১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সিয়াম সাধনার মাস

আলবিদা মাহে রমজান

-

রহমত-মাগফিরাত-নাজাতের মাস রমজানুল মোবারকের আজ ২৮ তারিখ। রমজানের শেষভাগের প্রতিটি ক্ষণই স্মরণ করিয়ে দেয় বহুগুণ ছওয়াব লাভের সুযোগ চলে যাচ্ছে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অবারিত ধায়ায় সিক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যারা হাতছাড়া করে ,তাদের জন্য দুঃখ করা ছাড়া কী থাকতে পারে? এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসের রাযিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, একদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে ওঠার সময়ে প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বললেন আমিন, দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রেখে আবার বললেন, আমিন। তৃতীয় সিঁড়িতেও পা রেখে বললেন, আমিন। এভাবে তিনবার আমিন বলার তাৎপর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন সাহাবায়ে কেরাম। জবাবে হজরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন জিবরাইল এসে আমাকে জানালেন, যে ব্যক্তি আপনার নাম শুনেও দুরুদ পাঠ করে না তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। আমি বললাম, আমিন। তিনি আবার বললেন, যে ব্যক্তি মাতা-পিতা উভয়কে কিংবা একজনকে বৃদ্ধবয়সে পেয়েও তাদের খেদমতের বদৌলতে জান্নাতের উপযুক্ত হতে পারল না, তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। আমি বললাম, আমিন। তারপর জিবরাইল বললেন, যে ব্যক্তি রমজান পেল। কিন্তু রমজান বিদায় হয়ে গেল এই অবস্থায় যে, সে ক্ষমা লাভ করতে পারল না, তার প্রতিও আল্লাহর অভিশাপ। আমি বললাম, আমিন।
এ হাদিস থেকে অনুমান করা যায় রমজানের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা নিতান্ত হতভাগা হওয়ার আলামত। অন্যদিকে যারা অবারিত রহমতের মাসটিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন, তাদের নিয়ে গর্ব করেন স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামিন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের শেষে মুমিন বান্দারা যখন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, আল্লাহ তায়ালা তখন ফেরেশতাদের বলেন, যে বান্দা তার কর্তব্য সম্পন্ন করে, তার প্রতিদান কী হওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, তার প্রতিদান পূর্ণ মাত্রায় দেয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর আরোপিত কর্তব্য পালন করে এখন আমার মহিমা ঘোষণা করতে করতে বের হয়েছে। আমি আমার মর্যাদা ও প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ ঘোষণা করেন, তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপরাশিকে ছাওয়াবে পরিণত করলাম। বায়হাকী শরীফ।
চান্দ্র মাস কোনোটি ৩০ দিনে আবার কোনোটি ২৯ দিনে হয়ে থাকে। কিন্তু ২৯ দিন হলেও ছাওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে না। অর্থাৎ যদি ৩০ দিন না হয় তাহলে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এ বছর রমজানের ছাওয়াব কম পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দু হাতের আঙুল তিনবার দেখিয়ে ইরশাদ করেন, মাস এরূপ, এরূপ ও এরূপ। অর্থাৎ পুরো ৩০ দিন। তিনি আবার দুই হাতের আঙুলগুলো তিনবার দেখিয়ে বললেন মাস এরূপ, এরূপ ও এরূপ। এবার তিনি একটি আঙুল বন্ধ রাখলেন। অর্থাৎ ২৯। তিনি বোঝাতে চাইলেন, চান্দ্রমাস কখনো ৩০ দিনে আবার কখনো ২৯ দিনে হয়। প্রকৃতপক্ষে একদিনের তারতম্যের কারণে পবিত্র মাসের ফজিলতের বা পুরস্কারের তারতম্য হবে না। কেননা মাসের দিনসংখ্যা কম বেশি হওয়া মানুষের হাতে নয়।
বিশ্বপ্রকৃতিতে আল্লাহর ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী অত্যন্ত মাহাত্ম্যের মাস রমজান কখনো ২৯ দিনে আবার কখনো ৩০ দিনে হবে। কিন্তু এ মাসে ইবাদতের বিনিময়ে মুমিন বান্দাদের জন্য যে প্রতিদান বরাদ্দ আছে তাতে ঘাটতি হবে না। পুরা একমাস রোজা পালনের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা যে পুরস্কার তার প্রিয় বান্দাদের জন্য ঘোষণা করেছেন তা যেমন ৩০ দিনের মাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি ২৯ দিনের মাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রতিটি ইবাদতের বদলা হিসেবে অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিদান লাভের মাস একদিন কম হলে মুমিন বান্দাদের দুঃখ হতে পারে। একদিন সময় বেশি পেলে আরো বেশি ছাওয়াব লাভ করা যেত বলে তারা মনে করতে পারেন। তাই হজরত নবী করীম সা. সান্ত্বনা দিয়েছেন ও আশ্বস্ত করেছেন যে, দিনের সংখ্যা কম হলেও পুরস্কার পুরো মাত্রায় পাওয়া যাবে- যদি ঈমান ও ইহতিসাবের শর্ত পূরণ করে মাহে রমজানের জন্য নির্ধারিত হুকুম পালন করা হয় । আল্লাহ দেখতে চান বান্দার নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা। রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা শুরু করতে হবে। আর শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা ক্ষান্ত করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার এই হুকুম পালন করা হয়েছে কি না সেটাই দেখার বিষয়। সিয়াম সাধনার মাস সফলভাবে সম্পন্ন করার শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়া একটি শুভ আলামত। তাই আল্লাহ তায়ালার অপার রহমত ও অনুগ্রহের অধিকারী হওয়ার এবং পাপরাশি থেকে পাকসাফ হয়ে ঈদের আনন্দ ভোগের সুসংবাদ ঘোষণা হতে থাকে রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে।


আরো সংবাদ



premium cement