২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কিডন্যাপারদের ধরতে ড্রোন অপারেশন শুরু লিবিয়ান স্পেশাল ফোর্সের

দুবাইগামী ভিজিট ভিসার যাত্রীদের নজরদারির পরামর্শ
-


যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলেও এখনো দেশটির আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসেনি বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।
তবে পরিস্থিতি যাতে দ্রুত অনুকূলে ফিরে আসে তার জন্য লিবিয়ান স্পেশাল ফোর্সসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত মানবপাচারকারী, তেল পাচারকারীসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িতদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরের সাগরপাড়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে লিবিয়ান স্পেশাল ফোর্স সদস্যরা ড্রোন দিয়ে দুর্বৃত্তদের ওপর বোমা হামলা চালায়। তবে এই হামলায় কতজন হতাহত হয়েছে এবং এই হতাহতের ঘটনায় কোনো বাংলাদেশী সদস্য রয়েছে কি না তা গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে লিবিয়ার ত্রিপোলির স্থানীয় বাংলাদেশীদের মাধ্যমে পাওয়া (ফেসবুক) প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে।

‘ভয়েজ অব বাংলাদেশ ইন লিবিয়া’ নামক এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা গেছে, ‘জাওয়াইয়া সিটিতে সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন আস্তানা লক্ষ্য করে কয়েক দফা ড্রোন হামলা চালিয়েছে লিবিয়ান আর্মি। সেখানে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে অনেকে।’
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গাজী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান কবীরের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ত্রিপোলী থেকে জনৈক বাংলাদেশী নিজের পরিচয় গোপন রেখে নয়া দিগন্তকে লিবিয়ার বৈধ শ্রমবাজার খোলা এবং ঢাকা থেকে দুবাই, মিসর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজি-ইউরোপে পালানোর বিষয়ে বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে বৈধভাবে লিবিয়াতে বাংলাদেশী কর্মী আসা বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে শ’দুয়েক বাংলাদেশী আগের এমওইউ চুক্তি অনুযায়ী এসেছিলো। এরপর থেকে আর কোনো লোক আসেনি। গত ঈদের আগে আমাদের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী লিবিয়ায় আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনিও আসেননি। এরইমধ্যে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি আজুর বেঙ্গল লিমিটেডসহ তিনটি রিক্রুটিং এজেন্সি নতুন করে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই সাথে ডাক্তার নার্স আসার বিষয়েও ঢাকা থেকে তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তাদের আসার বিষয়ে আমাদের এখানে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে। এখন কবে থেকে বৈধভাবে লোক আসা শুরু হচ্ছে তা আমাদের দূতাবাস প্রধান আর আমাদের মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন। তবে বৈধভাবে এই শ্রমবাজারটি উন্মুক্তের আগেই এখনো প্রতিদিন ঢাকা থেকে ভিজিট ভিসা নিয়ে অনেক লোক এই দেশে ঢুকছে। রুট হিসাবে ব্যবহার করছে ঢাকা থেকে দুবাই, মিসর। এরপর সেখান থেকে ফ্লাইটে লিবিয়ার বেনগাজি আসছে। এরপর সময়-সুযোগ মতো তাদের ইউরোপে পাঠাতে মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, চক্রটি বৈধভাবে শ্রমবাজার খোলা শুরু হচ্ছে জানতে পেরে এখন তারা কম টাকার লোভ দেখিয়ে (২ লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকা) লিবিয়াতে লোক আনছে। তারা লিবিয়াগামীদের বোঝাচ্ছে, বৈধভাবে যেতে ৩-৬ মাস সময় লাগবে। আর অবৈধভাবে গেলে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লিবিয়াতে চলে আসা যাবে। মানবপাচারকারীরা এভাবে লিবিয়ায় আসা লোকগুলো এবং আত্মীয়স্বজনদের টোপ দিলে সেটি তারা গিলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার পর নিরাপত্তার বিষয়টি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশটির সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পুরো অনুকূলে আসেনি। তবে বেনগাজি ছাড়া পুরো লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, মানবপাচারকারী এবং সাগরপথে তেলপাচারকারীদের বিরুদ্ধে লিবিয়ান আর্মির স্পেশাল ফোর্স আবদোরোপ কারা (রাদা) ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে। গত শুক্রবার ত্রিপোলী থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরের জাওয়াইয়া (সাগরপাড়) এলাকায় ড্রোন দিয়ে বোম্বিং করেছে। এ খবরটি এখানকার সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তবে এ ঘটনায় কি পরিমাণ লোক হতাহত হয়েছে তা সংবাদে প্রকাশ করেনি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ওই বাংলাদেশী নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশী শরীফ নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে পুরো কিডন্যাপিং এবং মানবপাচার চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা দূতাবাসও জানে। এখানে কোনো কিডন্যাপিংয়ের ঘটনা ঘটলেই প্রথমেই শরীফের শরণাপন্ন হতে হয়। তার বাহিনী ঢাকার মাদারীপুর, কুমিল্লা থেকে শুরু করে, ঢাকা, দুবাই, মিসর, বেনগাজি, জাওয়াইয়্যা হয়ে ইতালি পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। তার বাড়ি হয় মাদারীপুর নতুবা কুমিল্লা।

তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে, তার দলের অনেক সদস্য জেলে রয়েছে, অনেকে আবার সাগরপথে ইউরোপে চলে গেছে। এই মানবপাচারকারী চক্রগুলোর কারণে এ দেশে অপরাধ বাড়ছে। এখন লিবিয়ান স্পেশাল ফোর্স তাদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে ড্রোন দিয়ে দুর্বৃত্তদের উপর বোমা হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে। ভিজিট ভিসায় অবৈধপথে দুবাই হয়ে লিবিয়া এবং সাগরপথে ইউরোপ যাওয়া বন্ধের বিষয়ে পরামর্শ কি- জানতে চাইলে ওই অভিবাসন ব্যবসায়ী এবং শ্রম বিশ্লেষক বলেন, আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বর্তমানে বৈধভাবে লিবিয়ার শ্রমবাজার খুলতে হলে অবশ্যই অবৈধপথে ঢাকা থেকে দুবাই আসা ভিজিট ভিসাধারী যাত্রীদের উপর ব্যাপক নজরদারি বাড়াতে হবে। তাদের ব্যাংক ব্যালান্স ও ডলারসহ বিস্তারিত পরিচয় দেখতে হবে। তাহলেই এটি কমে আসার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমার এক আত্মীয় নোয়াখালীর সাইফুল বৈধপথে লিবিয়ায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শুনি গত শুক্রবার সে ভিজিট ভিসায় দুবাই চলে এসেছে। সেখান থেকে তাকে দালাল চক্র এখন মিসরে এনেছে। তার সাথে আরো অন্তত ৪০ জনের মতো লোক অবস্থান করছে। তাদের সবাইকে সুযোগ বুঝে লিবিয়ার বেনগাজিতে পাঠানো হবে। এসব অবৈধ লোক প্রবেশের ক্ষেত্রে বেনগাজির প্রশাসন কন্ট্রোল করছে বেনগাজির জেনারেল হাফতার এর ছেলে সাদ্দাম। তাকে প্রতি লোকের জন্য কমিশন দিতে হয়। যত লোক ঢুকবে তত লোকের বিপরীতে তাকে কমিশন দিতে হবে- এটা লিবিয়া সরকার নির্মূলের চেষ্টা করছে; কিন্তু পারছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement