১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উইকেট না হারালে শেষ বিকেলটা হতো বাংলাদেশের

-

বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের সূচনা করেছিল ওপেনার জাকির হাসান। জয়কে নিয়ে খেলছিলেন বেশ সাবলীল ভঙ্গিমায়। লঙ্কানদের গড়া বিশাল রান পাহাড়ের চাপে ভেঙে না পড়ে সহজাত ক্রিকেটটাই খেলতে চেয়েছিলেন দু’জনে। দেখে মনে হচ্ছিল শেষ বিকেলটা নিজেদের করে নেবেন দু’জনে। পরদিন অর্থাৎ আজ তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে পথ দেখাবেন। স্বপ্ন দেখাবেন ঘুরে দাঁড়ানোর। সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন লাহিরু। তার পেস এবং সুইংয়ে পরাস্ত জয়। লঙ্কানরা শেষ বিকেলে উইকেট পেয়ে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
শেষ বিকেলে বাংলাদেশের উইকেট হারানোর অভ্যাসটা পুরনো। নয় তো বিকেলটা হতে পারত বাংলাদেশের। দিনের মাত্র পাঁচ ওভার বাকি থাকতে লাহিরু কুমারের বলে স্টাম্প ভাঙল মাহমুদুল হাসান জয়ের (২১)। এই ভুলের পর তাইজুল ইসলাম নেমে অবশ্য আর কোনো ভুল করেননি। বাংলাদেশ দিনের খেলা শেষ করেছে এক উইকেট ৫৫ রানে। যদিও লঙ্কানদের থেকে এখনো পিছিয়ে ৪৭৬ রানে। টাইগারদের হাতে রয়েছে ৯ উইকেট। ১৫ ওভার শেষে জাকির ২৮ ও তাইজুল শূন্য হাতে অপরাজিত আছেন।
বাংলাদেশী ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মহড়ার সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ছয় ব্যাটারের হাফ-সেঞ্চুরিতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৫৯ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ৫৩১ রানের পাহাড় গড়েছে সফরকারিরা। কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়াই টেস্টের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে শ্রীলঙ্কা। এই নিয়ে ১১ বার টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০০ বা ততধিক রান করল তারা। সেই সাথে কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়া সর্বোচ্চ দলীয় রানের বিশ্বরেকর্ড গড়ল। এত দিন এ রেকর্ডের মালিক ছিল ভারত। ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কানপুরে ছয় ব্যাটারের হাফ-সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ৫২৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল ভারত।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ছিল চার উইকেটে ৩১৪ রান। দিনেশ চান্দিমাল ৩৪ ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
গতকাল দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছেন চান্দিমাল ও ধনাঞ্জয়া। এতে দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। অবশেষে দিনের ১৬তম ওভারে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। পাঁচটি চার ও দু’টি ছক্কায় ১০৪ বলে ৫৯ রান করা চান্দিমাল সাকিবের শিকার। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ডাবল ও সেঞ্চুরির জুটিতে বাংলাদেশকে চরমভাবে ভুগিয়েছিলেন ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু মেন্ডিস। কিন্তু এবার আর পারেননি তারা। জুটিতে ৩৬ রান যোগ হওয়ার পর বিচ্ছিন্ন ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু। ৬ চার ও দুই ছক্কায় ৭০ রান করে পেসার খালেদ আহমেদের বলে লেগ বিফোর আউট হন ধনাঞ্জয়া।
এর পর প্রবাথ জয়সুরিয়াকে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন কামিন্দু। অবশ্য এই জুটি ৮ রানের বেশি যোগ করতে পারত না, যদি না জয়সুরিয়ার ক্যাচ ফেলতেন। খালেদের করা ইনিংসের ১২১তম ওভারের শেষ বলে প্রথম সিøপে ক্যাচ দেন জয়াসুরিয়া। সেই সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। তার হাতে বল লেগে দ্বিতীয় সিøপে দাঁড়ানো শাহাদাত হোসেনের দিকে যায়। তিনি বল হাতে রাখতে পারেননি। এরপর শাহাদাতের হাত ছুঁয়ে বল যায় তৃতীয় সিøপে দাঁড়ানো জাকির হাসানের কাছে। সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি জাকিরও। ছয় রানে জীবন পান জয়সুরিয়া। এরপর ব্যক্তিগত ২৪ রানে জয়সুরিয়ার ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। দু’বার জীবন পেয়ে তিনটি চারে ২৮ রানে সাকিবের বলে আউট হন তিনি।
দলীয় ৪৭৬ রানে জয়সুরিয়া থামার পর শ্রীলঙ্কার রানের চাকা একাই ঘুরিয়েছেন কামিন্দু। স্পিনার তাইজুলের বলে ব্যক্তিগত ৬০ রানে কামিন্দুর ক্যাচ ফেলেন হাসান। জীবন পেয়ে দলীয় রান ৫০০ পার করেন কামিন্দু। সেই সাথে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগা। কিন্তু শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো রান আউট হলে ৯২ রানে অপরাজিত থাকেন কামিন্দু। তার ১৬৭ বলের ইনিংসে ছিল সাত চার ও দুই ছক্কা। সাকিব তিনটি, হাসান মাহমুদ দু’টি ও খালেদ ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : দ্বিতীয় দিন
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ১৫৯ ওভারে ৫৩১/১০ (নিশান মাদুশকা ৫৭, দিমুথ করুনারতেœ ৮৬, কুসল মেন্ডিস ৯৩, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ২৩, দিনেশ চান্দিমাল ৫৯, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৭০, কামিন্দু মেন্ডিস ৯২*, প্রবাথ জয়সুরিয়া ২৮, বিশ্ব ফার্নান্দো ১১, লাহিরু কুমারা ৬, অসিথা ফার্নান্দো ০, খালেদ ১/৭১, হাসান ২/৯২, সাকিব ৩/১১০, মিরাজ ১/১৪৬, তাইজুল ০/১০৬)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৫ ওভারে ৫৫/১ (মাহমুদুল ২১, জাকির ২৮*, তাইজুল ০*, লাহিরু ১/৪)।


আরো সংবাদ



premium cement