১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`

ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ম্যাচ হারল বাংলাদেশ

উইকেট নেয়া মোস্তাফিজকে সতীর্থদের অভিনন্দন : নয়া দিগন্ত -


গতকাল সকাল থেকেই ঢাকায় থেমে থেমে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তবে বেলা দেড়টায় টসের সময় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃষ্টি না থাকলেও আকাশ ছিল মেঘলা। বিকেলের দিকে শঙ্কা কেটে গেছে। গত ম্যাচে ৩৪ ওভার বোলিং করলেও বৃষ্টিতে ব্যাট করা হয়নি বাংলাদেশের। বিশ্বকাপ দল চূড়ান্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে কিছু জায়গা পরখ করে দেখতে চেয়েছিলেন নির্বাচকরা। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষারও। বোলাররা ভালোভাবে উতরে গেলেও ব্যাটাররা রয়েছেন প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডের একাদশ থেকে পেসার তানজিম হাসান ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসানের পরিবর্তে দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদকে নিয়ে মাঠে নামে টাইগাররা। উইকেট পেয়েছেন দু’জনই। লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান করেছে সফরকারী নিউজিল্যান্ড। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন টম ব্লান্ডেল। শেষ চার উইকেটে ৯৫ বলে ৮৮ রান তুলেছেন নিউজিল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররা। জবাবে বাংলাদেশ ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রান করে। ফলে ৮৬ রানে ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড। সোধি ১০ ওভারে ৩৯ রান খরচায় নেন ৬ উইকেট।

এক প্রান্তে ব্যাটারদের আসা যাওয়া থাকলেও অপর প্রান্তটা আগলে রেখেছিলেন তামিম ইকবাল। দারুণ সব শট খেলে বাংলাদেশকে লক্ষ্যের পথে রেখেছিলেন তিনিই। ৮০ দিন পর খেলতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও হলেন। নিজেও এগিয়ে যাচ্ছিলেন হাফ সেঞ্চুরির দিকে। তবে ৪৪ রানে সাজঘরে ফিরে যাওয়ার পর বিপদেই পড়েছে টাইগাররা।
২৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের চতুর্থ বলেই ফিরে গিয়েছিলেন লিটন দাস। তার বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান টাইগার অধিনায়ক। রিপ্লেতে দেখা যায় বল কিছুটা উপরে থাকায় মিস করে স্টাম্প। তবে খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৬ রানে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক।
তানজিদকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন তামিম। শুরুটা দারুণ করেছিলেন তানজিদ। বোল্টের বিরুদ্ধে নিজের প্রথম বলেই ড্রাইভ করে মেরেছেন দারুণ এক বাউন্ডারি। এরপর আরো দু’টি বাউন্ডারি মারেন। তবে আরো একটি মারতে গিয়ে লংঅনে লোকি ফার্গুসনের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যান তিনি। ৮ বলে ১৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। একই ওভারে সৌম্য সরকারকেও তুলে নেন সোধি। অনেকটা আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ তুলে খালি হাতে বিদায় নেন এই ব্যাটার। জাতীয় দলে ফিরে নিজেকে প্রমাণে ব্যর্থ হওয়া মানে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নাম অন্তর্ভুক্তির সুযোগ হারানো।

খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়ও। সোধির বলে কভারের দিকে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন। ৭ বলে ৪ রান করেন তিনি। এরপর অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহর সাথে দলের হাল ধরেছিলেন তামিম। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৪ রানে সোধিকে সুইপ করতে গেলে উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়েন।
টাইগার শিবিরে আতঙ্ক ছড়ান সোধি। মেহেদী হাসানকে বোল্ড করেন ১৭ রানে। তাতে নিজের নামের পাশে ৫ উইকেটের তকমা লাগান সোধি। তখন দলীয় রান ২৯ ওভারে ৬ উইকেটে ১৩৪। অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ হাল ধরেন নাসুম আহমেদকে নিয়ে। দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন অভিজ্ঞ রিয়াদ। ৩৫.৩ ওভারে দলীয় ১৪৯ রানে ফিরলেন তিনিও হাফ সেঞ্চুরির আফসোস নিয়ে। ৭৬ বলে ৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় করলেন ৪৯ রান। তাতেই জয়ের আশা ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশের। এরপর হাসান মাহমুদকে খালি হাতে ফেরান সেই সোধি। শেষ পর্যন্ত ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে রানে শেষ হয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস।

এর আগে ৩৬ রানের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ৩ ব্যাটারকে ফিরিয়ে শুরু থেকেই চেপে ধরেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। তবে হ্যানরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল মিলে সেই বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন। শেষ দিকে ইস সোধির ক্যামিও ইনিংসে ২৫৪ রানের পুঁজি পায় কিউইরা। বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন শেখ মেহেদী ও খালেদ আহমেদ। দুটি উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ, একটি পেয়েছেন শেখ মেহেদী।
টসে হেরে বোলিংয়ে নেমে দুই কিউই ওপেনারের ভোগাতে থাকেন মোস্তাফিজ ও হাসান। দারুণ সব সুইংয়ে দু’জনই প্রথম দুই ওভারে কিউইদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের বাউন্স বলটি কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন উইল ইয়াং (০)।
গোছানো বোলিংয়ের পরও রান তুলতে থাকে কিউইরা। ইনিংসের সপ্তম ওভারে আবারও উইকেটের দেখা পান মোস্তাফিজ। অফসাইডের বাইরে করা তার একটি বলে ড্রাইভ দিতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন ফিন অ্যালেন। লাফিয়ে উঠে ক্যাচটি লুফে নেন সৌম্য সরকার। ১৫ বলে ১২ রান করে অ্যালেন যখন ফিরে যান তখন কিউইদের রান ২৬।

অষ্টম ওভারে বোলিং আক্রমণে আসেন খালেদ। রঙিন পোশাকের ক্যারিয়ারে নিজের করা প্রথম ওভারেই উইকেটে দেখা পান। দারুণ ছন্দে ব্যাটিং করতে থাকা চ্যাড বাওয়েসকে ফেরান তিনি। স্কয়ার লেগে তার ক্যাচটি লুফে নেন তৌহিদ হৃদয়। ফেরার আগে ১৯ বলে ১৪ রান করেন বাওয়েস। মাত্র ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের হাল ধরেন হ্যানরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। শুরুতে দেখেশুনে খেললেও সময়ের সাথে সাথে আক্রমণাত্মক হয়েছেন দুজনই। ২০.১ ওভারেই দলীয় এক শ’ পূরণ হয় কিউইদের। ৫৪ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্লান্ডেল। পরের ওভারেই হাফ সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা নিকোলস অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে আলগা শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন নিকোলস (৪৯)। ফলে খালেদ পান নিজের দ্বিতীয় শিকার।
রাচিন রবীন্দ্রকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শেখ মেহেদী। বল সোজা আঘাত হানে তার পেছনের পায়ে। আম্পায়ার শুরুতে মেহেদীর আবেদনে সাড়া না দিলেও জোরালো আবেদনের পর আঙুল তোলেন তিনি। ফলে ১০ রান করেই ফিরতে হয় এই কিউই ব্যাটারকে। ব্লান্ডেলের সাথে পরামর্শ করে রিভিউ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠ ছাড়েন রাচিন। এক পাশ আগলে থাকা ব্লান্ডেলকে দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড করেছেন হাসান মাহমুদ। তাতে শেষ হয়েছে ব্লান্ডেলের ৬৮ রানের ইনিংস।

মোস্তাফিজের করা ৩৮তম ওভারের শেষ বলে মিড অফে ক্যাচ তুলেও বেঁচে গিয়েছিলেন কোল ম্যাকনকি। পরের ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়েছেন এই কিউই ব্যাটারকে। নাসুমকে ব্যাকফুটে খেলতে চেয়েছিলেন ম্যাকনকি। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। রিভিউ নিয়েছিলেন তবে বাঁচতে পারেননি।
অষ্টম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের রান বাড়িয়েছেন কাইল জেমিসন ও ইস সোধি। দু’জনই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। নাসুমকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মেরেছেন সোধি। পরের ওভারে মোস্তাফিজকে দুটি চার মেরেছেন জেমিসন। এই দু’জনের ব্যাটে আড়াই শ’ পেরোনো রানের স্বপ্ন দেখে কিউইরা। এই জুটি ভেঙেছেন শেখ মেহেদী। তার ঝুলিয়ে দেয়া বলে টপ এজ হয়ে তাকেই ক্যাচ দিয়েছেন ২০ রান করা জেমিসন। ইনিংসের শেষ দিকে লকি ফার্গুসন ১২ বলে ১৩ রান করে কিউইদের রান বাড়াতে সহায়তা করেছেন। শেখ মেহেদীর বলে ফ্রন্ট ফুটে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়েছেন ফার্গুসন। ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে খালেদ আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ৩৯ বলে ৩৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলা সোধি।

নিউজিল্যান্ড : ৪৯.২ ওভারে ২৫৪/১০ (ইশ সোধি ৩৫, লকি ফার্গুসন ১৩, কাইল জেমিসন ২২, উইল ইয়াং ০, ফিন অ্যালেন ১২, চ্যাড বাওয়েস ১৪, নিকোলস ৪৯, রাচিন রবীন্দ্র ১০, টম ব্লান্ডেল ৬৮, কোল ম্যাককনচি ২০, ট্রেন্ট বোল্ট ১*, মেহেদী হাসান ৩/৪৫, মোস্তাফিজ ২/৫৩, খালেদ ৩/৬০, হাসান মাহমুদ ১/৪৬, নাসুম ১/৪৪)।
বাংলাদেশ : ৪১.১ ওভারে ১৬৮ (তামিম ৪৪, লিটন ৬, তানজিদ ১৬, সৌম্য ০, তৌহিদ ৪, মাহেদী ১৭, মাহমুদুল্লাহ ৪৯, হাসান মাহমুদ ০, সোধি ৬/৩৯)
ফল : নিউজিল্যান্ড ৮৬ রানে জয়ী।
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।

 


আরো সংবাদ



premium cement