১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উপজেলা নির্বাচনে এমপিরা মানছেন না দলীয় সিদ্ধান্ত

-

- বেলকুচিতে এমপির প্রতিষ্ঠানের স্টাফ চেয়ারম্যান প্রার্থী
- সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপির চাচাতো ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী
- বিধি লঙ্ঘনের জন্য ইসির হস্তক্ষেপ কামনা অন্য প্রার্থীদের

এবার ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে এমপির কোনো আত্মীয় কিংবা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এমন কাউকে প্রার্থী না করার। কিন্তু সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালীসহ দেশের অন্যান্য এলাকার এমপিরা পরিবারের সদস্যকে প্রার্থী করে আলোচনা-সমালোচনায় পড়েছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগেই এই উত্তাপ ইস্যুতে স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়েছে সাধারণ ভোটার ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মধ্যে। নেপথ্যের মূল কারণ একজন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় এমপির সরাসরি হস্তক্ষেপে। বেলকুচি উপজেলায় এমপির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্টাফ চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া ইস্যুতে সেখানে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও অন্য প্রার্থীরা। আর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের আপন চাচাতো ভাই সদর উপজেলা থেকে মো: রাশেদ ইউসুফ জুয়েল। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় এমপি কোনো প্রার্থীর পক্ষে দৃশ্যমান হয়ে কাজ না করার বিধি-নিষেধ রয়েছে।

এদিকে ভিন্ন কৌশলের কারণে সমালোচনার মুখে এখন সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মমিন মণ্ডল।
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় এমপি কোনো প্রার্থীর পক্ষে দৃশ্যমান হয়ে কাজ না করার বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ সত্ত্বেও ইসির আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বীরদর্পে ভোটারদের তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নানা-ধরনের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা ইসিতেও জানানো হয়েছে।

নির্বাচনী এলাকার ভোটার ও সাধারণ মানুষের সাথে আলাপে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে প্রার্থী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম। এই ব্যক্তি বর্তমান এমপি মমিন মণ্ডলের আস্থাভাজন ও তার মালিকানাধীন মণ্ডল গ্রুপের পোশাকশিল্পের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) পদে কর্মরত। এলাকায় গুঞ্জন ডালপালা মেলে নিজ আধিপত্য ধরে রাখতে তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে প্রার্থী করেছেন এমপি নিজেই। নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করলে কেন্দ্রের ও নেত্রীর বিরাগভাজন হতে পারেন, তাই কৌশলী পথ হিসেবে অনুগত ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট নিজ এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে এমপি আবদুল মমিন মণ্ডল নিজেই।

এদিকে, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা প্রতিকার চেয়ে গত সোমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ও স্থানীয় ত্যাগী নেতারা এ কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আব্দুল মমিন মণ্ডল এমপি নিজের পক্ষের নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যেই আমিনুল ইসলামের পক্ষে নামতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে মোতাবেক এমপির ব্যক্তিগত সহকারীসহ সমর্থিত নেতাকর্মীরা আমিনুল ইসলামের পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে নির্বাচনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকছে না বলেও প্রতিপক্ষের অন্যান্য প্রার্থীদের অভিযোগ।

আর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের আপন চাচাতো ভাই মো: রাশেদ ইউসুফ জুয়েল। তিনি নেতাকর্মীদের জানান দিচ্ছেন যে, তানভীর শাকিল জয় তাকে সমর্থন দিয়েছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের প্রচার-প্রচারণা। এতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এজন্য উপজেলায় সাধারণ নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি জুয়েলের বাবা আবু ইউসুফ সূর্য সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি এমপি তানভীর শাকিল জয়ের কথা বলে তার ছেলের জন্য কাজ করতে নেতাকর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। এই নির্বাচনে এমপি তানভীর শাকিল জয় তার আপন চাচাতো ভাই মো: রাশেদ ইউসুফ জুয়েলকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। নেতাকর্মীদের তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন এমপি। আর এমপির ভাই হওয়ার কারণে জুয়েল প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন ও সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস জানান, প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না এমপিরা। তাদের ঘনিষ্ঠজন ও আত্মীয়দের নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এই নির্দেশনার সম্পূর্ণ বিপরীতে চলছে বেলকুচি। এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কারো সাথে পরামর্শ না করে নিজের কোম্পানির একজন চাকরিজীবীকে প্রার্থী করেছেন। তার পক্ষে কাজ করতে নেতাকর্মীদের চাপ প্রয়োগ করছেন। তিনি বলেন, বেলকুচির কোনো আওয়ামী লীগ নেতা বা কর্মীর ওপর ভরসা নেই মমিন মণ্ডলের। যার প্রমাণ আওয়ামী লীগের শত শত নেতা থাকতে তাদের পরিবর্তে নিজের বেতনভুক্ত ব্যক্তিকে উপজেলা চেয়ারম্যান করার অপচেষ্টা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না। মৌখিকভাবে বিষয়টি আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগও দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সিরাজগঞ্জ এনায়েতপুর থানা ইউনিটের অর্থ সম্পাদক ও বেলকুচি উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির বলেন, এবার নির্বাচনে জামায়াত ও বিএনপির বলা যায় কোনো প্রার্থী নেই। সব প্রার্থীই দলীয়। তাই এমপির কারো পক্ষে না থেকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের আগেই দেখছি, প্রতিপক্ষ একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নেমে পড়েছেন। এটা দুঃখজনক। আমি নিজ দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ সুষ্ঠু ভোটের জন্য এমপির নিরপেক্ষ থাকা জরুরি।

অপর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের ব্যক্তিগত এই নম্বরে ফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর এমপি আবদুল মমিন মণ্ডলের সাথে যোগাযোগের জন্য দেয়া নম্বরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement