দেশ ছাড়ল টাইগাররা
- ক্রীড়া প্রতিবেদক
- ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
আধুনিক ক্রিকেটে টি-২০ মানেই যেন ব্যাটিং ঝড়। ব্যাটিং নৈপুণ্যেই বেশির ভাগ ম্যাচেই গড়ে দেয় পার্থক্য। তবে বোলারদের অবদানও নেহায়েত কম না। কয়েকটি ভালো ওভারও যেকোনো সময় বদলে দিতে ম্যাচের মোড়। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ইঙ্গিতও সে দিকেই। টি-২০তে ম্যাচ জয়ে বোলারদের ওপরই তাই বেশি আস্থা রাখছেন তিনি।
১৯তম দল হিসেবে টি-২০ বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের দল ঘোষণার পর গতকাল সকাল থেকেই মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে শান্ত-হৃদয়রা করেন অনুশীলন। নিজেদের মাঠে শেষ সময়ের প্রস্তুতি শেষে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ফটোসেশনে অংশ নেন টিম ম্যানেজমেন্টসহ বিশ্বকাপ দলের সদস্যরা। পরে বিশ্বকাপে দল ও নিজেদের ভাবনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন দলের অধিনায়ক ও প্রধান কোচ।
সদ্য শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজেও বোলাররা ছিলেন বেশ ছন্দে। বিশেষ করে পেসাররা। এর মধ্যে ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে তাসকিন আহমেদ হন সিরিজ সেরা। তবে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে তার পাওয়া চোটে প্রাথমিকভাবে জাগিয়েছিল শঙ্কা। তবে তা কাটিয়ে সহঅধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ দলে জায়গা মেলে এই ডানহাতি পেসারের।
সব মিলিয়ে বোলারদের এই ছন্দ ধরেই বিশ্বকাপ জয়ের পথ খুঁজতে চান শান্ত। সেটিকে মানছেন দলের শক্তির জায়গা হিসেবেও। সংবাদ সম্মেলনে বোলারদের নিয়ে শান্ত বলেন, আমাদের বোলিং ডিপার্টমেন্ট আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। টি-২০তে আমি মনে করি বোলাররা ম্যাচ জেতায়। এটা আমাদের শক্তির জায়গা।
তাসকিন, শরিফুল, মোস্তাফিজ বাদেও বিশ্বকাপ দলে চতুর্থ পেসার হিসেবে জায়গা মিলেছে তানজিম সাকিবের। এ ছাড়া রিজার্ভে আছেন আরেক পেসার হাসান। এতে পুরো এক পেসার হাব নিয়েই বিশ্বকাপে পাড়ি জমাবে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে ১৮ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাইফ উদ্দিনকে ফেরানো হলেও বিশ্ব মঞ্চে তার চেয়ে সাকিব, অর্থাৎ মূল পেসারেই ভরসা রাখছে দল। সেই প্রসঙ্গে শান্তও বলেন, সাইফউদ্দিনের চেয়ে (তানজিম) সাকিবকে নিয়ে আমরা বেশি আত্মবিশ্বাসী।
উইকেটের দায় দেখছেন শান্ত : বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে না পারা জিম্বাবুয়ের সাথে রানের ফোয়ারা ছোটাবেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এমন প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হওয়া সিরিজে তিনটি ম্যাচে আগে ব্যাটিং করেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রান করতে পেরেছিল ১৬৫। তবে দলের অধিনায়কের সাথে নির্ভরশীল ব্যাটারদের একজন লিটন দাসের ফর্মই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা এখন। তাদের দু’জনের দুর্দশাময় সিরিজ কাটানোর পেছনে অবশ্য উইকেটেরও দায় দেখছেন নাজমুল হাসান শান্ত।
তার ও লিটনের অফফর্ম নিয়ে বলেন, এটা অনেকে মনে করতে পারে অজুহাত। এই যে (জিম্বাবুয়ে) সিরিজটা আমরা খেললাম, আমার মনে হয় না খুব ভালো উইকেটে খেলেছি আমরা, এমনকি চট্টগ্রামে দুই তিনটা ম্যাচ কিন্তু আমরা বৃষ্টির কারণে অন এন্ড অফ ব্যাটিং করা লাগছে। হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা রানে থাকলে দলের জন্য বাড়তি একটা সুবিধা এবং আমাদের উচিত প্রতিদিন রান করা। কিছুটা দায় উইকেটেরও আছে।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাঁহাতি এই ব্যাটার ৫ ম্যাচে ৮১ রানের বেশি করতে পারেননি। তার স্ট্রাইক রেটও ছিল ১০৪ এর কাছাকাছি। আর লিটন সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে এক শর কম স্ট্রাইক রেটে ৩৬ রান করেছিলেন, পরের দুই ম্যাচে জায়গা পাননি একাদশে। কিন্তু বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তাকে রাখার পেছনের কারণ হিসেবে শান্ত বলেন, লিটন আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। যদিও কয়েকটা সিরিজ ভালো যায়নি। এটা আমি বিশ্বাস করি এটা হতে পারে। শেষ মুহূর্তে আমরা কেউই চাইনি নতুন একটা খেলোয়াড় দলে চলে আসুক। এরকম বড় টুর্নামেন্টের আগে তার জন্য হয়তো কঠিন হবে। এ জন্য আমরা অভিজ্ঞতাকে সেখানে মূল্য দিয়েছি। আমি আশা করি লিটন ভালো করবে।
