১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮০ হাজার ছাড়াতে পারে

এক দিনে মৃত্যু ১১ আক্রান্ত ২৯৪৪
- সংগৃহীত

চলতি মাসে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮০ হাজার ছাড়াতে পারে। কারণ ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশ বৃদ্ধির জন্য যে ধরনের থেমে থেমে বৃষ্টি, নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা ও উষ্ণতার মতো অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন এর সবকিছুই চলতি মাসেও বিরাজমান। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে (গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ১০ দিন ৮ ঘণ্টা) দেশে মোট ২৭ হাজার ৪৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, শুধু ঢাকা শহর নয়, সারা দেশেই রয়েছে এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। সাধারণত ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় এডিস মশার ডিম থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক লার্ভা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বত্র ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। জনস্বাস্থ্যবিদরা এ হিসাব থেকে বলছেন, এসব কারণে চলতি মাসে দেশে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারেন এবং একই সাথে আগস্টের চেয়ে বেশি মৃত্যু দেখতে হতে পারে। উল্লেখ্য, গত আগস্টে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৭১ হাজার ৯৭৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৪২ জনের।

এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জিন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল রুম জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৯৪৪ জন। এর আগে গত রোববার আক্রান্ত হয়েছিল দুই হাজার ৯৯৩ জন। গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু রোগে মোট মৃত্যু হয়েছে ৭৪১ জন। সেপ্টেম্বর মাসের গত ১০ দিন ৮ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৪৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে গতকাল এককভাবে ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছে ৯৬৭ জন এবং ঢাকার বাইরে সম্মিলিতভাবে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৯৭৭ জন।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন নয়া দিগন্তকে বলেন, এডিস মশার বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে বাংলাদেশে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের গত ১০ দিনে বৃষ্টির অবস্থা দেখে অনুমান করা যায়, ‘সামনের দিনগুলো একই রকম কাটতে পারে। এর সাথে যোগ হয়েছে বাতাসের আর্দ্রতা এবং গরম।’ ফলে আমি মনে করছি, এই তাপমাত্রা, বৃষ্টি ও আর্দ্রতা শুধু সেপ্টেম্বরই নয়, আগামী অক্টোবর মাসেও বিরাজ করতে পারে। ফলে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার দাপট অক্টোবর মাসেও থাকতে পারে। তবে আগামী নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা ও বৃষ্টি কমে এলে দেশের সার্বিক ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে যাবে বলে মনে করছি তবে একেবারে কমে যাবে না। কারণ যে মশাগুলো থাকবে সেগুলো কামড়াতে থাকবে।

ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু সংক্রমণটা বেশি। ঢাকায় সিটি করপোরেশন তথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মশা নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তারা একেবারেই এ ব্যাপারটি নিয়ে পুরোপুরি উদাসীন। তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ কিংবা আক্রান্তের পরিবারের যে কষ্ট তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, একজন মানুষ যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তার পুরোপুরি সুস্থ হতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগে। এরপর আরো ১৫ দিন লাগে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে। সাধারণত ঢাকা শহরে দরিদ্র পরিবারের মানুষই বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। একটা পরিবারের উপার্জনক্ষম প্রধান ব্যক্তি যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকে সে পরিবারটির কমপক্ষে এক মাস উপার্জন থাকে না। তাদের দিনকাটে ভয়াবহ কষ্টে ও দুঃসহ যন্ত্রণায়। ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন সুপারিশ করেন, এ সময়টায় শুধু ঢাকা নয়, দেশের সব দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আর্থিক সহায়তা করা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement