২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

সুযোগ দিলেও কেউ কালো টাকা সাদা করেনি

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল -


সুযোগ দেয়া সত্ত্বেও গত এক বছরে একজনও কালো টাকা সাদা করেননি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকার শঙ্কিত। তবে সরকার চেষ্টা করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশনে বাজেট তৈরি করা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেছেন। তিনি এও বলেছেন, আইএমএফের পরামর্শ দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাউন্ড সিস্টেম সমস্যার কারণে শুরু করতে সাড়ে তিনটা বেজে যায়। এরপরও দফায় দফায় সাউন্ড সিস্টেমের অচল অবস্থা দেখা দেয়। পুরো অনুষ্ঠানে দেখা যায় এক ধরনের স্থবিরতা। এই সমস্যা অনুষ্ঠানের অর্ধেকটা সময় জুড়েই ছিল। এ সময় মন্ত্রীদের বিব্রত ও বিরক্ত হতে দেখা যায়। উপস্থিত আমলাদের মধ্যে এক ধরনের বিমর্ষতা নেমে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।

কেউ টাকা সাদা করেনি : অর্থমন্ত্রী জানান, আমি গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলাম, কেউ যদি অপ্রত্যাশিত টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে সেই টাকার কোনো কর দিতে হবে না। গত বাজেটে এ সুযোগটি দেয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তাই এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকার শঙ্কিত : মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা নিজেরাও শঙ্কিত। সারা বিশ্বই এখন মূল্যস্ফীতিতে আছে। আমরা খাবার তো বন্ধ করতে পারব না। মানুষকে খাবার না দিয়ে রাখা যাবে না। আমরা একটা ফ্লেক্সিবল ওয়েতে এগোচ্ছি। যেসব কারণে এটি হয়, সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ছাড় দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রচুর খাদ্য সরবরাহ করছি। পাশাপাশি যেসব পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয়, সেখানে নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে সরকারকে সাহায্য করছি। এভাবে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছি।’ মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। পরের ১০ বছরে সেটি ৬ শতাংশে নেমে আসে। সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। এখন খুব খারাপ সময়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভালো আছি। এবারো যেসব প্রজেকশন আমাদের আছে, সবই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আশা করি।’

আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট তৈরি হয়নি : বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে সরকার আইএমএফের দেয়া শর্তের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন করেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি। তাদের পরামর্শের যেটুকু গ্রহণ করা যায় সেটুকু করব। সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তিনি বলেন, আইএমএফের সাথে যারা কাজ করে সেটি ভালো। তারা শুধু অর্থ দিয়ে সাহায্য করে না, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংস্কারে সহায়তা করে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখারও থাকে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন বিশ্বের সবার সাথে সম্পৃক্ত। কেউ আলাদাভাবে বসবাস করার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আপনি যদি আমদানি করেন, তাহলেও কাউকে লাগবে, রফতানি করলেও কাউকে লাগবে।

ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে সমস্যা হবে না : সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এতে করে বেসরকারি খাত ঋণ বঞ্চিত হবে কি না- অর্থমন্ত্রী এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে গভর্নরকে জবাব দিতে বলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সঙ্কট মোকাবেলায় প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে। তার মানে ২ লাখ কোটি টাকা বাজেট থেকে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকে গেছে। এই টাকা যদি বাজারে থাকত তাহলে সরকারের এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নেয়া কোনো বিষয় হতো না। এখন যেহেতু বাজারে তারল্য সঙ্কট রয়েছে, সেজন্য সরকার বন্ডের মাধ্যমে নিচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়লে যে মূল্যস্ফীতি বাড়বে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ২ লাখ কোটি টাকা তুলে এনে ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়লে টাকার সরবরাহ কম থাকছে।

পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টাকার সরবরাহ কম দাবি করে গভর্নর বলেন, আমাদের মানি সাপ্লাই যদি দেখেন ওয়ান অব দ্য লোয়েস্ট এই রিজিওনের মধ্যে। জিডিপির মাত্র ৪০ শতাংশ মানি সাপ্লাই। যেটা ইন্ডিয়াতে ডাবল, ৭৬-৭৭ শতাংশ। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়াতে প্রায় ১০০ শতাংশ। তাই সরকার ঋণ নিচ্ছে বলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, এটা ঠিক না। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলছেন আমরা লোন নিয়ে চলছি। আইএমএফ থেকে সর্বশেষ যে ঋণ নেয়া হয়েছে এই অর্থ আমাদের প্রবাসীরা দুই মাসেই দেশে প্রেরণ করে। অর্থাৎ দুই মাসের রেমিট্যান্সের অর্থ আমরা ঋণ নিয়েছি। এটা খুব একটা বেশি ঋণ নয়।
শেয়ারবাজার নিয়ে প্রশ্নে বিব্রত মন্ত্রী ও আমলারা : প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজার নিয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। কে এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন সেটিও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে অর্থ সচিবকে উত্তর দিতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উত্তর দিতে বলা হয়। পরে এ বিষয়ে কথা বলেন গভর্নর।

সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে অর্থমন্ত্রী বলেন, কে নেবেন প্রশ্নটি? অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় আছেন। তিনি যদি বলতে চান বলতে পারেন। এ সময় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, শেয়ারবাজারের বিষয়ে আমাদের বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয় উপস্থাপনায় রাখা হয়নি। এই বিষয়ে কী কী কার্যক্রম নেয়া হয়েছে, এ বিষয়ে এখন আমরা গভর্নর স্যারের কাছ থেকে জানতে পারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্যার আমাদের সাথে আছে। তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার অনেকটা চমকে উঠে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটি এক্সেস কমিশনারের ভেতরে শেয়ারবাজার নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। আমরা সিকিউরিটি এক্সেস কমিশনারের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে আলাপ করে যে সমস্ত সমস্যা পলিসি ছিল, গত এক বছরের তিন থেকে চারটি সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে দুইটি অংশ, একটা ইকুইটি মার্কেট আরেকটা বন্ড মার্কেট। বন্ড মার্কেট কিভাবে ডেভেলপ করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে যে সমস্ত সাপোর্ট দেয়া দরকার আমরা সেগুলো দিচ্ছি।

ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেয়া গর্বের বিষয় এনবিআর চেয়ারম্যান : রিটার্ন দাখিল করলে দুই হাজার টাকা কর দেয়া বাধ্যতামূলক প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম বলেন, এটি আমি অনুরোধ করব দেখে নিন কাদের টিআইএন আছে। টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য, গাড়িসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। গরিব মানুষের জন্য তো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়। তাই আমি মনে করি তাদের দুই হাজার টাকা সরকারের কোষাগারে দিয়ে উন্নয়নে শামিল হওয়া গর্বের ব্যাপার।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই দুর্ঘটনায় তরুণ নিহত ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু

সকল