্টে হাজিরা দিয়েই চলেছি। যে পরিস্থিতিতে হোক হাজিরা দিতে হয়। হাজিরা দিচ্ছি। কিন্তু এই বয়সের লোকজন আমরা আছি। শরীরের কী অবস্থা। তারা কিভাবে হাজিরা দেবেন এটা কঠিন হয়ে যায়। একজন আগে হেঁটে আসতেন, এখন হুইল চেয়ারে আসা শুরু করেছেন। তা সত্ত্বেও আমরা হাজিরা দিচ্ছি। নিজের মতো করে কাজকর্ম করতে পারছি না। যেহেতু একটি বড় রকমের দুর্যোগ মাথার মধ্যে আছে।
ড. ইউনূস বলেন, দুঃখ লাগে, মানুষ যে বঞ্চিত হলো। আমরা যে কাজ করি তাতে পৃথিবীর মানুষ আগ্রহী, তারা জানতে চান। আমরা বিরাট কোনো ব্যবসা বাণিজ্য করছি না। আমরা মানুষকে পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করছি। অনুপ্রেরণা দেয়ার চেষ্টা করি। আমার কাছে ভালো লাগে এই অনুপ্রেরণাতে অনেক মানুষ সাড়া দেন। সাধারণ মানুষ সাড়া দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, কে আমার উপর রাগ করলো, কেন রাগ করলো, কেন আমাকে কাজকর্ম থেকে বিচ্যুত করে দিতে হবে, আমাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কী সেই রাগ সেটা আপনারাই বিশ্লেষণ করুন। তিনি বলেন, এই বয়সে এসে বাকি কাজ করে যাবো এমনটি ইচ্ছা ছিল। কাজের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার একটা চেষ্টা ছিল কিন্তু সে দিকে যেতে পারছি না। মূল দুঃখ লাগে আমাদের অসমাপ্ত কাজ না করার কারণে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। ভালো লাগার একটা বিষয় হলো বাংলাদেশ থেকে একটা আইডিয়া, একটা ধারণা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছেন।
ড. ইউনূস বলেন, কিছু কিছু জিনিস আমার কাছে অদ্ভুত লাগে, সেটা হলো যেটা কখনো চিন্তা করিনি এমন একটা কাজের সঙ্গে যুক্ত হবো। প্যারিস অলিম্পিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে আমাদের কথার ভিত্তিতে। আমি যা বলেছি, তারা এটা গ্রহণ করেছে। আমার ধারণা নিয়ে প্যারিস অলিম্পিক তৈরি হচ্ছে, ১০০ বছর পর তাদের এই মহা আয়োজন। এটা আমার কাছে অনেক পাওনা। এতে দেশের তরুণরা উদ্বুদ্ধ যে আমাদের ধারণা নিয়ে একটা মহা কর্মকাণ্ড হতে যাচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করিনি বা ক্ষতি করার চেষ্টা করিনি। তিনি বলেন, এই যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, ব্যবসাকে উদ্বুদ্ধ করা, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষও আমার কথা গ্রহণ করে। এই একটা লেভেলে আমরা আসতে পেরেছি। এ ছাড়া আরো কাজ করতে পারতাম যদি না এসব টানা-হেঁচড়ার মধ্যে পড়তাম। তার পরও জীবনে যা করার দরকার তা করার চেষ্টা করছি। শেষ বয়সে এসে আরো করতে চেয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন, নতুন কিছু করতে পারলে অন্য দেশের মানুষ বলতো এটা বাংলাদেশ থেকে আমরা শিখেছি। সেই সুযোগটা হলো না, এটাই দুঃখের বিষয়। এই দুঃখ থেকে আমি যেন মুক্তি পেতে পারি, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
জামিন আবেদন এবং খালাস চেয়ে আপিলের শুনানি থাকায় এ দিন সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে আপিল শ্রম ট্রাইব্যুনালে আসেন ড. ইউনূস। আদালতে ড. ইউনূসসহ এ মামলায় অন্য বিবাদি গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো: শাহজাহান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দুটি দেশের কূটনীতিকরাও শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়। এ ছাড়া তিনি খেলার চেয়ে আপিলের শুনানি মুলতবি করার আবেদন করেন। এর পর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ওই আবেদনের বিরোধিতা করেন। এর পর আদালত ৪ জুলাই পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। একই সাথে ৪ জুলাই আপিলের শুনানির দিন ধার্য করে আদেশ দেন। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জামিনের মেয়াদ ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন আদালত। একই সাথে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিলের শুনানি ২৩ মে নির্ধারণ করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালত।
গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সাথে ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জামিন দেন আদালত। একই সাথে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের দেয়া রায়ের কার্যকারিতাও স্থগিত করেন আদালত।
আইনজীবীরা জানান, শ্রম আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস ও জামিন চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি তুলে ধরে ড. ইউনূসসহ চারজন আপিল আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, আইনের ৩০৩(৩)(ঙ) ধারায় ৬ মাসের সাজা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ আইনের এই ধারায় ভিন্ন অপরাধের কথা বলা হয়েছে। আর এ মামলার বাদি বলেছেন, ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা মামলার আর্জিতে উল্লেখ করেননি। আর ৩০৩(৩)(ঙ) ধারা যেখানে মামলার আর্জিতে নেই। আইনের সেই ধারায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে দেয়া কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার স্বাক্ষরের পর ৮৪ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়। গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা