১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
প্রত্যেকের চোখে আনন্দাশ্রু

চট্টগ্রাম বন্দরে স্বজনদের সাথে ২৩ নাবিকের আবেগঘন মিলন

এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকরা জাহাজ থেকে নামার আগে বন্দর জেটিতে স্বজনদের ব্যাকুল অপেক্ষা : নয়া দিগন্ত -

দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় পর স্বজনদের মাঝে ফিরেছেন সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ২৩ নাবিক। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে পৌঁছে স্বজনদের বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা। এ সময় তাদের চোখে পানি থাকলেও মুখে ছিল আনন্দের জোয়ার। বিকেল ৪টার দিকে তাদের বহন করা লাইটারেজ জাহাজ এমভি জাহান মণি-৩ এনসিটি জেটিতে নোঙর করার পর অপেক্ষমাণ স্বজনদের মাঝে একে একে নেমে আসেন এসব নাবিক। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে তাদের দেয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা।
এনসিটি জেটিতে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন নাবিকদের বিপুলসংখ্যক স্বজন, জাহাজের মালিক পক্ষসহ বন্দর কর্মকর্তারা।
জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশে পৌঁছে বন্দরের জেটিতে নামার পর নাবিকদের স্বজনরা তাদের জড়িয়ে ধরেন। এ সময় অধিকাংশ নাবিক ও স্বজনের চোখে ছিল আবেগের কান্না আর মুখে ছিল আনন্দের হাসি। এতে এনসিটি এলাকায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও সচিব মো: ওমর ফারুক, কেএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সরওয়ার জাহান রোকন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বন্দরে পৌঁছে জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, সোমালিয়ার দস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আজ আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা ২৩ নাবিকই পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের সরকার কৌশলগতভাবে সবার সাথে যোগাযোগ করেছেন। আমি বলেছিলাম বিদেশী নৌ-বাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারো প্রাণ না যায় বা জাহাজের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। আমরা সবাই সুস্থ ও অক্ষতভাবে ফিরতে পেরেছি, পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি। এ এমন অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন রশিদ বলেন, প্রথমদিন যখন আমরা দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হলাম, তখন সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সব কিছু অতি দ্রুত ঘটেছে। দস্যুরা স্পিডবোটে এসে জাহাজে উঠে ব্রিজে চলে আসে। মৃত্যুর হুমকি ছিল জানিয়ে ক্যাপ্টেন বলেন, আমাদের নাবিকদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করছিল। আমিও জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। মনে ভয় ছিল, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করে, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখি।
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার মো: আতিক উল্লাহ খান বলেন, বিভৎস দিন থেকে আলোর দিনে ফিরেছি। দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা আর মনে করতে চাই না। ট্রমা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। আপনারা দোয়া করবেন।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় কুতুবদিয়া অ্যানকারেজ এরিয়ায় নোঙর করে এমভি আব্দুল্লাহ। ২৩ নাবিককে নিয়ে লাইটার জাহাজটি গতকাল বেলা ১১টার দিকে কুতুবদিয়া থেকে রওনা হয়। জাহাজটির দায়িত্ব নিতে নাবিকদের নতুন একটি দল সোমবার রাতেই জাহাজে পৌঁছান।
মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা পরিবহন করে আমিরাত যাওয়ার সময় কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ৩২ দিন পর গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি মুক্ত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement