১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক

প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা। ছবিটি রাজধানীর মহাখালীস্থ আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের : নয়া দিগন্ত -


তীব্র তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বর এবং হিটস্ট্রোকে। এই গরমে বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি ভুগছে। কয়েক দিন ধরে চলমান তাপপ্রবাহে বেড়েছে চরম অস্বস্তি। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় প্রচুর ঘাম হচ্ছে এবং এতে শরীরে দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা। ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য সুপরিচিত আইসিডিডিআরবির সব হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। এই হাসপাতালের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগীই শিশু, যারা ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।

এদিকে অব্যাহত তাপদাহের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এর মধ্যে টানা তিন দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। জেলায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে বছরের এই সময়ে এমনিতেই চরম গরম থাকে। বৃষ্টি কম হওয়ায় বেড়ে যায় তাপমাত্রা। বাড়তে বাড়তে তাপ উঠে যায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। কোনো কোনো সময় তাপমাত্রা আরো বেশি উঠে যায়। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, ‘বৈশাখ মাসের এ সময় বাতাসে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে তা দিয়ে মেঘ তৈরি হয় না বলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতও হয় না। বৃষ্টি হতে না পারলে বেড়ে যায় গরম।’ তিনি বলেন, এ সময় বঙ্গোপসাগর থেকে পর্যাপ্ত জলীয়বাষ্প আসে না, যেটুকু জলীয়বাষ্প আসে তা থেকে বৃষ্টি হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয় না। তবে মাঝে মধ্যে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে কিছু বৃষ্টি হলেও তা গরম কমাতে তেমন সহায়তা করে না। ঘণ্টা কয়েক পরই আবার বেড়ে যায়।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলমান এই তাপপ্রবাহ আরো কমপক্ষে এক সপ্তাহ থাকার আশঙ্কা আছে। এর মধ্যে হয়তো কিছুটা কমতেও পারে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হলে। তবে দেশব্যাপী ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আগামী কয়েক দিনে নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবারও দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। থার্মোমিটারের কাঁটায় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠলেও মানুষের মধ্যে তাপমাত্রার অনুভূতি কিন্তু ৪০ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আরব দেশের মরুভূমিতে এ সময়ে এ ধরনের তাপমাত্রা বিরাজ করে থাকে। ঢাকা শহরের তাপমাত্রা যশোরের মতো না হলেও এখানে গরমের অনুভূতি অনেক বেশি। ঢাকা শহরে গতকাল ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ। এটা আবহাওয়ার আগারগাঁও অফিসের তাপমাত্রা। ঢাকার আরো কিছু জায়গা আছে যেখানে দুপুরবেলা কাঠফাটা রোদ ওঠে। রাস্তার পিচ নরম হয়ে যায়। যেমন মতিঝিল ও এর আশপাশের তাপমাত্রা এমন হয়ে থাকে। গরমে মাথা বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে।

দেশের এই তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক মানুষ। অনেককেই গরমের মধ্যে কাজ করতে করতে হঠাৎ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যেতে দেখা যায়। অথবা দেখা যায়, গরম সহ্য করতে না পেরে মাথায় পানি ঢালতে। এটা হিটস্ট্রোকের একটা পর্যায় বলে জানিয়েছেন ডা: কামরুজ্জামান খান। আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক এই গরমে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে বেশি করে পানি পান করতে আহবান জানিয়েছেন দেশবাসীকে। রোদে না থেকে ছায়ায় অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বেশি করে পানি পান করলে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, পানি পানের সময় অবশ্যই তা দেখে নিতে হবে বিশুদ্ধ কি না। বিশুদ্ধ পানি পান করতে না পারলে ডায়রিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আইসিডিডিআরবি মহাখালী হাসপাতালে এখন প্রায় প্রতিদিনই সাড়ে চার শ’ থেকে পাঁচ শ’র মতো ডায়রিয়া আক্রান্ত ভর্তি হচ্ছে বলে আইসিডিডিআরবির সিনিয়র ম্যানেজার পিআর তারিফুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ডা: কামরুজ্জামান খান বলেন, এ সময়ে পানিতে জীবাণুর ঘনত্ব বেড়ে যায় বলে, অল্প পরিমাণ অনিরাপদ পানি পান করলেই ডায়রিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ সময় কখনো বাসি ও গন্ধ হয়ে যাওয়া খাবার খাওয়া যাবে না। ডায়রিয়া হলেই খাবার স্যালাইন পানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও বিভিন্ন ধরনের খনিজসমৃদ্ধ লবণ বেরিয়ে পড়ে। ফলে ডায়রিয়া আক্রান্তরা দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। সে কারণে ডায়রিয়ায় ঘন ঘন খাবার স্যালাইন পানি করলে লবণের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। একই সাথে পানিসহ খনিজলবণসমৃদ্ধ স্যালাইন হিটস্ট্রোক প্রতিরোধেও কাজ করে। তিনি বলেন, খাবার স্যালাইন প্যাকেট যেভাবে নির্দেশনা থাকে সেভাবে গুলিয়ে পান করতে। একটি প্যাকেট পুরোপুরি আধা লিটার স্বাভাবিক পানিতে গুলিয়ে পান করতে হবে। পানি কম-বেশি হলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতে পারে। তখন তা হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।

চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, টানা তিন দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বইছে চুয়াডাঙ্গায়। তাপদাহের কারণে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত তীব্র তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং।
গত ১৬ এ্রপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ১৭ এ্রপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস চুয়াডাঙ্গা ও সর্বশেষ গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে। টানা তীব্র তাপদাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষ। অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে প্রাণিকুল। হাসপাতালে বাড়ছে পানিবাহিত ও গরমজনিত রোগীর সংখ্যা। তীব্র তাপদাহে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাপমাত্রার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আরো কয়েক দিন এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। এখনই বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও রাত ও দিনের তাপমাত্রার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। দিনের বেশির ভাগ সময় প্রখর তাপে উত্তপ্ত থাকছে জেলা। দিনে সাধারণ মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে। শ্রমজীবীরা বের হলেও ফাঁকা রাস্তায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement