বারবার নীতি পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চায় এফবিসিসিআই- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৭ মে ২০২৪, ০০:০৫
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বারবার নীতি পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসায় ব্যয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন অবস্থায় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দেয়া হয়। নতুন সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ পদ্ধতি চালু করা হয়। চালু করা হয় স্মার্ট (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হার) রেফারেন্স রেট ব্যবস্থা। এর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশে উঠে যায়। কিন্তু এতেও আইএমএফের শর্ত পূরণ না হওয়ায় ব্যাংক ঋণের সুদহার স্মার্ট রেট ব্যবস্থা থেকে বের করে বাজারভিত্তিক করা হয়। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিসুদহারও বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদহার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। ব্যাংকভেদে ১৫ শতাংশের ওপরে উঠে যায় ঋণের সুদহার। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসায় ব্যয়। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকঋণের সুদহার সহনীয়পর্যায়ে নিয়ে আসতে গতকাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ বণিক সমিতি ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে জরুরী বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকেই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করার এক সপ্তাহ পরেই পরোক্ষভাবে সেখানে হস্তক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিলেন গভর্নর। সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশের ওপরে ঋণের সুদহার যাবে না বলে এফবিসিসিআইকে নিশ্চিত করেছেন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, একটা প্রজেক্ট করার সময় সুদের হার, বিনিময় হারসহ নানাবিধ চিন্তাভাবনা করে তারপর কাজ শুরু করি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুদিন পরই যদি নীতিতে পরিবর্তন আনে, তখন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। অবশ্যই বারবার নীতি পরিবর্তন হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুরোধ করেছি যাতে নীতিগুলো বারবার পরিবর্তন না করে। যাতে নীতিগুলো দীর্ঘমেয়াদি হয়। এতে আমরা আমাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করতে সহজ হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর এ বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হলেও এটাকে ১৪ শতাংশের উপরে যেতে দেয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। যাতে ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তেমন ব্যবস্থা নেয়া হবে ভবিষ্যতে। আমি মনে করি দেশের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সাথে সুদহারের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, ডলারের দাম একসাথে ৭ টাকার বাড়ার কারণে যে পরিমাণ ঋণ বেড়েছে সে পরিমাণ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ডলারের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া যাদের ঋণে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। তাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন গভর্নর। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলার মার্কেট স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছি না। এ দিকে ইডিএফ কমিয়ে তিন বিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প একটি তহবিল ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এখন ব্যবসায়ীরা ১১৭ টাকায় এলসি খুলতে পারছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়া হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি আরো বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কিছু কিছু গ্রাহকের একক গ্রহণসীমা অতিক্রম করেছে। বিষয়টি সমাধানে ব্যাংক এবং গ্রাহকভিত্তিক বিশেষ সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। ফান্ডেড এবং নন-ফান্ডেড মিলে ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ একজন গ্রাহক না পাওয়ার শর্ত থাকলেও এই পরিস্থিতিতে তাদের জন্য বিশেষ বিবেচনা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট (স্মার্ট) প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার জন্য ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় সুদভিত্তিক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু এখন এই নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পিছু হটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারণা করা হচ্ছে আইএমএফের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা