মার্কিন শিক্ষার্থীদের ফিলিস্তিনি আন্দোলন সমর্থনে ঢাবির সংহতি সমাবেশ
- ঢাবি প্রতিবেদক
- ০৬ মে ২০২৪, ০০:০৫
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চালানো ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংসতার প্রতিবাদে চলা মার্কিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মুহাম্মদ নাসরুল্লাহ। তিনি বলেন, মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনে আমি এসেছি। সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়াতে আমি এখানে এসেছি। ফিলিস্তিনের গাজায় যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা অতীতের যেকোনো নির্মমতাকে হার মানিয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কখনোই এত সীমিত সময়ে এত বেশি নারী শিশু মারা যায়নি। ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরাইল কখনো এত আগ্রাসী হতো না। তাদের নিবৃত্ত করতে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদে বারবার প্রস্তাব তোলা হয়েছে। যা আটকে দিয়েছে আমেরিকা।
নেতানিয়াহু এবং বাইডেন উভয়কে যুদ্ধাপরাধী দাবি করে তিনি আরো বলেন, আমরা মানবতার দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। আন্দোলন শুরু হয়েছে সারা বিশ্বে। আমরা রাষ্ট্রপ্রধানদের ওপর নির্ভর করি না। আমরা নির্ভর করি সাধারণ মানুষের ওপর। আজকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। সারা পৃথিবীকে সেটা আলোড়িত করবে। এই আন্দোলনেই শেষ হবে নেতানিয়াহুর সব চক্রান্ত, বাইডেনের সব চক্রান্ত, পশ্চিম ইউরোপের চক্রান্ত।
সংহতি সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের জন্য এখানে আসিনি। আমরা এসেছি মানবতার জন্য। পৃথিবীর ইতিহাসে এত বেশি সুসজ্জিত কোনো গণহত্যা আজ পর্যন্ত ঘটতে দেখিনি আমরা। তারপরও বিশ্বব্যবস্থাকে এই গণহত্যার কোনো সমাধান আমরা করতে দেখি না। আমরা এই বিশ্বব্যবস্থা এবং আমেরিকার বর্তমান অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত। যেসব আর্মিরা গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে অনলাইনে। আমি অবাক হই, মস্তিষ্কে ঠিক কতটা ঘৃণা জমা করলে এই ধরনের অমানবিক কাজ করা যায়। আমি মানবতা নিয়ে শঙ্কিত। বাংলাদেশে যেন এমন ঘৃণার চাষ না হয়। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, আমরা সবসময় ফিলিস্তিনের সাথে ছিলাম, আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার মা, ভাই, বোন শহীদ হয়েছেন ইসরাইলি আগ্রাসনে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে লড়াই হচ্ছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন লড়াই নয়। এ লড়াই সবার লড়াই। যেসব কোম্পানি ইসরাইলকে সমর্থন করে, আমরা সেসব কোম্পানিকে বয়কট করার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে চাই। আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্ন দেখছি।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬ শত জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন যাদের কোনো ধরনের অপরাধ ছিল না। এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি নারী শহীদ হয়েছেন এবং অগণিত নারী আহত হয়েছেন। ৩০টি হাসপাতাল ধ্বংস করা হয়েছে। ৮৭ শতাংশ স্কুলে বোম্বিং করা হয়েছ যেখানে দুই শতাধিক স্কুলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। আমার সংশয় হচ্ছে, এই ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে পচা লাশ খুঁজে বের করলে আগামী দুই দশকেও শেষ হবে কি-না। এক লাখ ৫৫ হাজার গর্ভবতী নারী বেঁচে থাকার অধিকার পাচ্ছেন না, সুপেয় পানি পাচ্ছেন না। এরই প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট শুরু করেছে। নারী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এতে সমর্থন দিতে এসেছি।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্যা সি-প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর-অকুপেশন নো মোর’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা