১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাফায় ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জামায়াতের

-

ফিলিস্তিনের রাফায় দখলদার ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ১৯৪৮ সাল থেকেই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ঘরবাড়ি ও ভূমি জবরদখল করে তাদের উৎখাত করে দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছে। দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনে বর্বর গণহত্যা ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। পুরো ফিলিস্তিনে গত বছর ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার বেসামরিক সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৮০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। বর্বর ইসরাইলিদের হাত থেকে হাসপাতাল, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, আশ্রয়কেন্দ্র কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। গাজায় এ পর্যন্ত সাতটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এবং এসব গণকবর থেকে ৫২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের ওপর অবৈধ ইসরাইলি বাহিনীর এসব আগ্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা মানবতার দুশমন ইসরাইলি বাহিনীর এসব বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, গাজায় হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত রাফাতে ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুত নিরীহ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। খাদ্য ও পানির অভাব দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই অমানবিক সঙ্কটের মধ্যেই দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ভারী ট্যাংক নিয়ে রাফাহ ক্রসিংসহ কিছু এলাকা দখল করে হামলা শুরু করেছে এবং গাজায় খাদ্যসামগ্রী প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় রাফায় পুরোমাত্রায় স্থল অভিযান চালালে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে এবং মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে, যা সামাল দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ইসরাইলিরা অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক আইন-কানুন, রীতিনীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ এবং জাতিসঙ্ঘ দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন থামাতে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাসীর কাছে এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ফিলিস্তিন সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।

ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা ওআইসি, জাতিসঙ্ঘ, শান্তিকামী গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
মাওলানা নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের আহ্বান : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের জনগণের নিকট অতি পরিচিত একটি নাম, একজন আলেমে দ্বীন ও ইসলামী চিন্তাবিদ। সততা, যোগ্যতা, উদারতা, বিনয় ও নম্রতা তাঁকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি তাঁর নিজ এলাকা থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে তাঁর গঠনমূলক ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে তাঁর বক্তব্য ছিল দিকনির্দেশনামূলক। ইসলামী শিক্ষার প্রসারে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কওমি মাদরাসার শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল স্মরণীয়। তিনি সততা, যোগ্যতা, দক্ষতার সাথে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিল্পখাত একটি লাভজনক খাতে পরিণত হয়।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশকে একটি ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’


আরো সংবাদ



premium cement