নির্বাচন-পরবর্তী রাজনীতি ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা
ডোনাল্ড লুর সাথে নাগরিক সমাজের বৈঠক- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৫ মে ২০২৪, ০০:৪০, আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ০১:০৮
দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। গতকাল সকালে কলম্বো থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম নেতা, শ্রমিকনেতা, জলবায়ুকর্মী, মানবাধিকারকর্মীদের সাথে ডোনাল্ড লু বৈঠক করেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ সেন্টার ফর উইমেন ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার, মানবাধিকারকর্মী নুর খান, চাকমা সার্কেলের রানি ও মানবাধিকারকর্মী ইয়ান ইয়ান, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্দোলনের সংগঠক সোহানুর রহমান এবং তরুণ সংগঠক মাহমুদা আক্তার।
মতবিনিময় সভা শেষে সোহানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় স্থান পেয়েছে জলবায়ু অভিযোজন। ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সুরক্ষার বার্তা দিয়েছেন। অ্যাক্টিভিজমের পাশাপাশি উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে তরুণদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ডোনাল্ড লু নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন, নাগরিক সমাজ কোন পরিস্থিতিতে কাজ করছে ইত্যাদি। তখন ডোনাল্ড লুকে জানানো হয়, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সামগ্রিকভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে।
আলোচনায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পরবর্তী সময়ে প্রণয়ন করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গও এসেছে। এ বিষয়ে শোনার পর ডোনাল্ড লু নিজের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছিল। নির্বাচন হয়ে গেছে, সরকার তার মতো করে কাজও করছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে চাপ কেন? এমনটা আমরা আশা করিনি। এটা উদ্বেগের।
শ্রম আইনের সংস্কার ও তৈরী পোশাকশিল্পের কর্মীদের বেতন নিয়ে আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছিল, সেগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কেও ডোনাল্ড লু জানতে চেয়েছেন।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যা এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা প্রায় সবাই ফিলিস্তিন পরিস্থিতির নিন্দা জানান এবং এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করেন। পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে আয়োজিত বিক্ষোভ দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাথতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন। এতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবাহান ও ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সালমান এফ রহমান বলেন, নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো ভালো করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের আগে ভুল বোঝাবুঝির প্রসঙ্গ এ সময় আসেনি। ডোনাল্ড লু পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আস্থার জায়গাটা আবারো ফিরিয়ে আনতে চায়। আমরাও বলেছি যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভালো সম্পর্ক এবং আস্থা বাংলাদেশও ফিরিয়ে আনতে চায়।
সফরের দ্বিতীয় দিনে ডোনাল্ড লু আজ বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পরদিন সকালে তিনি ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
বাংলাদেশ সফরে জলবায়ু সঙ্কট, অর্থনৈতিক বন্ধন গভীরতর করাসহ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সহযোগিতা নিয়ে ডোনাল্ড লু আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এ সফরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তাসহ সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা হবে। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ও র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যা ব) ওপর দেশটির আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে ডোনাল্ড লুর সাথে আলোচনা হবে। কেননা এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে রেখাপাত করেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক না করা নিয়ে প্রশ্ন : গত সোমবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনো বৈঠক না করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একজন সাংবাদিকর প্রশ্ন করেন, ঢাকায় ডোনাল্ড লুর আগের সফরগুলোতে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেছেন। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম হওয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ রয়েছে কি না? যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবস্থান পরিবর্তন করেছে?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, তা নয়। আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা কারো সাথে দেখা করবেন কি না তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে টানা সফর করছেন। তিনি এ সব দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা এবং মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রদর্শন করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। লু ঢাকা সফরের সময় সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্যদের সাথে বৈঠকে জলবায়ু সঙ্কট, অর্থনৈতিক বন্ধন গভীরতর করাসহ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা