১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অসত্যায়িত ভিসায় ওয়ানস্টপে ৩ দিনেই মিলবে বহির্গমন ছাড়পত্র

-


বিদেশগামী শ্রমিকরা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে পারবে। আর আইন অনুযায়ী কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই কর্মীর আবেদন জমা হওয়ার তিন দিনের মধ্যে বহির্গমন ছাড়পত্র দিতে হবে।
গত ২০ মে কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সম্মেলন কক্ষে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ওই বৈঠকে বিএমইটির প্রশিক্ষণ শাখা, বহির্গমন শাখা, কর্মসংস্থান, প্রশাসন, বাজেট, সাধারণ সেবা, আইটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সেলের কার্যক্রম, ডিটিটিআইর কার্যক্রম, ঢাকার টিটিসিগুলোর কার্যক্রম নিয়ে বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে এ পর্যন্ত যত শ্রমিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন তার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ শ্রমিক বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা (ভাই-চাচা, খালু-মামা) ভিসায় বিদেশে গিয়েছেন বলে বিএমইটির কর্মকর্তা ও রিক্রুটিং এজেন্সি-সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব ভিসায় বিদেশ যাওয়ার আগে বিএমইটির বহির্গমন শাখা থেকে ছাড়পত্র নিতে হলে যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সিীর মাধ্যমে কর্মীকে প্রসেসিং করাতে হয়; কিন্তু অভিযোগ আছে, এজেন্সির মাধ্যমে প্রসেসিং করানো এসব ভিসায় বিদেশ গিয়ে অনেক শ্রমিক বিদেশে চাকরি না পেয়ে কোথাও বেতনভাতা না পেয়ে প্রতারিত হওয়াসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মসংস্থান শাখায় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স শাখায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। শুরু হয় তদন্ত। একপর্যায়ে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন, বিদেশে শ্রমিক গিয়ে ঝামেলায় পড়াদের দায়দায়িত্ব কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি কৌশলে নিতে চায় না।
অপর দিকে রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে উত্থাাপিত অভিযোগের বিষয়ে বিএমএইটি থেকে যখন অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠিয়ে জবাব চাওয়া হয় তখন ওই এজেন্সি লিখিতভাবে জানায়, তারা শুধু কর্মীর ভিসার বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়ার প্রসেসিং করেছে মাত্র। মানে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করা পর্যন্ত। এ থেকে উত্তরণে বিএমইটির মহাপরিচালক উদ্যোগ নেন। তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, বিদেশ থেকে স্বজনদের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা ভিসার বহির্গমন ছাড়পত্র রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে নয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর ওয়ানস্টপের মাধ্যমে করা যাবে।

গত ২০ মে মাসিক সমন্বয় সভার বৈঠকের এজেন্ডায় বহির্গমন শাখার কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতির তথ্যাদি ও গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়। ওই আলোচনার পর সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিদেশগামী কর্মীরা ব্যুরোর ওয়ানস্টপের মাধ্যমে বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে পারবে। তিন দিনের মধ্যে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার পাশাপাশি দ্রুত নথি নিষ্পত্তিতে জনবল সমন্বয় করে প্রয়োজনানুসারে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানতে গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক (বহির্গমন) ছাদেক আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোনে সাড়া দেননি। তবে বিএমইটির অপর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজের পরিচয় না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএমইটির আইন অনুযায়ী বিদেশগামী কর্মীদের তিন দিনের মধ্যে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তবে মে মাসের মাসিক সমন্বয় সভার আলোচনায় এই বিষয়ে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহ করা ভিসায় দূতাবাস/হাইকমিশনের সত্যায়ন না থাকলে সে ক্ষেত্রে ওই ভিসার বিপরীতে বহির্গমন ছাড়পত্র ব্যুরোর ওয়ানস্টপে কর্মীদের আবেদন জমা করতে হবে। সেখানে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি জানি।
এ দিকে বিদেশের মিশনগুলোর নামে কর্মীদের সত্যায়ন না থাকা ভিসায় বিএমইটির বহির্গমন শাখায় ছাড়পত্র দেয়ার কার্যক্রম নিয়ে দেদার চলছে অবৈধ লেনদেনবাণিজ্য। এ নিয়ে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আক্ষেপ করে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, টাকা ছাড়া বিএমইটির বহির্গমন শাখার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ফাইল ছাড়া নিয়ে টালবাহানা করে থাকেন। এসব হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা বলছেন, কিছুদিন আগে স্মার্ট কার্ড বিতরণ নিয়ে ব্যুরোর পাঁচতলায় কর্মীদের ব্যাপক হয়রানি পোহাতে হতো। এখন সেটির অবসান হলেও কিরঘিস্তান, কাতার, ইউরোপের দেশ ইতালি, হাঙ্গেরি, মলদোভা, রোমানিয়সহ বিভিন্ন দেশের অসত্যায়িত ভিসার বিপরীতে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার নামে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অনিয়মের সাথে একটি চক্র দীর্ঘ দিন ধরেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এই চক্রটিকে সাম্প্রতিক সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে জনৈক এক ‘ব্যক্তি’ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। এ নিয়ে ওই ব্যক্তির ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চলছে বলেও জানা গেছে।

এর আগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফরের সাথে তার দফতরে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই প্রতিবেদককে সত্যায়ন না থাকা ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে যারা বিদেশ থেকে ভিসা সংগ্রহ করবে তাদের ভিসা প্রসেসিং কাজ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো করতে পারবে না। এই প্রসেসিং করবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার। এ নিয়ে শিগগিরই একটি সার্কুলার জারি হবে বলে আশা করছি। এর অন্যতম কারণ হলো বিদেশে কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখা থেকে চার মাসে (জানু-এপ্রিল) তিন লাখ ২২ হাজার ২৩৭ জন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে কতজন অসত্যায়িত ভিসায় ওয়ানস্টপের সার্ভিস নিয়ে গেছেন তা জানা যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement