২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্তমান সরকারই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধক : ড. মোশাররফ

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : নয়া দিগন্ত -


বর্তমান সরকারই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধক বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
গতকাল শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত পরিবর্তিত ভিসা নীতির প্রসঙ্গ টেনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
ড. মোশাররফ বলেন, আমেরিকা ঘোষণা দিয়েছে যে আগামীতে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বাধা দেবে তাদের তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে, ভিসা দেয়া হবে না। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, এই বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে অথবা জনগণের ভোটকে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনকে যারা বাধা দিয়েছে, দিচ্ছে তারা হচ্ছে বর্তমান সরকার। আজকে আমেরিকা যেভাবে বলেছে যে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের ভিসা দেবে না অর্থাৎ তারাও ওদেরকে (সরকার) প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ‘আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক’ অভিহিত করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই লজ্জা কাদের জন্য? এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জন্য এই লজ্জা বহন করে এনেছে। তিনি বলেন, আমরা (বিএনপি) ঘোষণা করেছি, শেখ হাসিনার অধীনে অতীতে নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় নাই, ভবিষ্যতেও হবে না। বিএনপি এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল এবং আর আমাদের সাথে আন্দোলনে যারা আছে শেখ হাসিনার অধীনে তারা কেউ নির্বাচনে যাব না। আন্তর্জাতিকভাবে যে দাবি উঠেছে, নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। আমরা যদি নির্বাচনে না যাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। অতএব আজ এই সরকার যত কিছুই বলুক না কেন এ দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়।

নয়া পল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে গায়েবি মামলায় গ্রেফতারসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে মহানগর ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসে।
‘আর নীরবতা নয়’ : খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা ১০ দফার দাবিতে বলেছি, এই সরকারের পদত্যাগ, এই অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে।
এ ছাড়া আগামী দিনে কোনো সমাধান এ দেশে হবে না। তাই আমাদের আর নীরবতার সুযোগ নেই। এই সরকারকে হটাতে হবে। এই ধরনের স্বৈরাচারী সরকার নিজের থেকে আপসে সরে দাঁড়াবে না। তাদের সরাতে হবে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এই সরকারকে হটাতে হলে গণঅভ্যুত্থানের বিকল্প নেই। ইনশাআল্লাহ আমরা আশাবাদী জনগণ প্রস্তুত। অচিরেই গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করতে হবে।”

‘প্রশাসনের প্রতি আহ্বান’ : দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমি বলতে চাই, যারা প্রশাসনে আছেন, যারা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, এই অবৈধ সরকার গায়ের জোরের সরকার তারা জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়, তাদের অন্যায় আবদার, অন্যায় নির্দেশ আপনাদের মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি বলেন, অতীতে যারা এই সরকারের অবৈধ, অনৈতিক, বেআইনি হুকুম মেনেছে তাদের আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, র‌্যাবকে দিয়েছে। আমরা চাই না আর কোনো নিষেধাজ্ঞা, আমরা এই বদনাম কুড়াতে চাই না। আপনারা যারা প্রশাসনে আছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যারা আছেন আপনারা জনগণের সেবক, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আমি আপনাদের আহ্বান জানাই, আমাদের বিভিন্ন দলের কর্মসূচি আসছে, সুষ্ঠুভাবেই সব চলছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হচ্ছে। সরকার বললেই আপনারা মিথ্যা মামলা দেবেন, গ্রেফতার করবেন, এটা করবেন না।

তিনি বলেন, এই কাজগুলো করছে এখনো শেখ হাসিনা সরকারের যারা অতি উৎসাহী সমর্থক তারা তাদের জন্য আমাদের প্রশাসন, পুলিশ বাহিনীকে আমরা ঢালাওভাবে দায়ী করতে চাই না। তিনি বলেন, অতি উৎসাহী হয়ে যারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছেন আমরা তাদের কাছে আহ্বান করি, আপনারা তাদের পক্ষ ত্যাগ করে জনগণের পক্ষে আসুন। আপনাদের কেউ কিছু বলবে না।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সালাহ উদ্দিন আহমেদে, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সুলতান সাল্উাদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নোয়াখালীতে আমীর খসরু
নোয়াখালী অফিস জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ আজ একনায়কতন্ত্রের দেশে পরিণত হয়েছে। তারেক রহমানের ডাকে এই অবৈধ ভোট চোর ফ্যাসিস্ট সরকারকে রাজপথে মোকাবেলা করতে হবে। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর জজকোর্ট সড়কে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, মো: শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতা মাহাবুববুর রহমান শামিম, জালাল আহামেদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট এ বি এম জাকারিয়া, মাহাবুব আলমগীর আলো, সলিম উল্লা বাহার হিরন, আবু নাছের, শাহা জাফর উল্লাহ রাসেল, ভিপি জসিম, যুবদলের জেলা সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন, সেক্রেটারি নুরুল আমিন খান,সাবের আহমেদ প্রমুখ।

কিশোরগঞ্জে নজরুল ইসলাম খান
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় অসম্মানজনক বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমরা কি দুর্নীতি-অনাচারগ্রস্ত নাইজেরিয়ার সমান? মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন এ দেশে এর আগে কত সরকার গেছে। কখনো তো এ রকমের আইন আসেনি। কেন এলো এটা? শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
শহরের রথখোলা ময়দানের এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শরীফুল আলম। এতে অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি লায়লা বেগম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, রুহুল হুসাইন, মো: জালাল উদ্দিন, শরীফুল ইসলাম ও রুহুল আমিন আকিল, খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, হাজী ইসরাইল মিয়া, নাজমুল আলম, আমিনুল ইসলাম আশফাক, ভিপি সাইফুল ইসলাম সুমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ভিপি বাহার মিয়া, যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো: দিদার মিয়া, ছাত্রদলের সভাপতি মো: মারুফ মিয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।

গাজীপুরে সেলিমা রহমান
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, জনগণ শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন দেখতে চায় না। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ভুয়া সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই সরকার মানুষের বুকে পা রেখে রক্তের ওপর দিয়ে দেশ চালাচ্ছে। শনিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় নেতা বেনজির আহাম্মেদ টিটু, হুমায়ূন কবির খান, অধ্যাপক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মেয়র মজিবুর রহমান, ডা: মাজহারুল আলম, ওমর ফারুক শাফিন, গাজীপুর জেলা বিএনপি নেতা শাহজাহান ফকির, ভিপি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, মহানগর বিএনপি নেতা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, মেহেদী হাসান এলিস, আব্দুস সালাম, জিএস সুরুজ আহাম্মেদ, মহানগর যুবদল নেতা সাজেদুল ইসলাম, সে¦চ্চাসেবক দল নেতা হাসিবুর রহমান খান মুন্না, শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন শিশির, ওলামা দল নেতা হাফেজ ইব্রাহিম প্রমুখ। এর আগে একই কর্মসূচি উপলক্ষে ৯০ দশকের স্থানীয় ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে একটি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement