১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
জাতিসঙ্ঘের হুঁশিয়ারি

দুর্ভিক্ষের গ্রাস আরো তীব্র হচ্ছে গাজায়

-


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে। এর সাথে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সঙ্কট। এমন অবস্থায় গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আরো তীব্র হওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা। এমনকি ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম শেষ করার জন্য প্রতারণামূলক প্রচারণা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির প্রধান। রয়টার্স ও আলজাজিরা।
খবরে বলা হয়েছে, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ গাজা উপত্যকাজুড়ে ‘তার গ্রাস আরো শক্ত করছে’ বলে জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান বুধবার সতর্ক করেছেন। একইসাথে গাজায় সাহায্য বিতরণে বাধা দেয়ার এবং ভূখণ্ডটিতে ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি ১৫ সদস্যের জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ‘আজ ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম শেষ করার জন্য একটি প্রতারণামূলক প্রচারণা চলছে, যার ওপর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার গুরুতর প্রভাব রয়েছে।’

১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি বা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কাজ পরিচালনা করা জাতিসঙ্ঘের বৃহত্তম সংস্থা। সংস্থাটি গাজা, পশ্চিমতীর, জর্দান, লেবানন এবং সিরিয়ার লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে। গাজার অভ্যন্তরে সংস্থাটির প্রায় ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে।
গাজায় ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে ছয় মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইউএনআরডব্লিউএকে ভূখণ্ডটিতে সাহায্য কার্যক্রমের মেরুদণ্ড হিসাবে বর্ণনা করেছেন। লাজারিনি বলেছেন, ‘গাজাজুড়ে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ তার কবলকে আরো শক্ত করছে। উত্তরাঞ্চলে শিশু এবং ছোট শিশুরা অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় মারা যেতে শুরু করেছে। সেখানে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অপেক্ষায় আছে মানুষ। কিন্তু ইউএনআরডব্লিউএকে সেখানে সাহায্য প্রদান এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।’ ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংস্থাটির কর্মীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছে। অবশ্য অভিযোগ সামনে আসার পরপরই লাজারিনি অভিযুক্ত কর্মীদের বরখাস্ত করেছেন এবং অভিযোগের বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে।
এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত পৃথক ইউএনআরডব্লিউএ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইলের হাতে আটক কিছু কর্মীকে মিথ্যা বলতে চাপ দিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। মূলত ইউএনআরডব্লিউএর সাথে হামাসের সম্পর্ক রয়েছে এবং সেই কর্মীরা গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে মিথ্যা বলতে চাপ দেয়া হয়। এছাড়া নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য ইউএনআরডব্লিউএর সক্ষমতার একটি স্বাধীন পর্যালোচনাও এই মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

উল্লেখ্য, ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর যুদ্ধ শুরুর কারণে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য ১৯৪৯ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে ইউএনআরডব্লিউএ তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন এবং তাদের অনেকে গাজায় পালিয়ে যান। লাজারিনি বলেন, ইউএনআরডব্লিউএকে (তার কার্যক্রম থেকে) সরিয়ে দেয়ার জন্য তারা এক ধরনের প্রচারণার মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল সরকার গাজায় ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম শেষ করতে চায়। উত্তরাঞ্চলে সাহায্য সরবরাহের জন্য সংস্থার অনুরোধ বারবার প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। আমাদের কর্মীদের ইসরাইল এবং মানবিক কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় বৈঠকে বাধা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আরো খারাপ বিষয় হচ্ছে- যুদ্ধের শুরু থেকে ইউএনআরডব্লিউএ প্রাঙ্গণ এবং কর্মীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭৮ ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী নিহত হয়েছেন।’

 

 


আরো সংবাদ



premium cement