১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রথম দিনেই ৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

ভারত থেকে ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে
প্রথম দিনেই ৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি -


প্রথম দিনেই ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) উইং হতে গতকাল সোমবার ২১০টি আইপির বিপরীতে ওই পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। আমদানি অনুমতির পর ভারত থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে।

জানা যায়, গত ১৫ মার্চের পর থেকে বন্ধ থাকার পর দেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। পেঁয়াজের কেজি যখন সেঞ্চুরিতে ঠেকেছে ঠিক সেই মুহূর্তে গত রোববার আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরও দেশে প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। যার বেশির ভাগই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। এবারো যখন দেশে পেঁয়াজের বাজার গরম তখন ভারতে কৃষকেরা দামই পাচ্ছেন না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে, এমন আশায় বাংলাদেশ এবং ভারতের ব্যবসায়ীরা পূর্বে থেকেই অনেকটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তাই সীমান্তের ওপারে পেঁয়াজ বোঝাই অসংখ্য ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রহর গুণছিল বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

গতকাল সোমবার প্রথম দিনই পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের ২১০টি আবেদন (আইপি) অনুমোদন দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোয়ারেন্টাইন উইং। বিকেল নাগাদ সোনা মসজিদ ও ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের খবর পাওয়া যায়।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে। রাতের মধ্যেই প্রায় আড়াই শ’ টন পেঁয়াজ এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিনেই এক হাজার ৯৭ টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে প্রায় ৭০-৮০ টন পেঁয়াজ। তবে অন্য স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোয়ারেন্টাইন উইংয়ের উপপরিচালক (আমদানি) লিয়াকত আলী নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথম দিন ১৮৩টি আইপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামীকাল আরো যেসব আবেদন আছে সেগুলোর অনুমোদন দেয়া হবে। তিনি বলেন, তবে আমদানি অনুমতি মানেই সব পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসবেন এমনটা নয়। একটা আইপির মেয়াদ ৪ মাস দেয়া থাকে। অর্থাৎ ৪ মাসের মধ্যে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয় তা আনতে হবে। এর মধ্যে না পারলে আরো ২ মাস সময় বাড়ানো হয়ে থাকে।
কৃষিবিদ লিয়াকত আলী জানান, আমরা অনলাইনেই আবেদন পাচ্ছি আবার অনলাইনেই অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি। আগে আইপির কিছু অংশ অনলাইনে অনুমোদন দেয়া হতো, এবার শতভাগ অনলাইনেই অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের আর দূর-দূরান্ত থেকে সশরীরে ঢাকায় আসতে হচ্ছে না।

এর আগে গত রোববার কৃষি মন্ত্রণালয় ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পেঁয়াজ উৎপাদন করে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় বিগত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখে কৃষি মন্ত্রণালয়। বর্তমানে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ টাকায় ঠেকায় দেশের সীমিত আয়ের শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় পেঁয়াজ আমদানির এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ দিকে গত রোববার এক সেমিনার শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য উভয়সঙ্কটের মতো। আমদানির অনুমতি দিলে দাম অনেক কমে যায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়, ভোক্তাদের কষ্ট হয়। সেজন্য, সবসময়ই আমরা চাষি, উৎপাদক, ভোক্তাসহ সবার স্বার্থ বিবেচনা করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি মন্ত্রণালয় একটি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যাপক সাফল্যও মিলেছে। গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। দুই বছরে আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টনের মতো। পেঁয়াজের উৎপাদন ও বিপণনের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫-৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪.৫৩ লাখ টন। বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮-৩০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬.৬৫ লাখ টন।

আমদানির খবরেও কমেনি পেঁয়াজের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ভারত থেকে আমদানির অনুমতির পরও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি। রাজধানীতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা দরে। মান ভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়। সোমবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
গত রোববার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজ আমদানিতে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার। সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমতে পারে।
রাজধানীর খিলগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, পেঁয়াজ আমদানির খবর শুনেছি। আমদানি হলেও বাজারে আসতে তিন-চার দিন সময় লাগবে। এই সপ্তাহ শেষে হয়তো দাম কমবে। তবে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশী পেঁয়াজ ছোট, বড় ও মাঝারি আকার পৃথক করে ১০০ ও ১১০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাঁচ কেজি কিনলে ৫-৮ টাকা মূল্য ছাড় দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বলছে, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে পণ্যটির দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর গত মাসের এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৪০ টাকার মতো বেড়েছে। গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫-৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ লাখ টন। বাংলাদেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮-৩০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় ছয় লাখ টন।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে এই বন্দর দিয়ে আট ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকেছে। আরো ১০ ট্রাকের মতো পেঁয়াজ ঢুকতে পারে বলে জানিয়েছেন ভোমরা শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানান, প্রতি টন পেঁয়াজ ২২০ মার্কিন ডলার থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের তথ্য কর্মকর্তা শান্ত হাওলাদার জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ আট ট্রাক পেঁয়াজ ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে। আরো আট-দশটি ঢুকতে পারে।
দেশীয় পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। এ সুযোগে বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় ওঠে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া পিকআপচালককে হত্যা করে রেললাইনে লাশ ফেল গেল দুর্বৃত্তরা এক মাস না যেতেই ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে! ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৭

সকল