১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`
কৃষক সমাবেশে মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় সরকার

রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করতে চায় বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে পরিবারের দেয়া আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ের নাকচের প্রসঙ্গ টেনে গতকাল সোমবার বিকেলে এক কৃষক সমাবেশে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার হত্যা করতে চায়। তাকে চিকিৎসার কোনো সুযোগ না দিয়ে মিথ্যা প্রতারণা করে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিনাচিকিৎসায় হত্যা করতে চায়।
তিনি বলেন, এরা আসলে কাপুরুষ, এরা ভীতু। এরা জানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন তাহলে কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে, তাদের তখতে তাউস ধ্বংস হয়ে যাবে।

ফখরুল বলেন, বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইন কানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন কি আপনি আমেরিকা চলে যান নাই? তাহলে আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? এর একটাই কারণ যে, রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না, তারা বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের লক্ষ্য একটাই যে, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, এ দেশে তারাই সরকার চালাবে, তারাই সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।

গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর গত রোববার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব শর্তে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন, তাতে আগের আদেশ চলমান থাকা অবস্থায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া সম্ভব না।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে ‘শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবিতে এই কৃষক সমাবেশ হয়। কাকরাইল থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এই সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশে নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।

পিটার হাসকে নিয়ে সরকারের ক্ষোভ : মির্জা ফখরুল বলেন, পিটার হাসকে নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে যারপরনাই কথাবার্তা বলছে। এমনকি তাদের বংশবদ যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আছে তারাও মিথ্যাচার করছে। এরা দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি রফতানি পণ্য যায়, সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট যায় সেই দেশের সাথে তারা সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর হলো, এই সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স মানে বিদেশে আমাদের যে শ্রমিকরা কাজ করেন তারা যে টাকা পাঠায়। গত মাসে কম অর্থ পাঠিয়েছে। তার অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নাই সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নাই। একটাই পথ। এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কিভাবে স্বৈরাচারকে কিভাবে ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।

রংপুরের ভাষায় জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা অনেক দিন আগে ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। বিপ্লব করতে গিয়ে তিনি সমগ্র কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, ‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই।’ এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে উঠেন। এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে জেগে উঠেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই শপথ নিয়ে আসুন আমরা আগামী দিনগুলোতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি, প্রতিরোধ গড়ে তুলি, তাদের সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামে সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতা শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের নাসির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, মামুনুর রশীদ খান, এস এম ফয়সাল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আনম খলিলুর রহমান, আসলাম মিয়া, সৈয়দ অলিউল্লাহ সিদ্দিকী, মোশাররফ হোসেন, মিজানুর রহমান লিটু, ওবায়দুল রহমান টিপু, ফজলে হুদা, শাহ আবদুল্লাহ বাকী, শাহ মো: মুনিরুর রহমান, মাহমুদা হাবিবা, দীপু হায়দার খান, ইউনুস আলী মোল্লা, সাহাদাত হোসেন বিপ্লব, আশরাফুল আরিফ ডন, কাজী হোসেন, শফিকুর রহমান মিঠু, মীর হাসান কামাল তাপস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ।

 


আরো সংবাদ



premium cement