২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ

বৈরী আবহাওয়াতেও বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে জরিপ কর্মীরা

সারা দেশে ৩ লাখ ১ হাজার খানার তথ্য সংগ্রহ চলছে
-


বীভৎস গরম, প্রকৃতিকে নেই ন্যূনতম বাতাস, তারপরও গত ২১ মে থেকে মাঠ পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি পরিবারের (খানা) ১৯৫টি তথ্য সংগ্রহ করছেন আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মীরা। সাধারণত খানার আর্থসামাজিক তথ্যের পাশাপাশি থানা সদস্যের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, অভিবাসন ইত্যাদি বিষয়ে এ জরিপে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। ব্যুরোর একটি প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল জরিপ এটি। তথ্য প্রদানকারীর বাড়ি থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ঢাকার প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত দেখা যায় নিবিড় তত্ত্বাবধান কার্যক্রম। পুরোটাই হচ্ছে সরাসরি ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায়। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এসব তথ্য পেতে গড়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। তবুও মানুষ তথ্য দিচ্ছে। তবে রেমিট্যান্স ও জমি বা ভূমির তথ্য দিতে অনেকটা মোচরামুচরি করে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য নিচ্ছে গণনাকারী হাবিবুর রহমান ও মাহফুজুর রহমান। জরিপে জনপ্রতি এক থেকে ১.৫ ঘণ্টা লাগছে তথ্য পেতে বলে জানান বিবিএস মাঠ কর্মকর্তা অনামিকা ভদ্র।

চলমান এই জরিপ কার্যক্রম সম্পর্কে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পে ডিপিডি প্রতীক ভট্টাচার্য এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম সরকারের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক ১৫ থেকে ২১ জুন ২০২২ সময়সীমায় ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহ গণনা পরিচালনা করা হয়। শুমারির আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী মূল শুমারির অব্যাবহিত পরে অর্থাৎ ২১ মে থেকে ১৫ জুন ২০২৩ সময়ে দেশের ১২ হাজার ৪০টি নির্বাচিত নমুনা এলাকায় আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩ পরিচালনা করা হচ্ছে। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ডিজিটাল জরিপ। নমুনা এলাকার সংখ্যা বিবেচনায় এটি বিবিএস কর্তৃক পরিচালিত সর্ববৃহৎ জরিপ। যার মাধ্যমে প্রায় তিন লাখ এক হাজারটি খানার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ জরিপের প্রশ্নপত্রে ১৩টি বিষয়ভিত্তিক মডিউলের (খানার পরিচিতি, গৃহ, খানা, ব্যক্তি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যাংকিং সুবিধা, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন, বিদেশ ফেরত সদস্য, আন্তর্জাতিক অভিবাসন এবং খানার পরিসম্পদ সংক্রান্ত) আওতায় ১২১টি প্রশ্নের মাধ্যমে মোট ১৯৪টি সূচকের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জের হলদিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের গৃহিণী শারমিন আক্তার। তার কথায় বেশ জড়তা। স্পষ্ট বলতে পারেন না। তবে তার কাছ থেকে তথ্য পেতে তেমন বেশি সময় লাগেনি। শারমিন জানান, স্বামী ঢাকায় দর্জির কাজ করেন। তাই মায়ের বাড়িতেই সংসার। সপ্তাহ শেষে বাড়ি আসেন। তার আয় কী, কোথায় বাজার করেন, কিভাবে টাকা খরচ করেন, পরিবারের কেউ প্রবাসে আছেন কিনা, স্মার্টফোন আছে কিনা, নিজেদের আলাদা ঘর আছে কিনা ইত্যাদি নানান ধরনের ১৯৫টিরও বেশি তথ্য দিতে হয়েছে আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপের মাঠকর্মীদের। এ তথ্যই দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে। জেলার লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হলদিয়া এলাকার বাসিন্দা আলামিন হোসেন। তিনিও তার তথ্যগুলো দেন বিবিএসের তথ্যসংগ্রহকারীদের। তিনি বলেন, আমার এই তথ্য যদি রাষ্ট্রের কোনো কাজে আসে, তাই দিচ্ছি।

মাঠ পর্যায়ের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি এলাকার পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও এই প্রকল্পের উপজেলা সুপারভাইজিং কর্মকর্তা অনামিকা ভদ্র বলেন, গ্রামীণ এই এলাকাটা অতটা উন্নত না। মানুষ সময় দিচ্ছে আমাদের। তবে কিছু মানুষ যার সংখ্যা খুবই কম, এক থেকে দুই শতাংশ, এরা তথ্য দিতে চাচ্ছে না। তাদের বক্তব্য হলো, আমরা তথ্য দেবো না। আমাদের একটা তথ্য আইন আছে। সেই আইনে বলা আছে সরকার যদি আপনার কাছে তথ্য চায়, আপনি দিতে বাধ্য। তবে আমরা কোনো জোরাজুরি করে তথ্য নিতে যাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা তাদের বুঝিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। মাঠপর্যায়ের জনবল বোঝাতে না পারলে আমরা নিজেরা যাচ্ছি। তাদের বোঝাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে কথা বলি। তাদের সহযোগিতাও আমরা নিচ্ছি। তারা যখন বলবে তথ্য দাও, তখন তারা আর নিষেধ করে না। সে ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বৈরি আবহাওয়ার কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এখন আবহাওয়াটা বেশি খারাপ। মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।
অনামিকা জানান, মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছে তাদের আমরা প্রশ্নপত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েই তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করেছি। ফলে সমস্যা তেমন হচ্ছে না। আর ওরা যেসব তথ্য আনছে আমরাও সেটা মনিটরিং করছি। ওরা পাঠানোর পর আমি যাচাই করে অনুমোদন করি। তারপর আমরা সেটা সার্ভারে পাঠাই। সেখানেও একটা টিম আছে। তারাও ওই ডেটাটাকে যাচাই করে। তারপর তারা সেটা অনুমোদন করে।
তথ্য পেতে জনপ্রতি কতটা সময় যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রশ্নপত্রটা অনেক বড়। বিবিএসের বড় সার্ভেগুলোর মধ্যে এটা একটা। এখানে ১২১টি প্রশ্ন রয়েছে। ফলে এখানে সময় এক থেকে দেড় ঘণ্টাও লাগছে। তবে এখানে যারা শিক্ষিত না তারা নিজ থেকে স্বেচ্ছায় সময় দিচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারীদের। সমস্যাটা হয় শিক্ষিতদের ক্ষেত্রে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন তাড়াতাড়ি শেষ করেন। মূল কথা হলো, বোঝাতে সক্ষম হলে কেউই ঝামেলা করে না বা অসহযোগিতা করেন না।

কথা হয় ঢাকা বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসার এইচ এম ফিরোজের সাথে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম গাফেলতি না থাকে। আমার বিভাগের দায়িত্বশীলদের প্রতি আমি নজর রাখছি। নিজেও মাঠে আসছি।
জরিপ কাজ সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মো: শরিফুল ইসলাম জানান, প্রশ্নপত্র বড় হওয়াতে সময় বেশি লাগে। তাই তথ্য দিতে কেউ কেউ অনীহা প্রকাশ করেন। আমাদের প্রশিক্ষিত তথ্য সংগ্রহকারীরা সময় দিয়ে তাদের সাথে কথা বলে, তাদের বুঝিয়ে তথ্যগুলো সংগ্রহ করছেন।
প্রকল্পে পরিচালক মো: দিলদার হোসেন ঘুরে ঘুরে দেখান পরিসংখ্যান ব্যুরো ভবনে স্থাপিত নেটওয়ার্ক অপারেশন স্টেন্টার (নক) থেকে কিভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে সরাসরি মাঠে। এখানে বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে ইচ্ছে মতো দেশের যেকোনো স্থানের তথ্য সংগ্রহকারীর অবস্থানসহ তার সাথে কথা বলা যাচ্ছে। এ দিকে আইসিআর রুমে কাজ করছে শতাধিক কর্মী। তারা মাঠ থেকে পাঠানো তথ্য তাৎক্ষণিক যাচাই করছেন। সন্দেহ হলে সাথে সাথে তথ্য সংগ্রহকারীর সাথে কথা বলছেন। যেন বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস ট্যাবলেট ব্যবহার করে কেপিআই পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহকারীগণ নির্ধারিত এলাকায় দ্বৈবচন ভিত্তিতে নির্বাচিত খানাগুলোতে উপস্থিত হয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। জরিপটি সফলভাবে সম্পাদন ও সঠিক তথ্যসংগ্রহ নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট থানার থানাপ্রধানসহ সব সদস্যের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা

সকল