২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মাছ-গোশতেও স্বস্তি মিলছে না

আবার বেড়েছে ব্রয়লারের দাম

-


নিম্ন আয়ের মানুষের গরুর গোশত কেনার সক্ষমতা নাগালের বাইরে চলে গেলেও ব্রয়লার মুরগির দাম কম হওয়ায় মুরগি কিনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত। কিন্তু সেই মুরগির বাজারও রোজা শুরুর মাসখানেক আগে থেকে অস্থির হয়ে পড়ে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও মাছ-গোশতের বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে যেন স্বস্তি মিলছে না। রোজার দুই দিন আগে ব্রয়লার মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়, যা ছিল রেকর্ড। গত সপ্তাহে কয়েক দফায় কমে দুই শতকে আসলেও গত দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছ ও ডিমের দামও বেড়েছে। তবে লেবু, শসা ও বেগুনের দাম কিছুটা কমেছে। খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে আবার দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায়ও তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।


বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রোজার দুই দিন আগে রেকর্ড দাম বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২৭০ টাকায়, আর সোনালি মুরগির কেজি হয় ৩৮০ টাকা। গত ২৩ মার্চ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সাথে পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠক এবং এফবিসিসিআই সরকারকে মুরগি আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়ার পরামর্শ দিলে বৃহৎ খামারিরা দাম কমিয়ে মুরগি বিক্রি শুরু করেন। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় দাঁড়ায়। একই সাথে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে ৩৪০ টাকায় নেমে আসে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরানবাজার, সেগুনবাগিচা ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি দেশী মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০-৫০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৭০-৫০০ টাকা কেজি দরে। দু-তিন দিন আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের মতোই গরুর গোশত বাড়তি দামে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশত মানভেদে এক হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সকালে সেগুনবাগিচায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে গরুর গোশত ৬৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও একই সময় সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে ৮০০ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রি করা হয়। এ কাঁচাবাজারের পাশেই সুপারশপ স্বপ্ন। এখানে আবার গরুর গোশত বিক্রি হয় ৭৫০ টাকা কেজিতে।


কাওরানবাজারের ব্রয়লার হাউজের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, এক সপ্তাহ মুরগির দাম কমার পর দুই দিন ধরে আবার বাড়তে শুরু করেছে। পাইকারিতে বাড়ার কারণে খুচরায় কেজিতে ব্রয়লার মুরগি ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। রামপুরা কাঁচাবাজারের জিহাদ ব্রয়লার হাউজের ব্যবসায়ী মো: বায়েজিদ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মুরগির বাজার কিছুটা ওঠানামা করবেই। তবে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে থাকাটা ভালো। আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে ২২০ টাকার বেশি না উঠতে পারে।


সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে মাছ বিক্রি হচ্ছে। বড় রুই মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, মাঝারি রুই ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বড় আকারের শিং মাছ প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় মাছ প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, কই মাছ প্রতি কেজি ২৬০ টাকা, টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, মাঝারি সাইজের চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ দিকে অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা, দেশী রসুন প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশী আদা প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ৯০ টাকা, মসুর ডাল (ছোট) প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, বড় মসুর ডাল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পোলাওয়ের চাল (খোলা) প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা আর প্যাকেটজাত প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।


সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে লেবু, বেগুন, শসাসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। দাম কমে বড় আকারের লেবুর হালি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রথম রোজার দিন বড় আকারের লেবুর হালি ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে কমেছে শসা ও বেগুনের দাম। দেশী শসা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বেশ কিছু সবজি আগের বাড়তি দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সজনে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement