২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাজেটে অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে নির্দেশনা নেই -মির্জা ফখরুল

রাজধানীতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে প্রস্তাবিত বাজেট কোনো দিকনির্দেশনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, সরকার বলছে যে, একটা অত্যন্ত সুন্দর বাজেট হয়েছে, যেটা নাকি পরিবর্তন আনবে। কিছু তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াই বলছে, এই বাজেট মানুষের মধ্যে কোনো স্বস্তি আনতে পারে নাই।
যে ভয়ঙ্কর মূল্যবৃদ্ধি, যে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সঙ্কট সেই সঙ্কট এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে বাজেট দরকার ছিল সেই বাজেট দিতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আবার ওই গোঁজামিল। দুইয়ে দুই চার হয়, এক-দুই-তিন একটা করে দিয়ে বানিয়ে দিয়েছে। কিভাবে টাকা আসবে, কোত্থেকে টাকা আসবে, কিভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে তার সম্পর্কে কোনো রকমের সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা নাই।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপরে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত কার্টুন দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কার্টুনে একজন ভিক্ষুক তার দুই কান কাটা, সে একটা থাল নিয়ে ভিক্ষা করছে। আর তার বুকের মধ্যে একটা বোর্ড লাগিয়ে রেখেছে, তার টিন নম্বর। বুঝতে পারছেন? অর্থাৎ যারা আয়কর বহির্ভূত তাদেরও দুই হাজার করে আয়কর দিতে হবে। ভিক্ষা করতে গেলেও এখন টিন নম্বর থাকতে হবে, হিসাব খুলতে গেলেও টিন নম্বর থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এভাবে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে, সাধারণ মানুষকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে সরকার বড় বড় মেগা প্রজেক্ট করছেন, মেগা উন্নয়ন করছেন সেই আনন্দে আপনারা দেখেছেন যে, সুবেশী প্রধানমন্ত্রী, সুবেশী অর্থমন্ত্রী, অত্যন্ত সুদর্শন ঘরভর্তি সংসদ সদস্যরা মিলে বাজেট প্রণয়ন করছেন। আর সাধারণ মানুষ যারা বাজার যাচ্ছেন তারা বলছেন যে বাজার থেকে আমি কিছু কিনে নিয়ে যেতে পারছি না। এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আজকে চাল-ডাল-তেল-লবন-পেঁয়াজ-আদা এমনভাবে বেড়েছে দাম যে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এক ভদ্রলোক বলছেন, সামনে ঈদ আসছে কোরবানির ঈদ আমারও তো ইচ্ছা করে আমার পরিবারকে নিয়ে গরুর গোশত রান্না করে খাব। কিন্তু আদা কিনব কোত্থেকে, পেঁয়াজ করব কোত্থেকে ভ্যাট দেবো কোত্থেকে। এটাই বাস্তবতা। যে কারণে আজকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাস্তবতা বিবর্জিত একটা বাজেট যার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই বাস্তবতার।

‘তুমি বিদায় হও’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে এরা আমার জাতির ভবিষ্যৎকে নষ্ট করছে, আমার সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে, মান-সম্মানকে বিলীন করে দিচ্ছে। আজকে আমাদের পরিষ্কার কথা আমরা এ কথা বলিনি যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনো। আমরা দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, আমরা একটা অবাধ নির্বাচন চাই। অতীতের অভিজ্ঞতা যে, আমরা বুঝি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এ জন্যই দাবি আমাদের একটাই দয়া করে বিদায় হও। অনেক করেছ এনাফ-এনাফ দয়া করে বিদায় হও। মানুষকে কষ্ট না দিয়ে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় হও। তা না হলে এ দেশের মানুষ কিভাবে বিদায় করতে পারে তা তারা ভালো করে জানে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, এ কে এম আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফখরুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিশেহারা জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছেন : আব্দুল্লাহ আল নোমান
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, তিনি একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক- এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশ স্বাধীন না হলে মার্শাল ল আইনে তার বিচার হতো। এমনকি ফাঁসির কাঠগড়ায় তাকে দাঁড়াতে হতো। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি দিশেহারা জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। উনার আদর্শ বুকে লালিত করে দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে সবাইকে একত্রীভূত হতে হবে। গণতন্ত্র মুক্তি ও স্বাধীনতার রক্ষা ও ভোটাধিকার প্রয়োগের যে আন্দোলন চলছে তা বেগবান করে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে।

গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা: শাহাদাত হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেন। বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপি নেতা এম এ সবুর, এস কে খোদা তোতন, আনোয়ার হোসেন লিপু।

বিশেষ অতিথি মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবো। বর্তমান অবৈধ অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে মানুষ দুরবস্থায় দিনযাপন করছে, শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছেন। দেশে একটি দুর্ভিক্ষের আলামত সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি সাধারণ মানুষ মেহনতি শ্রমজীবী মানুষ না খেয়ে বা অর্ধাহারে দিনযাপন করছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে একসাথে রাজপথে নেমে আসতে হবে, যা ইতোমধ্যে লক্ষ করছি- সরকারি দলের অপকর্মকারীরা পালাতে পথ খুঁজছে। আশা করি অচিরেই দুর্নীতিবাজ সরকার পালিয়ে যাবে।

বগুড়ায় বিএনপির খাদ্য বিতরণ ও দোয়া মাহফিল
বগুড়া অফিস জানায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়া জেলা বিএনপি ঘোষিত ৯ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সদর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে শুক্রবার বাদ আসর সদরের বাঘোপাড়া বন্দর জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল শেষে গরিব দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জহুরুল আলমের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা। এ সময় প্রধান অতিথি বলেন, শোককে শক্তিতে পরিণত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলন সফল করতে হবে। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদ উন নবী সালাম, কে এম খায়রুল বাশার ও জাহিদুল ইসলাম হেলাল, সদর বিএনপি নেতা শামসুল আলম মণ্ডল, আবু সালেহ নয়ন ও আতিকুর রহমান আতিক, কামাল হোসেন, মাফতুন আহমেদ প্রমুখ। কর্মসূচি শেষে স্থানীয় এতিমখানায় রান্না করা উন্নত মানের খাবার বিতরণ করা হয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement