আইসিজেতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে শুনানি আজ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
- তেলআবিবকে আরো ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র
- রাফাহ ক্রসিং বন্ধে ইসরাইল দায়ী : মিসর
- আরো ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত রাফাহ ছেড়েছেন সাড়ে ৪ লাখ
রাফায় ইসরাইলের হামলার জবাবে নতুন করে জরুরি ব্যবস্থা নিতে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) আবেদন জানিয়েছে। এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে আজ বৃহস্পতি ও শুক্রবার। আদালতকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আলজাজিরা। এতে আরো বলা হয়, জানুয়ারিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিজেতে গণহত্যার অভিযোগে মামলা করে। সেই মামলা এখনো চলমান।
তারই অংশ হিসেবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন করে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যুক্ত হয়েছে মিসর, তুরস্ক ও কলম্বিয়া। ওদিকে বিশ্বনেতাদের সতর্কতাকে উপেক্ষা করে গাজায় নির্বিচারে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তারা নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে সোমবার দিবাগত রাতে যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা করেছে। এতে মধ্য গাজায় এই শরণার্থী শিবিরে শিশুসহ কমপক্ষে ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার উত্তরে ‘ইভাকুয়েটিং জোন’ এবং জাবালিয়ার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘিরে রেখেছে ইসরাইলি ট্যাংক, বুলডোজার ও সাঁজোয়া গাড়ি। এ অবস্থায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ইসরাইল। তিনি রাজধানী আঙ্কারায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা গণহত্যা। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারকে পদদলিত করছে ইসরাইল। রাফায় তাদের আগ্রাসন বন্ধে আরো একবার ব্যর্থ হয়েছে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। এ মাসের শুরুর দিকে আইসিজেতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যার অভিযোগে করা মামলায় তুরস্কের যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) বলেছে, রোববার থেকে তারা রাফাহ ইন্দোনেশিয়ান ফিল্ড হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ইসরাইলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এক বিবৃতিতে এমএসএফ বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বেসামরিক অবকাঠামো এবং মেডিক্যাল স্থাপনার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমিক হামলা দেখে আসছে এমএসএফ। এর পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু নতুন করে হামলা আসন্ন, তাই রাফাহ ইন্দোনেশিয়ান ফিল্ড হাসপাতাল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। ওই হাসপাতালে থাকা ২২ জন রোগীকে তারা অন্য স্থাপনাগুলোতে স্থানান্তর করেছে। কারণ তাদের আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছিল না এমএসএফ। এক্সে আলাদা এক পোস্টে তারা বলেছে, গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ১২টি স্বাস্থ্যবিষয়ক স্থাপনা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা। এসব স্থাপনায় সহিংস ২৬টি হামলা হয়েছে।
ইসরাইলকে আরো ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র : ইসরাইলকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। চলতি সপ্তাহে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনার কথা মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক কংগ্রেশনাল সহযোগী বিষয়টি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ইসরাইলি অভিযান নিয়ে মার্কিন বিরোধিতা ও চাপের মধ্যেই দেশটিকে অস্ত্র সরবরাহ উদ্যোগ নিচ্ছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন।
গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যবহারের উদ্বেগ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে দুই হাজার পাউন্ড ওজনের বোমার একটি চালান আটকে দেয়ার পর এই অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানা গেল। এসব বোমায় গাজায় বেসামরিক প্রাণহানি আরো বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। এই উদ্যোগ ও পরে রাফায় অভিযান নিয়ে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর এটিই ছিল ইসরাইলের লাঘাম টেনে ধরতে বাইডেনের প্রথম প্রকাশ্য পদক্ষেপ। কিন্তু ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা প্রমাণ করছে বিস্তৃত আকারে ইসরাইলে অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ করতে চায় না ওয়াশিংটন। সোমবার বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা ইসরাইলে সামরিক সহযোগিতা সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি। আমরা নিশ্চিত করব যাতে ইসরাইল পুরোপুরি তা পায়। অপর এক মার্কিন কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেছেন, সূচি অনুসারে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইসরাইলে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহে বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনার খবর প্রকাশ করেছিল।
রাফাহ ক্রসিং বন্ধে ইসরাইল দায়ী : মিসর
এ দিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের রাফাহ ক্রসিং বন্ধের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে মিসর। দেশটি বলছে, রাফাহ ক্রসিং বন্ধের জন্য একমাত্র ইসরাইল দায়ী। এর আগে গাজার লাইফ লাইন বলে পরিচিত এই ক্রসিং বন্ধের জন্য মিসরকে অভিযুক্ত করেছিল ইসরাইল। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
রাফাহ এলাকায় সামরিক অভিযানের মধ্যে দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করার জন্য মঙ্গলবার ইসরাইলকে দায়ী করেছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিরা যে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, তার জন্য একমাত্র ইসরাইল দায়ী।’ এর আগে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ মঙ্গলবার রাফাহ ক্রসিংয়ের মাধ্যমে গাজায় সাহায্য সরবরাহে বাধা দেয়ার জন্য মিসরকে দায়ী করেন। এ সময় রাফাহ ক্রসিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা সরবরাহ আবার চালু করার আহ্বানও জানান তিনি। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শোকরি ইসরাইলের ‘তথ্য বিকৃত করা এবং দায়িত্ব এড়ানোর’ নীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একই সাথে শোকরি ‘রাফাহ ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশের ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ, টার্মিনালের আশপাশে সামরিক অভিযান এবং ত্রাণ কর্মী ও ট্রাকচালকদের সম্ভাব্য বিপদকে’ রাফাহ ক্রসিং দিয়ে সাহায্য সরবরাহে ব্যর্থতার প্রধান কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ‘গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন মানবিক সঙ্কটের জন্য মিসরের ওপর দায়ভার চাপানোর জন্য ইসরাইলের মরিয়া প্রচেষ্টার নিন্দাও করেছেন।’ এর আগে গত সপ্তাহে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একাংশ খালি করে দিতে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি নির্দেশ দেয় ইসরাইল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্দেশের পর রাফাহর পূর্বাঞ্চল থেকে বহু মানুষ সরে যেতে শুরু করেন। পরে গাজার সাথে মিসরের সীমান্তে অবস্থিত রাফাহ ক্রসিংয়ের দখল নেয় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রাফাহ ক্রসিংয়ের এক পাশে গাজা, অন্য পাশে মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। ইসরাইলের আগ্রাসন শুরুর আগ পর্যন্ত এই সীমান্তপথটিকে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘লাইফ লাইন’ বলে বিবেচনা করা হতো।
আরো ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত, রাফাহ ছেড়েছেন সাড়ে ৪ লাখ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলায় এক দিনে আরো ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ‘লাইফলাইন’ হিসেবে পরিচিত রাফাহ শহরে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের পর সাড়ে লাখ ফিলিস্তিনি সেখান থেকে সরে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। খবর আলজাজিরার। খবরে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা বহু সপ্তাহের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী আক্রমণের পর সাড়ে চার লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি রাফাহ শহর থেকে অন্যত্র সরে গেছেন। আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহত ৭৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এ গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। জাতিসঙ্ঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২২ লাখ অধিবাসী দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে বিশ্বকে জবাবদিহি করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা