জাবালিয়ার কিছু অংশ গুঁড়িয়ে রাফার আরো ভেতরে ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০৫
- নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫,৭০৯ এবং আহত ৭৯,৯৯০
- গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান সহস্রাধিক ইসরাইলি শিক্ষাবিদের
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় ট্যাংক দিয়ে ও আকাশ থেকে বোমা হামলা চালিয়ে কিছু আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তারা এক হাসপাতালেও আঘাত হেনেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর একইদিন গত মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত পাঁচজনকে হত্যা করেছে। রয়টার্স ও আলজাজিরা।
রাফা শহরের আরো ভেতরে ঢুকেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ড্রোন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান এবং ট্যাংক থেকে বুধবার রাতে সেখানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে সেনারা। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের ফের সংগঠিত হওয়া রোধ করার নামে চলতি মাসে শহরটিতে নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরাইল। চলতি মাসে গাজা ভূখণ্ডের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে ইসরাইলের নির্বিচার হামলার কারণে নতুন করে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। হানাদার বাহিনী গাজায় ত্রাণ প্রবেশ কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করে রাখায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়তে শুরু করেছে।
১৯৪৯ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকালে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাবালিয়ায় বিস্তৃত শরণার্থী শিবির গড়ে তোলা হয়। ৭৫ বছর পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী সেই শরণার্থী শিবিরের কেন্দ্রীয় বাজারের কাছে বিভিন্ন সম্পত্তি ও দোকানপাট বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কয়েক মাস আগে ইসরাইল জানিয়েছিল, তারা জাবালিয়া শরণার্থী শিবির হামাস মুক্ত করেছে; কিন্তু হামাসের যোদ্ধারা এখানে ফের মিলিত হচ্ছে দাবি করে দুই সপ্তাহ আগে তারা ফের শিবিরটিতে প্রবেশ করে।
গাজাজুড়ে গত কয়েকদিনের অভিযানের পর্যালোচনায় ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, এ সময় তারা গাজাজুড়ে ‘শত্রুর প্রায় ৭০টি লক্ষ্যস্থল’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এসব ‘লক্ষ্যস্থলের’ মধ্যে সামরিক কম্পাউন্ড, অস্ত্র গুদামের স্থান, ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ও পর্যবেক্ষণ পোস্ট আছে বলে দাবি করেছে তারা। ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, জাবালিয়ার কামাল আদাওয়ান হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, এতে আতঙ্কিত কর্মীরা তড়িঘড়ি করে রোগীদের বেডে ও স্ট্রেচারে তুলে বাইরে ধ্বংসস্তূপ ছাড়ানো রাস্তায় চলে যায়।
হাসপাতালটির প্রধান হুসেইন আবু সাফিয়া বলেন, “প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশপথে আঘাত হানে। আমরা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছি এমন সময় দ্বিতীয়টি আঘাত হানে তারপর কাছেই তৃতীয়টি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, ইসরাইলি ট্যাংকগুলো তিন দিন ধরে জাবালিয়ার আল আওদা হাসপাতালও অবরোধ করে রেখেছে। জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস জানিয়েছেন, উত্তর গাজার অসুস্থ ও আহতদের বিকল্প উপায় ফুরিয়ে যাচ্ছে। উত্তর গাজার এ দু’টি হাসপাতালই শুধু সচল ছিল।
দক্ষিণে ইসরাইলি বিমান হামলায় খান ইউনুসে তিনটি শিশু ও রাফায় তিনটি শিশুসহ পাঁচ বেসামরিক নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, গাজায় প্রায় আট মাস ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৫৫০০ ছাড়িয়ে গেছে ও আরো ১০ হাজার নিখোঁজ রয়েছেন।
রাফার আরো ভেতরে ইসরাইল : রাফা শহরের আরো ভেতরে ঢুকেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ফিলিরিয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরটিতে কয়েক লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে সেখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনী আবারও নতুন করে হামলা শুরু করায় রাফা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এমনকি গাজায় ত্রাণ প্রবেশের প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে সেনারা। সেখানে ব্যাপক প্রাণহানি ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরাইল বলেছে, তারা বিশ্বাস করে, রাফায় হামাস যোদ্ধাদের শেষ ব্যাটালিয়নটি আশ্রয় নিচ্ছে। তাই সেখানে হামলা চালানো ছাড়া তাদের আর কোনও বিকল্প নেই। স্থানীয় বাসিন্দা ও সশস্ত্র যোদ্ধারা বলেছেন, রাফায় একটি নতুন অবস্থান নিয়েছে ইসরাইলি ট্যাংকগুলো। আগের বারের চেয়ে সেগুলো এবার শহরটির আরো পশ্চিমে মিসরের সাথে গাজার দক্ষিণ সীমান্তের কাছে ইবনা এলাকায় অবস্থান করছে। তবে পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ের কারণে এখনো রাফাহ প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি সেনারা।
হামাসের সামরিক শাখা বলেছে, মিসরের সীমান্তবর্তী বেড়া বরাবর একটি গেটে ট্যাংকবিধ্বংসী রকেট দিয়ে ইসরাইলের দু’টি সাঁজোয়া যানে আঘাতে করেছে তারা। ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ড্রোন ব্যবহার করে ইবনা শহরতলিতে গুলি চালাচ্ছে ইসরাইল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা একটি চ্যাট অ্যাপে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ড্রোন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান এবং ট্যাংক থেকে রাতভর গোলাগুলি চলেছে।’
রাফা শহরের হামলার বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স। এর আগে, একটি ব্রিফিংয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছিল, ইসরাইলি সেনারা গাজা উপত্যকাজুড়ে ‘প্রায় ৭০টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’কে ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে সামরিক স্থাপনা, অস্ত্রের গুদাম, ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং পর্যবেক্ষণ পোস্ট ছিল। অভিযানে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবিও করেছিল তারা।
গাজায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে : গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৫,৭০৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৯,৯৯০ জন আহত হয়েছে বলে উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো বলেছে যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় আরো ৬২ জন নিহত এবং ১৩৮ জন আহত হয়েছে।
যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান সহস্রাধিক ইসরাইলি শিক্ষাবিদের : গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সহস্রাধিক ইসরাইলি শিক্ষাবিদ। তারা সম্মিলিতভাবে একটি পিটিশনে স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই আহ্বান জানান। ইসরাইলজুড়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদ এবং প্রশাসকরা একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে সরকারকে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার এবং হামাসের হাতে বন্দীদের ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়। আলজাজিরা জানায়, ‘ইসরাইলি সরকারকে যুদ্ধ বন্ধ করা ও বন্দীদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার আহ্বান’ শিরোনামের ওই পিটিশনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের সমাপ্তি এবং বন্দীদের প্রত্যাবর্তন ইসরাইলের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নৈতিক দায়িত্ব। স্বাক্ষরকারীরা আরো বলেন, এই যুদ্ধ ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করলেও প্রাথমিক এই উদ্দেশ্যটি ইতোমধ্যে অর্জন হয়ে গেছে। নেতৃত্বের রাজনৈতিক বেঁচে থাকার লক্ষ্য ছাড়া যুদ্ধ চালানোর অধিকার নেই।
এবার এপির কার্যালয়ে ইসরাইলের হানা : আলজাজিরার পর এবার ইসরাইলের রোষানলের কবলে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। প্রতিষ্ঠানটির দফতরে ঢুকে ক্যামেরা ও সম্প্রচার সরঞ্জাম জব্দ করেছেন ইসরাইলি কর্মকর্তারা। ইসরাইলি নতুন মিডিয়া আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ ইসরাইলের সেডরোতে গিয়ে বার্তা সংস্থাটির অফিসে ঢুকে সেগুলো জব্দ করেন তারা।
ইসরাইলি কর্মকর্তাদের দাবি, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে উত্তর গাজার একটি ফুটেজ সরবরাহের মাধ্যমে ইসরাইলের আইন লঙ্ঘন করেছে এপি। চলতি মাসের শুরুতে নতুন মিডিয়া আইন প্রয়োগ করে আলজাজিরাকে নিষিদ্ধ করে নেতানিয়াহু সরকার। দেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে এমন অভিযোগে সপ্তাহখানেক আগেই ইসরাইলে সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা। সম্প্রচার বন্ধের পর গণমাধ্যমটির দুটি দফতরেও অভিযান চালায় ইসরাইলি কর্মকর্তারা।
দফতরে অভিযান ও এমন পদক্ষেপে ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে এপি। বার্তা সংস্থাটি বলছে, সম্প্রতি অনুমোদন দেয়া গণমাধ্যম আইনের অপব্যবহার করছে ইসরাইলি সরকার। এপি জানায়, বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার গণমাধ্যম তাদের কাছ থেকে ফুটেজ নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে একটি আলজাজিরা। বিভিন্ন সময় তারাও এপি থেকে ফুটেজ নিয়ে ব্যবহার করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা