১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইরানের হুমকিতে উচ্চ সতর্কতা ইসরাইলে

সেনাদের ছুটি স্থগিত, খোলা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রও
-


সিরিয়ায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ইরানের কয়েকজন সিনিয়র কমান্ডার নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটির সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা মোকাবেলায় ইসরাইল তার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব যোদ্ধা ইউনিটের ছুটি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। সেই সাথে জোরদার করেছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দ্য গার্ডিয়ান।
গত সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান থেকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি নিহত হন। হামলায় তিনি ছাড়া নিহত হন অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে ইরানের আরেক জেনারেলসহ ওই বাহিনীর ছয় সদস্য আছেন।

এই ঘটনার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, কূটনৈতিক মিশনে প্রকাশ্যে এ হামলার জন্য ইসরাইলকে ‘অনুশোচনা’ করিয়ে ছাড়বে তেহরান। ইরানের আধা সরকারি মেহের নিউজ এজেন্সির খবর অনুযায়ী, সম্ভাব্য এ হামলার পূর্বসতর্কতা হিসেবে তেলআবিবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আবার খুলে দেয়ার বিষয় বিবেচনা করছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বিবৃতিতে বলেছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সব যোদ্ধা ইউনিটের ছুটি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইডিএফ এখন যুদ্ধপরিস্থিতিতে আছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের বিষয়টি অব্যাহত মূল্যায়ন কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে।

ইসরাইল বলেছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সব যোদ্ধা ইউনিটের ছুটি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইডিএফ এখন যুদ্ধপরিস্থিতিতে আছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের বিষয়টি অব্যাহত মূল্যায়ন কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে।
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ইসরাইলের ওই আগ্রাসন সব কূটনীতিক নিয়মনীতি ও আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ও তার ইহুদিবাদী লক্ষ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।’ এ দিকে সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেন আকবরি বলেন, ইসরাইলের ওই হামলায় ইরানের জবাব হবে ‘একই মাত্রার ও একই রকম কঠোরতার’।

গতকাল শুক্রবার আল-কুদস দিবসে তেহরানে সিরিয়ার রাজধানীতে ইসরাইলি হামলা নিহত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) নিহত সদস্যদের নামাজে জানাজায় উপস্থিত হয়ে বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি ইসরাইলকে ইঙ্গিত করে বলেন, ইরানের সাহসী লোকজন অবশ্যই ইহুদিবাদী রাষ্ট্রকে শাস্তি দেবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে আল-কুদস দিবস পালন ও আইআরজিসির সদস্যদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ইসরাইল নিপাত যাক’ বলে স্লোগান দেন। আইআরজিসির নিহত সদস্যদের নামাজে জানাজায় উপস্থিত হয়ে মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, ‘পবিত্র ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে শত্রুদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের জবাব দেয়া হবে। আমাদের সাহসী সদস্যরা অবশ্যই ইহুদিবাদী রেজিমকে শাস্তি দেবে।’

কূটনৈতিক মিশনে হামলার ওই ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি ইসরাইল। তবে ইতোমধ্যে অগ্নিগর্ভ হয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি এ ঘটনায় আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইরানের হামলার হুমকির প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা প্রসঙ্গে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো ইয়াদলিন বলেন, ‘ইরান যদি কাল (আল কুদস দিবসে) হামলা চালায়, তাতে আমি বিস্মিত হবো না। আতঙ্কিত হবেন না। আশ্রয়কেন্দ্রে ছোটারও দরকার নেই।’
এ দিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের দিক থেকে হামলার ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে ইসরাইল। পাল্টা হুমকি দিয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যে আমাদের ক্ষতি করবে বা আমাদের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করবে, তাদেরও ক্ষতি করবে ইসরাইল।’

ইরানের প্রতি পাল্টা হুমকি ছুড়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই ইরান আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে সরাসরি ও মিত্রদের দিয়ে, দু’ভাবেই। ইসরাইলও তাই ইরান এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা ও আক্রমণাত্মক পন্থা অনুসরণ করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানি, কিভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়। আমরা তাই সহজ নীতিতে কাজ করব, আর সেটা হচ্ছে যারা আমাদের ক্ষতি করবে বা ক্ষতি করার পরিকল্পনা করবে আমরাও তাদের ক্ষতি করব।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবরটি দিয়েছে।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ সময় ইরানের হুমকি নিয়েও আলোচনা হয়। ওয়াশিংটন বলেছে, বাইডেন এ ব্যাপারে স্পষ্ট করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের হুমকির ব্যাপারে ইসরাইলকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইরানের হাতে বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। তারা সিরিয়া ও ইরাকে সশস্ত্র মিত্র গোষ্ঠীগুলো দিয়ে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা করতে পারে। হিজবুল্লাহর মাধ্যমে লেবানন সীমান্তে আঘাত হানতে পারে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর। আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকেও জোরদার করতে পারে ইরান। এতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়বে।

কিন্তু অনেক কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে চায় না ইরানের প্রভাবশালীরা। এর চেয়ে শত্রুদের ওপর বেছে বেছে কৌশলগত আক্রমণ চালানোর জন্য ইরান তাদের মিত্র বা প্রক্সি যোদ্ধাদের ব্যবহার করতেই বেশি পছন্দ করবে।
ইসরাইলে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে আরো বিস্তৃত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে অনামা ইরানি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া এড়াতে তেহরান ভেবেচিন্তে জবাব দেবে।

এ হামলাকে তেহরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ায় ইরানি স্বার্থের ওপর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইসরাইল এ হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। নেতানিয়াহু নিজের বক্তব্যের কোথাও এ হামলার কথা উল্লেখ করেননি।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন এবং তারা ইরানের হুমকি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইরানের হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাবে, আলোচনায় বাইডেন এটি পরিষ্কার করেছেন বলে ওয়াশিংটন জানিয়েছে। ইসরাইলের প্রধান বাণিজ্যিক নগরী তেলআবিবে থাকা রয়টার্সের সাংবাদিকরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে জিপিএস পরিষেবা বিঘ্ন ঘটছে, শত্রুর সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রকে বিভ্রান্ত করতে সম্ভবত এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement