২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এডিপির আকার বাড়ে বাস্তবায়ন হার বাড়ে না

-

-সংশোধিত এডিপিও বাস্তবায়ন করা যায় না
-মূল কারণ অদক্ষ আমলাতন্ত্র

বিগত ১৪ বছরের সরকারের সব বড় বিনিয়োগ কর্মসূচি এডিপির আকার আটগুণেরও বেশি বাড়লেও বাস্তবায়ন হারের শ্লথগতি রোধ করা যাচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পুরোটা বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, সংশোধিত এডিপিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এর নেপথ্যে আমলাতান্ত্রিক ব্যর্থতা ও অদক্ষতা প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যর্থতা খুব কমই স্বীকার করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো অনেক বড় মন্ত্রণালয়েও এডিপি বাস্তবায়ন হার হতাশাজনক। তারা টাকা খরচ করতে পারে না। ফলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত চলে যায়। আর সময়মতো পুরো এডিপি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ মানুষ উন্নয়নের পুরো সুফল পাচ্ছে না।
১৪ বছরে এডিপির আকার বেড়েছে আটগুণ : বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতায় এসে সরকার ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছিল। ১৪ বছর পর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সেই এডিপির আকার গিয়ে ঠেকেছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকায়। এ সময়ে এডিপির আকার বেড়েছে আটগুণের বেশি।
তবে এডিপির আকার বাড়লেও বাস্তবায়নের হার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবারই অর্থবছরের মাঝপথে এডিপি কাটছাঁট করা হচ্ছে, যা পরবর্তী বছরের বাজেটে সংশোধিত আকারে অনুমোদন করে দেয় জাতীয় সংসদ। যদিও বছর শেষে সংশোধিত এডিপিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম অর্থবছরে (২০০৯-১০) সংশোধিত এডিপির আকার ছিল সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে এডিপির প্রকৃত বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯১ শতাংশ। অন্য দিকে, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাজেটে এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের মাঝপথে এসে দেখা গেল এই এডিপির অর্থের পুরোটা খরচ করা সম্ভব হবে না। তাই এটির আকার কমিয়ে সংশোধন করা হয়েছে দুই লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকায়। কিন্তু এই অঙ্কের অর্থও বছর শেষে ব্যয় করতে সক্ষম হবে না সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো। কারণ সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম ১০ মাসে এডিপির ৫০ ভাগ অর্থও ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের করুণ চিত্র : সরকারের একটি বড় মন্ত্রণালয় হচ্ছে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর এই মন্ত্রণালয়ের পিছনে একটি বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমতা না থাকার কারণে সেই অর্থও ব্যয় করা যায় না। ফেরত চলে যায় অর্থ, যার মূল খেসারত দিতে হয় সাধারণ জনগণকে। যারা স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি হাসপাতাল ও অবকাঠামোর ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে এডিপির খরচ হয়েছে তিন হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির মাত্র ৩৩ শতাংশ। অব্যয়িত পড়ে আছে দুই-তৃতীয়াংশ বা ছয় হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। ব্যয় করতে না পারার কারণে আগামী অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের পিছনে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ কী বলে : ২০১৯ সালে করা অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের আগের পাঁচ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার বেড়েছিল প্রায় ২১৪ শতাংশ। এ সময়ে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, সেগুলোর মোট ব্যয় ১৫ লাখ কোটি টাকার অধিক। সে হিসাবে বছরে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে প্রতি বছরই মূল বাজেটের এডিপি কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি প্রণয়ন করা হয়। আর সংশোধিত এডিপিও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় না।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ’-এর (আইএমইডি) হিসাবে, গত পাঁচটি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার ৯২ শতাংশ। কিন্তু বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকৃত এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার হচ্ছে সংশোধিত এডিপির প্রায় ৮১ শতাংশ (৮০.৬৭ শতাংশ)।

বিগত ৬ বছরে এডিপি বাস্তবায়নের হালহলিকত : ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপি চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মূল এডিপি তো নয়ই, সংশোধিত এডিপিও পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংশোধিত এডিপির সর্বোচ্চ ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে। অর্থ বিভাগের করা ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’-এর তথ্যানুযায়ী, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এই দুই অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন হার ছিল ৯৫ শতাংশ। অন্য দিকে, সবচেয়ে কম বাস্তবায়িত বছর ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর। এই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল মাত্র ৮০ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের সুপারিশ : এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে কিছু সুপারিশ দিয়েছিল অর্থ বিভাগ। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল- অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পগুলোর বিপরীতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা; নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করা; সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত ১০০টি প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণ সভা করা; দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব পূরণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক ১০টি বড় প্রকল্প সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি। জানা গেছে, এই সুপারিশ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান

সকল