গণতন্ত্র ধ্বংস করা সরকারের প্রধান অপরাধ
সমাবেশে মির্জা ফখরুল- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ মে ২০২৪, ০১:৩১, আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ০১:৩৭
গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা সরকারের প্রধান অপরাধ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনাদের অপরাধ হচ্ছে আপনারা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছেন। বর্তমান সরকারের কৌশল একটু ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আওয়ামী লীগ আগেকার দিনের মতো সংসদে বিল পাস করে বাকশাল করতে চায় না, তারা গণতন্ত্রের একটি লেবাস রেখে দিয়ে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে, জনগণকে দমন করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। গত বুধবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক দল আয়োজিত র্যালিপূর্ব সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বেলা আড়াইটার আগে থেকে সমাবেশে মাইকে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। পাঁচটি পিকআপ ভ্যানের ওপর স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে নেতারা চেয়ারে বসেন। সমবেত নেতাকর্মী ও অনুসারীরা মাথায় ক্যাপ, হাতে লাল পতাকাসহ নানা ব্যানার, ফেস্টুন ব্যবহার করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলা ‘অতি ডান, অতি বাম সরকার পতনের জন্য এক হয়েছে কিভাবে, তিনি তা বুঝতে পারেন না’ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুঃখ হয়, কষ্ট হয় যখন আমরা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীকে বলতে দেখি, ‘কী এমন হয়েছে। কী ঘটেছে, বুঝতে পারছেন না’ সমস্যাটা এখানেই। বুঝতে পারছেন না অথবা বুঝেও না বুঝার ভান করেন। আজকে কেবল অতি বাম, অতি ডান নয়, আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যপন্থী কেবল নয়, সব মানুষ, যেকোনো পন্থারই হোক মানুষ বুঝতে পারছে তাদের ন্যূনতম অধিকারটুকুও নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরেকটা কথা বলেছেন। বলেছেন, ‘আমাদের অপরাধ?’ আপনাদের অপরাধ হচ্ছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছেন। জনগণের ন্যূনতম অধিকার, প্রতি পাঁচ বছর পর তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবে সেই অধিকারটুকুও আপনারা কেড়ে নিয়েছেন। এখন নির্বাচনকে এমন একটা তামাশায় পরিণত করেছেন, আপনারাই বলেন ডামি প্রার্থী।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেক ত্যাগ আমরা স্বীকার করেছি। অনেক ভাই গুম খুন হয়েছেন। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। আমাদের নেত্রী এখনো কারাগারে বন্দী। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জোর পাঁয়তারা তারা করছে।
তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে মহাসচিব বলেন, এতে প্রমাণ করে বিএনপি শুধু নয়, এই দেশের সব গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতাকামী মানুষ জেগে উঠেছে। আবার জেগে উঠবে সবাই। আমি অনেকবার বলেছি বিএনপি হচ্ছে সেই ফিনিক্স পাখির মতো, যে ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার জেগে ওঠে। বাধা সরিয়ে জেগে উঠে আন্দোলন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের কথা বলে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে সব সময় আমরা কখনোই অতীতেও পরাজিত হইনি। আমরা পরাজিত হবো না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনব। অনেকে বলে, এটা বিএনপির সংগ্রাম। কিন্তু এটা বিএনপির সংগ্রাম নয়, এটা এই দেশের মানুষের অস্তিত্বের সংগ্রাম, অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। সে অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আরো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।
আমাদের চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের জেগে উঠতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই গণতন্ত্রের, শ্রমিকের, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মানুষের মুক্তি, শ্রমিকের মুক্তি অবৈধ সরকারের অপসারণের ওপর নিহিত রয়েছে। অনেকেই বলতে পারেন, বিএনপি পারেনি। বিএনপি পারবে না। কিন্তু বিএনপির চেষ্টার কমতি করেনি। সরকার অন্যায়ভাবে, নিষ্ঠুরভাবে আন্দোলন দমন করেছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য, ড. আব্দুল মঈন খান অভিযোগ করে বলেন, সরকার দেশের সব শিল্প ধ্বংস করে ফেলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সও। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
সমাবেশ শেষে একটি র্যালি নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয়নগর মোড় হয়ে নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়। র্যালিটি মালিবাগ পর্যন্ত আসার পূর্বনির্ধারিত সূচি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থান নেয়ায় সামনে যেতে পারেনি।
শ্রমিক দলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্য রাখার কথা থাকলেও তিনি আসেননি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা