২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোখার মূল কেন্দ্রটি যাবে মিয়ানমার দিয়ে

গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার
ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রটি যাবে মিয়ানমারের উপর দিয়ে - সূত্র জেটিডব্লিউসি -

ঘূর্ণিঝড় মোখার সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার (১০০ নটিকেল মাইল)। আগামী রোববার উপকূলে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এই ঝড়ের। চলতি বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় এটা বেশি শক্তিশালী হতে যাচ্ছে। কারণ গত বছরের নভেম্বরের পর থেকে বঙ্গোপসাগরে আর কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে পানিতে জমে থাকা শক্তি ঘূর্ণিঝড় মোখার মাধ্যমে মুক্ত (রিলিজ) হতে যাচ্ছে। এর আগে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এ ঝড়টি উপকূলে উঠে এলে যে গতিপথ নির্দেশ করা হয়েছিল তা থেকে একটু এদিক-সেদিক হতে পারে। এর আগে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসার কথা আবহাওয়াবিদরা বললেও, গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (জিটিডব্লিউসি) থেকে রিলিজ করা নতুন গতিপথে মোখার (উচ্চারণটি মোচা নয়) মূল কেন্দ্রটি মিয়ানমারের ওপর দিয়ে যাবে বলে নির্দেশ করা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে উঠে আসার সময় গতি অনেকটা কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, মোখা ইয়েমেনের আবহাওয়া অফিসের দেয়া নাম। এর অর্থ উৎকৃষ্ট মানের কফি। এ ছাড়া ইয়েমেনের একটি প্রাচীন বন্দরের নামও মোখা।

এ দিকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোখা অবস্থান করলেও সারা দেশে বিরাজ করছে প্রচণ্ড তাপদাহ। দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। তবে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রাঙ্গামাটিতে ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ শুক্রবারও তাপমাত্রা একই রকম থাকবে। এটা চলবে ঘূর্ণিঝড়টি উঠে না আসা পর্যন্ত।

ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল থেকে অনেকটা দূরে অবস্থান করছে। সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। যার ফলে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে উঠতে উঠতে আরো কমপক্ষে তিন দিন সময় লাগতে পারে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ কানাডা থেকে বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আগামী রোববার (১৪ মে) পানি থেকে মাটি স্পর্শ করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থা করছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। উল্লেখ্য, গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস সন্ধ্যা ৬টার ৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিটিই বহাল রাখে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তি সঞ্চয় করে আজ শুক্রবার সকালের দিকে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং এর কিছু পরে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে বলে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় মোখার কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে এবং গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় মোখার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। প্রবল গতিবেগের কারণে এই দ্বীপের ওপর দিয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়তে পারে। অস্থায়ী স্থাপনা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মালামাল জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই উচিত অস্থায়ী স্থাপনার মালামাল যতদূর সম্ভব সরিয়ে নেয়া। মোস্তফা কামাল আরো জানান, সেন্টমার্টিন ছাড়াও কুতুবদিয়া, মহেলখালী দ্বীপও ১০ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অন্য দিকে টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের এলাকার ওপর দিয়েও ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগের ঝড় আঘাত হানতে পারে। একই সাথে কক্সবাজার এলাকায় ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চল অস্থায়ীভাবে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement