১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে জাতি লজ্জিত

কে এম ওবায়দুর রহমান স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল
কে এম ওবায়দুর রহমানের স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম : নয়া দিগন্ত -


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নেই। এটা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম কে এম ওবায়দুর রহমানের ১৬ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।


মির্জা ফখরুল বলেন, ৭১ থেকে আওয়ামী লীগ একক ক্ষমতা, একক নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সচেতনভাবে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গোটা দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আওয়ামী লীগ সবাইকে ছোট করে দেখাতে পছন্দ করে। আওয়ামী লীগ কাউকে সম্মান দিতে জানে না। তাজউদ্দিন আহমেদ, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাম মুখেও নেয় না।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নির্মাণে যেসব মানুষ অবদান রাখছে তাদের স্মরণ করা হয় না। তাদের নামগুলো পরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের হীনম্মন্যতার কারণে শুধু একজনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।


বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়ুর রহমানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, আজ আমরা যেসব কথা বলছি, বাংলাদেশ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়নীতি, অর্থনীতির বৈষম্য দূর করে যথাসাধ্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা- এসব ছিল কে এম ওবায়দুর রহমানের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। যে দেশে গণতন্ত্র নাই সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। দেশের মানবাধিকার নাই সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যে দেশে জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয় না, সেই দেশে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে না।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণকে বাদ দিয়ে অব্যাহতভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখার রাজনীতি সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তারা। জনগণকে বাইরে রেখে সংবিধানের কথা বলা আওয়ামী লীগের মুখে শোভা পায় না। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ভোগ করছে তারা। খসরু বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে জনগণ বলে কোনো শব্দ নেই, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে। আর এ জন্য সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করেছে। কোনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই, রাস্তা দখল করে ফয়সালা হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ জনগণ ছাড়বে না।


সংসদীয় গণতন্ত্র নয়, সংসদীয় একনায়কতন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা পড়ে থাকবে, আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না। ব্যাপক গণ-অভ্যুত্থান, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় হবে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


অশান্তিতে ভাসছে দেশ; সমাধান খালেদা জিয়ার মুক্তি : দুদু
দেশ এখন অশান্তিতে ভাসছে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আপনি বাজারে যাবেন, সেখানে শান্তি নাই। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাবেন, সেখানেও আপনাকে চাঁদা দিতে হবে। রাস্তায় যাবেন, বাসে উঠতে পারবেন না। সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছেন না, সবকিছুর দাম ভয়াবহ। এগুলো থেকে মুক্ত হতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের আয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুদু বলেন, দেশে ভয়াবহ দলীয়করণ হয়েছে। পুলিশ দলীয়করণ হয়েছে। প্রশাসন দলীয়করণ হয়েছে। প্রতিটি পেশাজীবী সংগঠন দখল হয়ে গেছে।

সুপ্রিম কোর্ট দখল হয়ে গেল, জজকোর্ট আগেই দখল হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ আর নেই। ১৯৭১ সালে নির্বাচনে পরিবর্তন হয় নাই, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না।
বিএনপি নির্বাচনে গিয়ে কী করবে? হাইকোর্টের নির্বাচন দেখলেন না? এটা ভদ্রলোকদের জায়গা। সুপ্রিম কোর্টে যা ঘটল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলেও এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে নাই। নির্বাচন এখন দেশের মসজিদ কমিটিতেও হয় না, আগেই দখল হয়ে যায়। সরকারের দখলবাজি থেকে দেশকে মুক্ত করতে আমরা দশ দফা দিয়েছি। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement