১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত

-


আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় নির্বাচনের মতোই স্থানীয় নির্বাচনেও স্ষ্ঠুু ভোটের পরিবেশ না থাকায় নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিও উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের মতোই কার্যত বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন হতে যাচ্ছে উপজেলা পর্যায়েও।
গত ২১ মার্চ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সারা দেশে ৪ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ২১ মে, তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ৫ জুন। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হয়। বর্তমানে দেশে ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে।
সাম্ভাব্য জয়ের পরিবেশ আছে এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিল জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এজন্য গণসংযোগ, সামাজিক কাজসহ নানাভাবে প্রচার-প্রচারণায় ছিলেন প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয়ভাবেও প্রার্থীদের অবস্থান মূল্যায়ন করা হচ্ছিল। তবে জাতীয় নির্বাচনের মতোই স্থানীয় নির্বাচনেও সুষ্ঠু পরিবেশ নেই- এমন পর্যালোচনা থেকে শেষমেষ উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। গত ১৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ নয়া দিগন্তকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আমাদের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই সরকার ভোটাধিকার হরণকারী সরকার। তাদের এ চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। তাদের প্রতি আস্থা আনার মতো কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের প্রার্থীরা যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আগের মতোই মামলা-গ্রেফতারসহ নানা ধরনের হয়রানিমূলক কাজ করতে পারে বলে আমরা আভাস পেয়েছি। এ ছাড়া আমাদের ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে তেমন পরিবেশও দেখা যাচ্ছে না। এ আস্থাহীনতার কারণেই আমরা প্রহসনের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিমও জামায়াতের উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এটা জনগণ বিশ্বাস করে না। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার যেসব কারণ ছিল এখনো সেসব কারণ বিদ্যমান রয়েছে। সরকারের প্রতি জনগণের এ আস্থাহীনতার কারণেই গত ১৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভায় উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। দল যে সিদ্ধান্ত নিবে নেতাকর্মীরা সেই অনুযায়ী কাজ করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরও অভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আসলে সরকারের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সুষ্ঠু ভোটের কোনো পরিবেশই আমরা দেখছি না। ফলে প্রার্থী দিয়েও কোনো লাভ নেই। স্থানীয় পর্যায়ে যারা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাদের এখন থেকেই হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে না। প্রশাসনও একই রকম। তাদের প্রতিও জনগণের কোনো আস্থা নেই। এজন্য উপজেলা নির্বাচনে আমাদের কোনো প্রার্থী থাকছেন না, আপাতত দলীয় সিদ্ধান্ত এটাই।

আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম রইসী জানিয়েছেন, সিরাজগঞ্জে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না জামায়াত। কেন্দ্রীয় জামায়াতের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিরোধী দলগুলোর সরকারবিরোধী অবস্থান অটুট ও আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সিরাজগঞ্জে আসন্ন ৮ মে’র উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকে বিরোধীদলীয় ঐক্য আরো দৃঢ় ও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যারের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। এর আগে সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলার পাঁচটিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিল স্থানীয় জামায়াত।
দলের একাধিক সূত্র মতে, নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছিল। সিরাজগঞ্জ সদর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, কামারখন্দ ও রায়গঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন ঠিকঠাক করে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। প্রার্থীরা গত রমজান মাসে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও প্রচার কাজও শুরু করেছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে হয়রানি নির্যাতন মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই হতাশাগ্রস্ত দলের নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তা করছিলেন সংগঠনটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। কোনো কোনো জায়গায় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মতো জনসমর্থন থাকলেও কেন্দ্রীয় জামায়াতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিরোধী জোটের আন্দোলন আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত থেকে নির্বাচন নিজ নিজ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন নেতারা।
সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শাহিনুর আলম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবে জামায়াত।’ সিরাজগঞ্জ সদর জামায়াত মনোনীত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো: শহীদুল ইসলাম তার হোয়াটসঅ্যাপ ক্ষুদে বার্তায় নির্বাচন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর সরকারবিরোধী অবস্থান অটুট ও আরো শক্তিশালী করার জন্য আসন্ন ৮ মে’র নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকে বিরোধীদলীয় ঐক্য আরো দৃঢ় ও শক্তিশালী হোক এই কামনা করি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জে তিনটি উপজেলায় ও দ্বিতীয় ধাপে দুটি উপজেলায় ২১ মে ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ছিল গত ১৫ এপ্রিল। অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪ উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে অংশ নেননি।


আরো সংবাদ



premium cement