২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপে ১১৪.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেও ৩৬ গড়ে শান্ত রান করেছিলেন ১৮০ রান। এবার অফফর্ম সাথে নিয়ে আরেক বিশ্বকাপে গেলেও তাতে কামব্যাকের গল্পই লেখার আশা শান্তর, আমার শেষ বিশ্বকাপটায় ভালো স্মৃতি ছিল। আমার মনে হয় ওখান থেকেই ফিরে আসাটা হয়েছিল। এবার আমি বলব যে আমি ব্যাটিং নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত, অনেক বেশি চিন্তা করছি তা না। আমি কঠোর পরিশ্রম ও উন্নতির জায়গা নিয়ে অনুশীলনে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আত্মবিশ্বাসী ভালোভাবে ফিরে আসব।
রিয়াদের ফেরা তরুণদের অনুপ্রেরণা : টি-২০ বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে খেলা মাত্র দু’জন ক্রিকেটারকেই দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ানে। রোহিত শর্মা ও সাকিব আল হাসানের সাথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরও নাম থাকতে পারত। কিন্তু এর আগে সব আসরে অংশ নেয়া মাহমুদুল্লাহর যে জায়গাই হয়নি ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপে।
২০২১ বিশ্বকাপের অধিনায়ক যখন ঘরে বসে দেখছিলেন বাংলাদেশকে, ক্যারিয়ারের শেষ বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। সেখান থেকেই যেভাবে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এবার ২০২৪ টি-২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নিলেন, তার ফিরে আসার সেই গল্প থেকে এখনকার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তরুণদের অনুপ্রেরণা নিতেই বললেন। ফিরে আসাকে শক্তিশালী বলে দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তার ব্যাটিংয়ের ধরন পরিবর্তনের জন্যও করলেন প্রশংসা।
গতকাল দেশ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল বলেন, রিয়াদ ভাই যেভাবে ফিরে এলেন, এবং সবথেকে বড় কথা উনি এখন যেভাবে খেলছে। উনার যে দায়িত্ব আছে, তা যেভাবে তিনি পালন করছেন, দল অনেক দূরে এগিয়ে যাচ্ছে। ৫, ৬ নাম্বারে ব্যাটিং করছেন। ফিনিশিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বাড়তি একটা সুযোগ যে আমরা ভালো স্কোর দাঁড় করাব। তরুণদের জন্য অবশ্যই অনুপ্রেরণার জায়গা এটা, তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে এ রকম একটা পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসা যায়।
ফিরে আসার পর মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিংয়ের ধরনেও পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। আগ্রাসনের মাত্রা বাড়িয়ে খেলতে দেখা যাচ্ছে তাকে। ২০২২ সালের এশিয়া কাপের পর দীর্ঘদিন টি-২০ দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। এ বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই ফিরেছিলেন আবার। এরপর ৫ ইনিংসে ব্যাট করে ১৪৩ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার, স্ট্রাইক রেট ছিল তার প্রায় ১৪৯। ব্যাটিং এপ্রোচে বদলের কথা উল্লেখ করে দলে তার ভূমিকা নিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, সে নিয়মিত খেলছে কিন্তু তার ফিরে আসা ছিল বেশ শক্তিশালী। সাম্প্রতিককালে সে তার সেরা খেলাটা খেলছে। সে অনেক পরিবর্তন এনেছে যেভাবে সে তার ব্যাটিং এপ্রোচ করত। সে ভালো ফর্মে আছে। তার ভূমিকা মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করাই হবে, সম্ভবত মিডল অর্ডারে আক্রমণের ভূমিকায় থাকবে ফিনিশারের পাশাপাশি। যে ভূমিকাটায় সে দারুণ করেছে বিগত সময়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা