১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফাইনালে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন

-


কী ছিল না ম্যাচে। স্প্যানিশ এলক্লাসিকো, মাদ্রিদ ডার্বি, মিলান ডার্বি, ম্যাচচেস্টার ডার্বি দেখে যারা উন্মাদনায় ভাসেন। তাদের জন্য গতকাল কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়ামে ছিল বাংলা ক্লাসিকো, ঢাকা ডার্বি। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে সেই উত্তেজনা। সেই রোমাঞ্চ। সেই শিহরণ। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচে কিংবা পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে ১৪ বছর পর শেষ হাসি সাদাকালো শিবিরেই। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা আবাহনী ৯০ মিনিটে এসে ৩-৩ গোলে সমতা। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে ১ গোল করে এগিয়ে যায় মোহামেডান। এবার দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীর সমতা; অর্থাৎ স্কোর ৪-৪। টাইব্রেকারে ৪-২ গোল করে উল্লাসে মাতে সাদা-কালো শিবির ও সমর্থকরা। আর কোচ আলফাজের অবিস্মরণীয় প্রাপ্তি, প্রথমে কোচ হিসেবেই সাফল্য। বিপরীতে আবাহনীর বিদেশী কোচ মারেও লামেসের প্রথমবারের মতো মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়া।
আগের দিন থেকেই কুমিল্লায় অবস্থান করেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। দর্শকরাও কম যান না। হোটেল ভাড়া করে, কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় খেলা শুরুর কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই স্টেডিয়ামে জড়ো হতে থাকেন দর্শকরা। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর খেলা বলে কথা। মাঝে মধ্যে গ্যালারিতে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছে দর্শকদের মাঝে।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শক্ত হাতেই দমন করে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে খেলার স্বার্থে।
পরতে পরতে বদলালো ম্যাচের রঙ। ঠিক যেমনটা আশি-নব্বই দশকে দেখত দেশের ফুটবল সমর্থকরা। তার ষোলোআনায় ফিরে এলো কুমিল্লায়। হয়তো একটু বেশিই। সেই মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে। দুই দু’বার পিছিয়ে পড়ে মোহামেডান। প্রথমবার তো দুই গোলের ব্যবধানে। ঘুরে দাঁড়িয়ে উল্টো লিড পেল তারা। এরপর ঘুরে দাঁড়ায় আবাহনী। তাতে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর শেষ গল্পটা লিখল মোহামেডান। সুকেশে শোভা পেল আরো একটি ট্রফি।

গতকাল কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় মোহামেডান। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ৪-৪ ব্যবধানে সমতা ছিল। মোহামেডানের হয়ে একাই চারটি গোল করেন অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা ফুটবলার হাতেগোনা। এর আগে আবাহনীর হয়ে শ্রীলঙ্কান প্রেমলাল হ্যাটট্রিক করেছিলেন। আবাহনীর হয়ে একটি করে গোল করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, দানিয়েল কলিন্দ্রেস, এমেকা ওগবাহ ও রহমত মিয়া।
সবশেষ ২০১৩ সালে সুপার কাপে ফাইনালে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে কোনো শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। এর আগের পাঁচ লড়াইয়ে আবাহনীকে হারাতে পারেনি তারা। ২০১৯ সালে লিগ ম্যাচে পর আবার এলো জয়। জয়টি যেন নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়। কারণ ফাইনালে আট গোল এর আগে দেখেনি দেশের ফুটবল। একই সাথে ১০ বছর পর আবার কোনো শিরোপার মুখ দেখল সাদা-কালোরা। আর ফেডারেশন কাপ জিতল ১৪ বছর পর।

গল্পটা এ দিন ভিন্ন হতেও পারত। দিয়াবাতে জয়ের মূল নায়ক হলেও নিঃসন্দেহে এই ম্যাচের পার্শ্বনায়ক মোহামেডান গোলরক্ষক হোসেন সুজন। তিনটি গোল হজম করলেও এই গোলরক্ষক ঠেকিয়েছেন আরো তিনটি নিশ্চিত গোল। সেই গোলরক্ষক ম্যাচের শেষ দিকে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন কাঁদতে কাঁদতে। এর ঠিক দুই মিনিট পর যখন মোহামেডান গোল হজম করে তখন মুষড়ে পড়েছিল দলটি। তবে টাইব্রেকারে স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পেরেছেন। টাইব্রেকারে মোহামেডানের দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার দুরাতে দি অলিভিয়েরা, কামরুল ইসলাম জালের দেখা পেলেও মিস করেন শাহরিয়ান ইমন। আবাহনীর হয়ে এমেকা, মোহাম্মদ ইউসুফ লক্ষ্যভেদ করেন। তবে মিস করেছেন দলের সেরা দুই তারকা অধিনায়ক রাফায়েল আগুস্তো দি সিলভা ও কলিন্দ্রেস। তাদের দুর্বল শট ঠেকান মোহামেডানের বদলি গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু।

উত্তেজনাকর ম্যাচের ১৬তম মিনিটেই আবাহনীকে এগিয়ে দেন ফাহিম। এমেকার অসাধারণ থ্রু পাস ধরে বাঁ পায়ের কোনোকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি (১-০)। এরপর বিরতিতে যাওয়ার আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলিন্দ্রেস। হৃদয়ের লং পাস মোহামেডানের ডিফেন্ডার হাসান মুরাদকে এড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ এক ভলিতে বল জালে পাঠান কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা এ তারকা (২-০)।
দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে মোহামেডান। তাতে আক্রমণে ধার বাড়ে সাদা-কালো শিবিরে। তার সুফল ১৫ মিনিটের মধ্যেই পায় দলটি। ৫৬তম মিনিটে কামরুলের ক্রস আবাহনীর আলমগীর ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে না পারলে চলে যায় দিয়াবাতের কাছে। লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে জায়গা করে দারুণ ভলিতে ব্যবধান কমান তিনি (২-১)। এর চার মিনিট পর সমতা ফেরান মোহামেডান অধিনায়ক। মুজাফ্ফরভের দূরপাল্লার শট আবাহনী শহীদুল আলম সোহেল ঝাঁপিয়ে ঠেকালে বাঁ প্রান্তে পেয়ে যান জাফর ইকবাল। তার কাটব্যাক থেকে লাফিয়ে হেড দিয়ে বল জালে পাঠান দিয়াবাতে (২-২)।

চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল হজম করা আবাহনী এরপর আক্রমণের ধার বাড়ায়। ৬৬তম মিনিটে রহমতের ক্রসে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এমেকা। ফের এগিয়ে যায় আবাহনী (৩-২)। ৮৩তম মিনিটে আবারো মোহামেডানের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন অধিনায়ক দিয়াবাতে। কামরুলের কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে আরো একটি দুর্দান্ত হেডে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি দলকে সমতায় ফেরান মালির এই ফরোয়ার্ড (৩-৩)।

অতিরিক্ত সময়েও আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দুই দল। তবে প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে লিড নেয় মোহামেডান। সফল স্পটকিক থেকে প্রথমবারের মতো সাদা-কালো শিবিরকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে (৪-৩)। ডি-বক্সের মধ্যে তাকে আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মোহামেডান। তবে ১১১তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় মোহামেডান। রাফায়েলের ভলি ঠেকাতে গিয়ে চোট পান গোলরক্ষক সুজন। মাঠ ছাড়েন কাঁদতে কাঁদতে। তার বদলি নামেন আহসান হাবিব বিপু। মাঠের নামার দুই মিনিটের মধ্যেই গোল হজম করতে হয় তাকে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে রহমতের বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে হাত লাগালেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি (৪-৪)। তবে টাইব্রেকারে দু’টি পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়ক বনে যান বদলি এই গোলরক্ষক।

 


আরো সংবাদ



premium cement