১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
উপজেলায় কঠোর বিএনপি

৬৪ জনকে শোকজ নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে বহিষ্কার

-


দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে অংশ নেয়া ৬৪ নেতাকে শোকজ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ২১ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন রয়েছেন। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে বা কেউ জবাব না দিলে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে পাঠানো শোকজের চিঠিতে তাদের ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা জানান, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে দলটি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নেয়া পদধারী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। ৬৪ পদধারী নেতার মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে ৩৮ নেতাকে শোকজের চিঠি পাঠানো হয়। গত রাত পর্যন্ত আরো ২৬ নেতাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ৩৪টি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির পদধারী নেতারা মাঠে আছেন। এর মধ্যে ৮ উপজেলায় ১৯ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন ৪২ জন, আগেই ১৫ নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। দল থেকে পূর্বে বহিষ্কৃত এমন প্রার্থী ৪ জন, এর মধ্যে আবার একজন দল পরির্বতন করেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে প্রার্থী হয়েছেন ২৪টি উপজেলায়। এর মধ্যে ৪ উপজেলায় ১০ নেতা ভোটে রয়েছেন। মোট ৩০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ৯ নেতা প্রত্যাহার করে নেন। ভাইস-চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ১৯টি উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন ২০ নেতা। এর মধ্যে ১ জন প্রত্যাহার করেছেন, এখনও ভোটে আছেন ১৯ নেতা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত শোকজ চিঠি ৬৪ নেতাকেই দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপির নেতা হিসেবে আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আপনার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে ।'

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শোকজের মাধ্যমে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নির্বাচন থেকে সরে না আসলে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই তাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করতে চায় বিএনপি। এর মাধ্যমে দলটি তৃণমূলকে কঠোর বার্তা দিতে চায়, যাতে করে বাকি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেউ প্রার্থী না হয়।
ইউপি ও পৌর ভোটে যাওয়া ৫ নেতাকে বহিষ্কার : এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আরো ৫ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
গতকাল বুধবার বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন জলঢাকা পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নীলফামারী জেলাধীন জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেটকে (কমেট চৌধুরী) বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাদেক আলী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ১২ নং চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, সদস্য জহুরুল আলম এবং কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁ উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ঈদগাঁ উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক হান্নান মিয়াকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement