রাইসির জানাজায় ২০ লাখ মানুষ, আয়াতুল্লাহ খামেনির ইমামতি
হামাস প্রধানসহ অংশ নিলেন বিভিন্ন দেশের নেতারা- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০৫
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং তার সঙ্গীদের নামাজে জানাজায় অংশ নিয়েছেন লক্ষাধিক জনতা। এ নামাজে জানাজায় ইমামতি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি। ইব্রাহিম রাইসিসহ দুর্ঘটনায় নিহত আটজনের লাশের কফিন গতকাল বুধবার সকালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এর আগে মঙ্গলবার, তাবরিজ, কোম ও তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আলজাজিরা।
তেহরানে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং লেবানিজ হিজবুল্লাহ প্রতিরোধের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল শেখ নাইম কাসেমসহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিরোধ সংগঠনের নেতারা। নামাজে জানাজায় ইরানের আধা সামরিক বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শোকার্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি ফিলিস্তিনি জনগণের নামে, গাজার প্রতিরোধ গোষ্ঠীর নামে এসেছি সমবেদনা জানাতে।’ এ সময় তিনি রমজানের সময় তেহরানে রাইসির সাথে তার সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেন। নামাজে জানাজায় বিভিন্ন দেশের নেতা, রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরাও অংশ নেন। নামাজে জানাজায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ছাড়াও ইরাকি প্রধানমন্ত্রী আল-সুদানি, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ, রাশিয়ান প্রতিনিধি, আফগানিস্তান থেকে তালেবানের প্রতিনিধিরা তেহরানে উপস্থিত হন। বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাইসির জন্য স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইরান। এতে তুরস্ক, ইরাক, ভারত, রাশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার প্রতিনিধিরা ছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় রাইসির লাশ দাফনের জন্য তার নিজ শহর মাশহাদে পাঠানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার মাশহাদে ইমাম রেজার মাজারে দাফন করা হবে রাইসিকে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান, প্রতি বছর লক্ষাধিক দর্শনার্থী এখানে ভ্রমণে আসে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত অন্য কর্মকর্তাদের লাশ দাফনের জন্য নিজ নিজ শহরে পাঠানো হবে।
প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু এক বিরাট ক্ষতি : পুতিন
আনাদোলুতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুকে ‘বিরাট ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি রাইসিকে খুব নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ব্যক্তি হিসেবেও উল্লেøখ করেন। এ ছাড়া রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন রুশ এই প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইরানের পরলোকগত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মর্মান্তিক মৃত্যুকে ‘বিরাট ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেছেন। মঙ্গলবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বা স্টেট ডুমার চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠকের সময় মস্কোর কাছে রাইসিকে ‘খুব নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী একজন মানুষ’ বলেও বর্ণনা করেন পুতিন।
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাইসির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্টেট ডুমার চেয়ারম্যান ভলোদিন। এর আগে মঙ্গলবার তার সাথে বৈঠকের সময় মর্মান্তিক এই ট্র্যাজেডির জন্য তার আন্তরিক সমবেদনা পৌঁছে দিতে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভলোদিনকে আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু ইরান ও ইরানি জনগণের জন্য প্রথম এবং সর্বাগ্রে বিরাট বড় ক্ষতি। তিনি একজন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য অংশীদার, একজন স্পষ্টভাষী, আত্মবিশ্বাসী মানুষ ছিলেন যিনি তার জাতীয় স্বার্থে ছিলেন অনুপ্রাণিত। অবশ্যই তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী একজন মানুষ ছিলেন এবং তার সাথে কাজ করাটা ছিল আনন্দের। আমি কেবল এটাই মনে রাখতাম যে, আমরা যদি কোনো বিষয়ে একমত হই তবে আমরা সর্বদা নিশ্চিত থাকতে পারি সেসব চুক্তি পূরণ হবে।’
পুতিন আরো বলেন, মস্কো তেহরানের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত কারণ দেশটি রাইসি প্রশাসনের অধীনে রয়েছে এবং রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক যাতে এইভাবে অব্যাহত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু করবে মস্কো। তিনি ভলোদিনকে বলেন, ‘দয়া করে, আমার এই কথাগুলো ইরানের নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিন।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে বিধ্বস্ত হয়। দীর্ঘ তল্লøাশি অভিযান শেষে সোমবার পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকা থেকে ওই হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হুসেইন কোলিভান্দ সোমবার জানান, হেলিকপ্টারটির সব যাত্রী এবং ক্রু দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার চীনের : আল আরাবিয়া জানিয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর মন্তব্যের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীন ইরানের সাথে কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার, অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। মঙ্গলবার সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের এক বৈঠকে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহদি সাফারির সঙ্গে আলোচনায় ওয়াং ই এ মন্তব্য করেন।
ওয়াং বলেন, ইরান অসাধারণ নেতাদের হারিয়েছে এবং চীন ভালো বন্ধু ও অংশীদারদের হারিয়েছে। রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে চীন দৃঢ়ভাবে ইরানি বন্ধুদের পাশে রয়েছে। আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় রোববার দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের একটি বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি, আব্দুল্লাহিয়ানসহ তাদের সাথে থাকা অন্য কর্মকর্তারা। মাঝ আকাশে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। পরে সবার লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা