১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বেড়েছে আলু পেঁয়াজ গোশতের দাম

নিয়ন্ত্রণে আসছে না নিত্যপণ্যের বাজার
-


কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার উদ্যেগ নেয়া হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এতে ভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
ক্রেতারা বলছেন রোজায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার শুল্ক কমানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে; কিন্তু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে সেই সুবিধাগুলো ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁচ্ছাছে না। তবে সরকার পাইকারি থেকে খুচরা বাজার পর্যায়ে তদারকিতে জোর দিলে সামনে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ২৯টি পণ্যের দাম নির্দিষ্ট করে দেয় সরকার। এরপর দুই সপ্তাহ পার হলেও বাজারে তার প্রতিফলন নেই। বেশির ভাগ পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। খুচরা বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও তা সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে এখনো বেশি।
গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর খুচরা বাজারে গরুর গোশত বিক্রি করতে দেখা গেছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গরুর গোশত ৬৬৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হলেও বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। নির্ধারিত দর অনুযায়ী প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হওয়ার কথা ২৬২ টাকায়; কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায়। চাষের পাঙ্গাশ মাছ কেজি ১৮০ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়।

দেশী পেঁয়াজ ও রসুন সরকার নির্ধারিত দরের কাছাকাছিই বিক্রি হচ্ছে। দেশ পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দর ৬৫ টাকা ৪০ পয়সা, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। যদিও গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ৬০ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পেরেছিলেন। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর বাজারে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকায় বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। দেশী রসুন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। দেশী রসুনের নির্ধারিত দর ১২০ টাকা ৮১ পয়সা। খুচরায় প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, বেঁধে দেয়া দর ৪২ টাকা।

তবে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তার পরও এখনো সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশিতেই বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি প্রতি পিস ২৮ টাকা ৩০ পয়সা এবং ফুলকপি ২৯ টাকা ৬০ পয়সা বিক্রির জন্য সরকার বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু খুচরায় বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি মানভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় এবং ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। খুচরায় কাঁচা মরিচ নির্ধারিত দরের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত বেগুনের দর ৪৯ টাকা ৭৫ পয়সা; কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়।
রাজধানীর বাজারে একদিনের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে আলু। গতকাল শুক্রবার প্রতি কেজি আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চালের কেজি গত এক সপ্তাহে দুই টাকা বেড়ে ৫২ টাকা হয়েছে। আর সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা।

বাজারে এ ধরনের চালের দাম আরো বেশিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাসাবো বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগে যে মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫০-৫১ টাকা ছিল তা এখন ৫২-৫৩ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর-২৮) কেজি ৫৫-৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭-৬০ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬২-৭৮ টাকা থেকে বেড়ে ৬৪-৮০ টাকা হয়েছে।
মাছের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আকার ভেদে তেলাপিয়া ২২০-২৩০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গেল সপ্তাহেও কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে শুরু করে আকার ভেদে ৪০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ টাকার নিচে নেই পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছ। মাছ যত বড় তার তত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement