১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রমজানের পরেও সিয়াম সাধনা

-

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ২৪ তারিখ। আর মাত্র পাঁচ বা ছয় দিন পর রমজান বিদায় নেবে। কিন্তু সিয়াম সাধনা শেষ হবে না রমজানের পরেও। বরং রমজানের পর থেকে শুরু হবে আরো দীর্ঘকালীন সিয়াম। বলা যেতে পারে শওয়ালের প্রথম তারিখ থেকে দিনব্যাপী নয়, সার্বক্ষণিক সিয়াম শুরু হবে।
রমজান মাসে প্রতিদিন সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে নিজেকে সংযত রাখতে হয়। কিন্তু সংযমের নির্দেশ মুমিনের প্রতি সারা জীবনের জন্য। একজন ব্যক্তি যখন কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করে মুসলমান হয়, তখনই তার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় পানাহারসহ সব ভোগ আস্বাদন নিয়ন্ত্রিত রাখা। এটাই তো ইসলামের বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীতে মানুষের বসবাস যেমন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, তেমনি তার দায়িত্ব নির্ধারিত। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন- ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’। অতএব দুনিয়াতে মানুষের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য আল্লাহর আদেশ ও আভিপ্রায়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। বস্তুত এরই নাম ঈমান ও ইসলাম। যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্যের শপথ করে নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে, তাদেরকে কিছু নিয়ম-কানুন মাথা পেতে নিতে হয়। জীবন নির্বাহের সুনির্দিষ্ট পথ বেয়ে থাকে চলতে হয়। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে তাকে অনুসরণ করতে হয় শরিয়ত নির্দেশিত নীতিমালা। ভোগ-আস্বাদন-বিনোদনেও তাকে সীমারেখা মেনে চলতে হয়। এভাবে নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখার সাধনা তাকে করে যেতে হয় সব সময়ের জন্য । এ ক্ষেত্রে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মেয়াদ সীমাবদ্ধ নেই। এমনকি পার্থিব জীবনে এ সিয়ামের ইফতারও নেই। যেদিন আহকামুল হাকেমিনের দরবারে হাজির হতে হবে, দুনিয়াবি জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণের হিসাব দিতে হবে, সেদিন সেই হিসাব-নিকাশে যদি উৎরে যাওয়া যায়, তাহলে রহমাতুল্লিল আলামিন হাউজে কাওছারের শরবত দিয়ে এসব রোজাদারকে ইফতার করাবেন। তারপর তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হবে জান্নাতে, যেখানে তাদের উপভোগের জন্য তৈরি রাখা হয়েছে এমন নেয়ামতরাজি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, এমনকি কোনো মানুষের কল্পনায়ও আসেনি। সেটাই তো প্রত্যেক মুমিনের কাম্য।
অতএব নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কামনা বাসনা ও ঝোঁক প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রাখা যদি সিয়াম বলে আখ্যায়িত হতে পারে, তাহলে রমজান মাস পার হলেও সেই সিয়ামের হুকুম বহাল থাকবে, থাকতে হবে মুমিনের জীবনে।
নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন নির্বাহ করা ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানাহার, নিছক উদরপূর্তি কিংবা রসনা তৃপ্তির জন্য আহার মুমিনের আদর্শ নয়। মুমিনের প্রতিটি কাজ হতে হবে উদ্দেশ্য ও ফলাফল বিবেচনায় রেখে। পার্থিব স্বার্থ ও সুবিধার চেয়ে আখেরাতের কল্যাণকে প্রধান্য দিতে হবে। মুমিনের আহারের বস্তু যেমন হালাল হওয়া জরুরি, তেমনি তা লাভ করার পদ্ধতিও বৈধ হওয়া অপরিহার্য। আহার গ্রহণের সময় অবলম্বন করতে হবে উন্নত শিষ্টাচার। একজন মুসলমানের জীবনে কোনো অহেতুক আচরণ হওয়া উচিত নয়। হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলাম গ্রহণের ফলে একজন ব্যক্তির জীবনে অন্যতম সৌন্দর্য আসে এই যে, সে অহেতুক কাজ পরিহার করে।
মোটকথা, অপরিহার্যতা থেকে নান্দনিকতা পর্যন্তসব ক্ষেত্র ও পর্যায়ের জন্য ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে। রমজানের ৩০ বা ২৯ দিনের পর পানাহার ও কামাচার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ রহিত হবে না। সব ক্ষেত্রেই তাকে আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই দীর্ঘ অনন্ত সিয়ামের জন্য প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারই পবিত্র মাসের শেষভাগে মুমিন বান্দাদের একান্ত কর্তব্য।


আরো সংবাদ



premium cement
উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে : নুর তারেক রহমানই আমাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন : কায়াস মাহমুদ বদলি হলেন সদরপুরের ইউএনও আল মামুন জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সিরিজে ফিরল আফগানিস্তান গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরো ২৫ প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম ক্লাবে কনসার্ট সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ করল ইংল্যান্ড ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে ডুয়েটের ১৪ শিক্ষার্থীর সাজা সিলেট যেন মিছিলের নগরী এক বছরের ব্যবধানে ফের অবসরে ইমাদ ওয়াসিম শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি চালু করতে হবে : শামসুল ইসলাম

সকল