১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

-

আজ ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও প্রবাসে অবস্থানরত সব বাংলাদেশীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল এক স্মরণীয় দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে ও গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে, যাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার পরিচালনার মাধ্যমে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ৩০ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও সমর্থনকারী সর্বস্তরের জনগণ ও বিদেশী বন্ধুদেরকে। বাণীতে তিনি আরো বলেন, মুজিবনগর সরকার গঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯৭০ এর নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক সরকার আত্মপ্রকাশ করে। মুজিবনগর সরকার গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহযোগিতার পথ প্রসারিত হয়। জনমত সৃষ্টি, শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা ও যুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণে মুজিবনগর সরকার যে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে তা বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবগাথার স্বাক্ষর হয়ে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী : দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’, বাঙালি জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা- শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ মোহাম্মদ মনসুর আলী এবং শহীদ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ অকুতোভয় বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি এবং দুই লাখ সম্ভ্রমহারা নির্যাতিত মা-বোনদের প্রতি। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ যথাক্রমে ১৬৭টি এবং ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য রেসকোর্স ময়দানে ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শপথ গ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা লিখে যান, যা ইপিআর ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম এবং টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর অব্যবহিত পরেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি গণপরিষদ গঠনপূর্বক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক ইতঃপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন ও অনুমোদনের মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকার একটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শতাধিক দেশী-বিদেশী সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। পাশাপাশি এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়। মেহেরপুর হয়ে উঠে অস্থায়ী সরকারের রাজধানী এবং সেদিন থেকে এ স্থানটি ‘মুজিবনগর’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, বাংলাদেশের সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে দাফতরিক কার্যক্রম চালাতে থাকে। পাকিস্তানি জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নারকীয় তাণ্ডবলীলা ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে নেয়া সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement