১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উপজেলায়ও ভোটবিমুখতা দেখাতে চায় বিএনপি

দল পুনর্গঠনে সব জেলায় প্রতিনিধি সভা করার চিন্তা
-

জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও ভোটবিমুখতার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে চায় বিএনপি। এজন্য আসন্ন এ নির্বাচন দলটি শুধু বর্জন করেই বসে থাকবে না, বরং বর্তমান সরকারের অধীনে যেকোনো সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয় সে বিষয়টির ক্যাম্পেইন করারও পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট তৈরি করা হচ্ছে। একইসাথে সারা দেশে পথসভা, মতবিনিময় সভার মতো কর্মসূচি নেয়া হতে পারে। এছাড়া দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে আগামী মাসগুলোতে জেলা প্রতিনিধি সভা বা বর্ধিত সভা করার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনসহ দল পুনর্গঠন নিয়ে নানামুখী আলোচনা হয়েছে। গতকালও এই বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নেতারা দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

জানা গেছে, বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে হাইকমান্ডকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিএনপি মনে করে, বিগত ১০ বছর ধরে দেশবাসীর মধ্যে এমনিতেই নির্বাচনকেন্দ্রিক ভোটবিমুখতা রয়েছে। দলটির দাবি, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করেছে। উপজেলা নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটবে।
জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি- তা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। এখন এই নির্বাচন বর্জনের জন্য আমরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করব। এজন্য প্রচারপত্র বিলি, সভা- সমাবেশ ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাব। আমরা চাই, জনগণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করুক।

এদিকে উপজেলা পরিষদের প্রথম দফার নির্বাচনে যারা দলীয় পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে অংশ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও প্রার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। জানানো হয়, ভোটে গেলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। জেলা নেতৃবৃন্দ এবং সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে দলের পদধারী ও সাবেক নেতাদের ইতোমধ্যে কেন্দ্রের এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় এই কঠোর নির্দেশনার পাশাপাশি ভোট থেকে সরে যেতে দলীয় প্রার্থীদের অনুরোধ জানানোসহ নানাভাবে বোঝানোও হচ্ছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, দলের পদধারী ও সাবেক যেসব নেতা প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের কী পরিণতি হয়, সেটা তাদেরকে বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, বাকিরাও যথাসময়ে প্রত্যাহার করবে, নির্বাচনে বিএনপির কেউ থাকবে না। কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে কেউ ভোটে থাকলে দল তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেবে।
উপজেলা পরিষদের পরের ধাপগুলোর নির্বাচনেও যাতে দলের কোনো নেতা অংশগ্রহণ না করে এবং বর্জনের নির্দেশনা ঠিকভাবে পৌঁছানো যায়, জেলা নেতৃবৃন্দ এবং সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপির প্রত্যাশা, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দলগতভাবে তারা উপজেলা নির্বাচন বর্জনে সক্ষম হবেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ এপ্রিলের পর থেকে বিএনপির জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার এই ক্যাম্পেইন শুরু হতে পারে। সেখানে ভোট বর্জনের কারণগুলো লিখিত ও মৌখিকভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরবে দলটি। আর লিফলেটে ওই বিষয়টি ছাড়াও একদফা দাবি এবং সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়টিও তুলে ধরা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনের পর সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট দিতে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বেশ আগেই সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্বাচনের পর রাজপথের বিগত আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা না আসার একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন করে বিএনপি। সে অনুযায়ী, অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ এবং বিগত আন্দোলনে রাজপথে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে না পারা জেলা কমিটি ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ধরনের ২০-২৫টির মতো জেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের ভার্চুয়াল বৈঠকেও সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করা দরকার বলে অভিমত দেন।

এর অংশ হিসেবে ধাপে ধাপে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি কিংবা বর্ধিত সভার প্রস্তাব দেন তারা। তাদের পরামর্শ, যেসব এলাকায় উপজেলা নির্বাচন থাকবে-সেগুলো বাদ দিয়ে অন্য জেলায় এসব প্রতিনিধি সভা হতে পারে। এছাড়া বৈঠকে জনস্বার্থ ইস্যু এবং নতুন নির্বাচন দাবিতে কোনো কর্মসূচি দেয়া যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হয়। ঢাকায় একটি সমাবেশের প্রস্তাব আসলেও এই মুহূর্তে তীব্র দাপদাহের কারণে তার বিরোধিতাও করেন অনেকে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, তখন কর্মসূচির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার পরামর্শ দেন তারা।

জানা গেছে, আগামীতে সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের আরো একাধিক বৈঠক হবে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সাংগঠনিক সম্পাদকদের এসব প্রস্তাবনা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল