বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, ১ পাইলট নিহত
ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ১০ মে ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ০০:১৮
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আসিম জাওয়াদ (৩৩) নামে এক পাইলট মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সংঘটিত এ ঘটনায় আহত উইং কমান্ডার সোহান বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ সময় বিমানটির পেছন দিকে আগুন ধরে যায়। পরে এটি বিধ্বস্ত হয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের বিপরীতে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে যায়। আগুন ধরে যাওয়ার পর যুদ্ধবিমানটির দুই পাইলট প্যারাসুট নিয়ে বিমান থেকে লাফিয়ে নদীতে পড়েন। বিধ্বস্ত বিমানটি নদীতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় জেলেরা তাদের উদ্ধার করে। পরে বন্দরের টাগ বোট ও অ্যাম্বুলেন্স শিপ ঘটনাস্থল থেকে তাদের বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ জানান, বিমানটিতে দু’জন পাইলট ছিলেন, উইং কমান্ডার সোহান ও স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ। দুর্ঘটনার সময় তারা প্যারাস্যুটের সাহায্যে নিচে নেমে আসেন।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানা নয়া দিগন্তকে জানান, বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে এলে তাদের উদ্ধার করে বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসিম জাওয়াদের মৃত্যু হয়। অন্যজনের অবস্থা স্থিতিশীল।
কর্ণফুলীতে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান উদ্ধার : চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকায় বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানটি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে বিমানটি উদ্ধার করে নৌবাহিনী। চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বিমান উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা পোস্ট।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে বিমানবাহিনীর ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আকাশ থেকে বিমানটি কর্ণফুলী নদীতে ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর বেলা ১১টা থেকে বিমানটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে নৌবাহিনী।
মূলত যুদ্ধবিমানটি কী কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে, এটিতে কী ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল এবং বন্দর চ্যানেলে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নৌবাহিনী বিমানটি উদ্ধারে তৎপরতা চালায়। এক্ষেত্রে নৌবাহিনীর একাধিক ডুবুরি টিম এবং একাধিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন জাহাজ দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। একপর্যায়ে বাহিনীটি বিমান উদ্ধারে সফল হয়।
এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের বিমানবাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার পর উইং কমান্ডার মো: সোহান হাসান খান এবং স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। বিমানের দুইজন বৈমানিককে বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার করা হয়। স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য যে, বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে বৈমানিকদ্বয় অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে বিমানটিকে বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা : মানিকগঞ্জ থেকে মো: শাহানুর ইসলাম জানান, নিহত পাইলট আসিম জাওয়াদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। তবে তার পরিবার জেলা শহরের গোল্ডেন টাওয়ারে নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের আহাজারি দেখা গেছে।
জাওয়াদের চাকরির কারণে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান চট্টগ্রামে থাকতেন। তার বাবা ডা: আমান উল্লাহ আর মা নিলুফা আক্তার খানম সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন। জাওয়াদের স্ত্রীর নাম অন্তরা আক্তার। অন্তরার বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।
নিহতের মামা মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সুরুষ খান বলেন, আসিম জাওয়াদের ছোটবেলা থেকে বিমানবাহিনীতে যোগ দেবে এমন স্বপ্ন ছিল। তার স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সের মেয়ে আয়জা, এক বছরের ছেলে রয়েছে। তিনি বলেন, জাওয়াদ পরিবারের একমাত্র সন্তান। ছেলের মৃত্যুর খবরে আমার বোন নিলুফা পাগলপ্রায়। আমার বোন আসলে এখন বাকরুদ্ধ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা