১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জাকাত আদায়ের উপযুক্ত সময় রমজান

-


আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ১৮ তারিখ। এ মাসের প্রধান কর্তব্য রোজা আদায় করা। ইসলামের আরেক বুনিয়াদি ইবাদত জাকাত আদায়ের জন্য কোনো মাস নির্ধারিত নেই। কিন্তু আল্লাহর নেককার বান্দারা জাকাত আদায়ের জন্য এ মাসটি বেছে নেন বেশি সওয়াব লাভের আশায়। কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসের যেকোনো ইবাদতের প্রতিদান অন্য মাসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল ইবাদত করলে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান পাবে। আর কেউ এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান পাবে। এ জন্য রমজান মাস জাকাত আদায়ের একটা ভালো সময় বলে মনে করা হয়।

জাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত। কারো কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমান মূল্যের বর্ধনশীল সম্পদ এক বছর সঞ্চিত থাকলে তা থেকে চল্লিশ ভাগের একভাগ হারে জাকাত আদায় করতে হয়। যখন এ সম্পদ সঞ্চিত হবে, তখন থেকে চাঁদের হিসাবে এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত ফরজ হয়। ইসলামের এই হুকুমটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের আগেই নাজিল হয়েছিল। তবে তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু করা হয়নি। তাছাড়া প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নামে সম্পদের শ্রেণীবিন্যাসও করা হয়নি। মহানবীর হিজরতের পর এ সম্পর্কে বিস্তারিত আহকাম নাজিল হয় এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় তা উসুল ও বিতরণের নিয়ম চালু হয়। এ ব্যাপারে এতই কড়াকড়ি আরোপ করা হয় যে, আল্লাহর রাসূলের ওফাতের পর একদল লোক জাকাত দিতে অস্বীকার করলে খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: তাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান রা:-এর সময়ে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এভাবে জাকাতযোগ্য সম্পদের শ্রেণী বিন্যাস করা হয়। জমির ফসল, পশু ইত্যাদি প্রকাশ্য এবং স্বর্ণ, রূপা, ব্যবসায়িক ইত্যাদি অপ্রকাশ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রকাশ্য সম্পদের জাকাত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় উসুল করা হতো। কিন্তু অপ্রকাশ্য সম্পদের জাকাত হকদারদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব ব্যক্তির ওপর ছেড়ে দেয়া হয়।

সম্পদ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এই যে, সব কিছুর মালিক আল্লাহ তায়ালা। মানুষের কাছে তা আমানত স্বরূপ। আল্লাহ তায়ালার হুকুম মোতাবেকই সম্পদ ব্যয়ের অনুমতি রয়েছে। কেউ নিজের শ্রম ও মেধা ব্যয় করে যে সম্পদ উপার্জন করে, তা ভোগ করার নিরঙ্কুশ অধিকার তার নেই। বরং অভাবী ও বঞ্চিত মানুষদেরও তাতে প্রাপ্য রয়েছে। তাদের সেই প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সেই প্রাপ্য অংশ কত সে সম্পর্কে প্রথম দিকে বেশ কঠিন আদেশ দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা-ই থাকবে, তা সদকা করতে হবে। (সূরা বাকারা,আয়াত ২১৯) তাছাড়া সম্পদ সঞ্চয় করে রাখার কঠোর নিন্দা করা হয় এবং এজন্য কেয়ামতের দিন কঠিন আজাব ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়। (সূরা তওবা,আয়াত -৩৪)
এটি ছিল আতঙ্কের বিষয়। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারপর আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, সঞ্চিত সম্পদের জাকাত আদায় করলে তা আর নিন্দনীয় থাকবে না।
জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত আট শ্রেণীর মানুষ- নিঃস্ব, অভাবী, জাকাত সংগ্রহে নিযুক্ত কর্মী, নও মুসলিম, ঋণী, মুক্তি প্রত্যাশী দাস-দাসী, মুজাহিদ ও মুসাফির। (সূরা তওবা, আয়াত ৬০)

শেষের পাঁচ শ্রেণী দারিদ্র্যের শর্তে জাকাত পাওয়ার উপযোগী হয়। নও মুসলিম শ্রেণী সব সময়েই ছিল। তারা মুসলিম সমাজের সহানুভূতি ও সহযোগিতা লাভের হকদার। যারা সবেমাত্র মুসলমান হয়েছে, এখনো দৃঢ়তা আসেনি তাদের অসহায়বোধ দূর করার জন্য যেমন আর্থিক সহায়তা করা প্রয়োজন। তেমনি যাদের ঈমান দৃঢ় হয়েছে তাদেরও সহায়তা করা প্রয়োজন অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য। কোনো দাস বা দাসী যদি মুক্তি লাভের জন্য মনিবের সাথে আর্থিক চুক্তি করে, তাহলে তাকে সেই অর্থ পরিশোধে সহায়তার জন্য জাকাতের অর্থ দান করা যায়। বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। কিন্তু যারা বিনা বিচারে কারাগারে বন্দী থাকে, তারা এ শ্রেণীর আওতায় পড়বে। আইনি সহায়তা করে তাদের মুক্ত করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এজন্য প্রয়োজনে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। মুসাফির ব্যক্তি নিজ বাড়ি থেকে দূরে থাকার কারণে সাময়িকভাবে আর্থিক কষ্টে পড়লেও তাকে জাকাতের অর্থ দিয়ে সহায়তা করা যাবে। ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে জিহাদের সম্পর্ক । তবে জিহাদের মর্ম অনেক ব্যাপক। সশস্ত্র জিহাদের জন্যই ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্ব জরুরি। তবে ইসলামের প্রচার প্রসারে যথাসাধ্য চেষ্টা করাও জিহাদের অন্তর্গত, যার প্রয়োজন ও পরিবেশ কোনো যুগেই কম ছিল না। বর্তমান যুগে এজন্য ক্ষেত্র ও উপকরণ বেড়েছে। যুদ্ধের অস্ত্র এখন প্রচার মাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেবা সংস্থা ইত্যাদি। এসব উপায়ে যারা ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় সর্বক্ষণ নিয়োজিত থাকার কারণে জীবিকা উপার্জনে সময় ব্যয় করতে পারেন না, তারা যদি অর্থকষ্টে ভোগেন, তাহলে তাদেরকেও জাকাতের অর্থ দিয়ে সহায়তা করা যাবে। তবে জাকাতের অর্থ দিয়ে এসব প্রষ্ঠিানের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement